এটাই শেষ মাঘ মাস না
প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:০০
রামপালে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র করলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা সকলেই জানেন। এর গুরত্ব অস্বীকার করে যে সকল চরিত্র এদের মধ্যে বড় অংশটি হচ্ছে দলকানারা, যাদেরকে অন্যভাবে দলদাস বা চামচা বা মোসাহেব এইরকম নানান নামে ডাকতে পারেন। একটি অংশ আছে যারা পরিবেশ ইস্যুটির গুরুত্ব অনুধাবন করেন না এবং এটিকে কেবল একটি কথার কথা ধরনের এনজিও ইস্যু মনে করেন। আরেকদল আছেন যারা আন্দোলনকারীদের বা আন্দোলনের নেতাদেরকে পছন্দ করেন না বলেই কেবল বিরোধিতা করেন।
এছাড়া দেশের ভিতরের এবং দেশের বাইরের সকল সচেতন মানুষই জানেন, রামপালের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবনের জন্যে বিপদজনক। এমনকি সরকার নিজেও কখনো অস্বীকার করে না যে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের জন্যে বিপদজনক। সরকারের পয়সা খাওয়া বিশেষজ্ঞরা যে কথাটি বলে সেটি হচ্ছে যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপদের সম্ভাবনা আছে বটে, তবে এইখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে, এটি একটি বাজে কথা।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গোঁ ধরেছে এখানে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র করবেই। সুন্দরবন উচ্ছন্নে যাক, তাতে এনাদের কিছুই আসে যায় না।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে এই নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবাদীদের হাতে নাকাল হয়েছেন। এটা আমাদের জন্যে আনন্দদায়ক কোন ব্যাপার না। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দুনিয়ার পরিবেশবাদীরা দুয়ো দেবে এটা আমাদের নিজেদের জন্যেও শরমের কথা। আমরা চাই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় ধরিত্রী রক্ষায় চ্যাম্পিয়ন হবেন, আর তিনি কিনা উল্টা ধরিত্রী বিরোধী ভিলেন সেজে বসে আছেন। আর সুইজারল্যান্ড থেকে নাকাল হয়ে ফিরে তিনি বলেন কিনা এইসবই নাকি ডঃ ইউনূসের দোষ। ডঃ ইউনূসই নাকি টাকা দিয়ে এইসব প্রশ্ন তুলেছেন।
দাভোসে নাকাল হয়ে এসে তিনি কি করলেন? গায়ের ঝাল তুললেন আমাদের দেশের সেরা ছেলেমেয়েদের উপর। শাহবাগ এলাকায় পুলিশ লেলিয়ে দিলেন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচী করতে আসা ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট আর জাতীয় কমিটির কর্মীদের উপর। টিয়ার গ্যাস মেরে ওদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে চাইলো পুলিশ, তারপর নির্বিচারে সেখানে গুলি চালালো। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাসহ কয়েকজনকে সেখানে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
সকালেই ওরা টার্গেট করে রাবার বুলেট ছুড়েছে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লাকি আক্তারের উপর। তোদের এইসব তুচ্ছ রাবার বুলেট কি লাকিকে দমাতে পারবে? আইয়ুবের গুলিও তো ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদেরকে দমাতে পারেনি- লাকি আক্তার আমাদের সেই উত্তরাধিকার ধারণ করে। আহত লাকি আক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার ফেরত এসেছে মিছিলে, লড়াইয়ে।
আজকের হরতালের কর্মসূচীতে এই যে পুলিশি এট্রোসিটি হলো, এটা অন্যায় হয়েছে, খুবই অন্যায়। তিনি যদি স্মৃতিভ্রষ্ট না হয়ে গিয়ে থাকেন তাহলে শেখ হাসিনার জানার কথা, এইসব করে কোনদিনই ন্যায্য আন্দোলন থামানো যায় না। হরতাল একটি গণতান্ত্রিক কর্মসূচী। আমরা মানুষকে হরতালের আহবান জানিয়েছি। কাউকে জোর করা হয়নি, কোন গাড়ি ভাঙা হয়নি, কোন বোমা ছোড়া হয়নি। এমনকি একটি গাড়িকে বা বাসকে বা ট্রাককে জোর করে থামানোও হয়নি। এই কর্মসূচীতে কি এমন অন্যায় ছিল যে পুলিশি হামলা করতে হলো?
এইগুলি অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী আচরণ। এইগুলি হচ্ছে গুণ্ডামি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে গুণ্ডামি। এইসব গুণ্ডামির মূল্য আপনাদেরকে দিতে হবে। মনে রাখবেন এই মাঘ মাসটাই পৃথিবীর শেষ মাঘ মাস না।
লেখক: আইনজীবী