গণমাধ্যমে স্কাউটিং
প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:৩৮ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:৪২
গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১১ তম জাতীয় রোভার স্কাউট মুট। ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। সবগুলো গণমাধ্যমে এই খবরটি বেশ গুরুত্বের সাথে প্রচারিত বা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মনটা ব্যথিত হলো এটা ভেবেই যে, এই রোভার মুট উপলক্ষে এতগুলো তরুণ রোভার সমাবেত হয়েছে, তাদের কথা প্রায় উপেক্ষিতই থেকে গেলো। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর দিকেই ঘুরে ফিরে ক্যামেরা সক্রিয়, সংবাদপত্রগুলোতেও প্রধানমন্ত্রীই হাইলাইটেড। অথচ এই আয়োজন রোভার স্কাউটদের নিয়ে, তারা কোথায়? তাদের খবরগুলো কোথায়? অথচ শুধু এই একটি রোভার মুটের আয়োজন নিয়েই চ্যানেলগুলো তরুণদের উজ্জীবীত করতে পারে, সংবাদপত্রগুলো বিশেষ খবর প্রকাশ করতে পারে।
স্কাউট বিশ্বব্যাপী একটি যুব আন্দোলন। বর্তমানে গঠনমূলক কাজে তরুণদের অংশগ্রহণের সুযোগ খুবই সীমিত। তাই তরুণদের মধ্যে হতাশা, মাদকাসক্তি, বিভিন্ন ধরণের অপরাধ করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার একটা ভয়াবহ আশংকাও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু স্কাউটিং-এ মাধ্যমে তরুণরা একাধারে এডভ্যাঞ্চারমূলক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সেবামূলক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিকভাবে নানা গুণের বিকাশ ঘটাতে পারে। গণমাধ্যমগুলোতে গতানুগতিক ধাঁচের খবর/অনুষ্ঠান/ছবি/ভিডিও প্রকাশের পরিবর্তে স্কাউটিং নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ফিচার অনুষ্ঠান খুব সহজেই প্রচার/প্রকাশ করা যায়। এই যেমন, এবারের জাতীয় পর্যায়ে রোভার মুট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এখানেই যে কত শত খবর, অনুষ্ঠান আর ফিচার লুকিয়ে আছে গণমাধ্যমগুলো তার খবরও রাখে না। আর তাই দর্শক/পাঠক হিসেবে আমাদেরকে গতানুগতিক খবর দেখতে/পড়তে হয়। স্কাউটিং সম্পর্কেও কোন ধারণা তৈরি হয় না।
স্কাউটের জনক লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল, তাঁর দর্শন, রোভারদের তাঁবু বাস, তাঁবু বাসের অভিজ্ঞতা, স্কাউট হিসেবে দীক্ষালাভের অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন ধরনের এডভ্যাঞ্চারমূলক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, প্রাথমিক চিকিৎসার কলাকৌশল, শুধুমাত্র বাঁশ ও দড়ির মাধ্যমে অসংখ্য রকমের গ্যাজেট তৈরি, স্কাউট ওউন, হাইকিং, দক্ষতা অর্জন, ব্যাজ প্রাপ্তি, ইয়েল ধবনি, ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ফায়ারের মাধ্যমে সকল দুঃখ-কষ্ট-ক্লান্তি পুড়িয়ে ফেলে আবার উজ্জীবীত হওয়া… এই মুটের কোণায় কোণায় রয়েছে কত যে এডভ্যাঞ্চার আর আনন্দের গল্প তা হয়ত আমাদের অজানাই থেকে যাবে। অথচ এগুলো নিয়ে যদি অনুষ্ঠান/ফিচার তৈরি হতো, তবে আরো অনেক তরুণ এই স্কাউট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হতে উৎসাহিত হতো। অসাম্প্রদায়িক ও সুস্থ মানসিকতার চর্চা হত তরুণদের মধ্যে।
লেখক: শিক্ষক ও লেখক