এভাবে আর কতো?
প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ০১:০১
আমার প্রতিবেশির দুই বাচ্চা প্রায়শই আমার বাসায় আসে। ছেলে বাচ্চাটার বয়স আট এবং মেয়ে বাচ্চাটার বয়স তিন। দুই বাচ্চার মধ্যে মেয়ে বাচ্চাটার সাথে আমার ভাব বেশি।
দুই বাচ্চাকেই তাদের বাবা-মা খুব শাসন করে কিন্তু মেয়ে বাচ্চাটার সাথে খানিক ইনজাস্টিজ করে ওদের বাবা-মা। যে কারণে তিন বছরের শিশুমন কিছু না বুঝেই অকারণে জিদ করে। সেদিন দেখলাম ছেলে বাচ্চাটা হেডফোন নিয়ে তার মায়ের ফোনে গান শুনবে ঠিক করলো তখন মেয়ে বাচ্চাটাও ফোনে গান শোনার জন্য ভীষণ জিদ করতে শুরু করলো। তখন তাদের মা ছেলেটাকে কি একটা বললো এবং ছেলেটা তার বোনকে ফোনটা দিল কিন্তু ঠিক করে দিল কি গান শুনবে। কিন্তু মেয়েটি অন্যকিছু শোনার জন্য আবারো জিদ করতে শুরু করলো।
তখন ছেলে বাচ্চাটাকে আমি বললাম, ও যা শুনতে চায় তাই দাও না কেন? ছেলেটি উত্তর দিল, ও তো মেয়ে। এটাও বলল ও মেয়ে তাই ওর রং গোলাপি কিন্তু ও কথা শোনে না নীল পছন্দ করে। ওকে বলি পুতুল বা হাঁড়ি-পাতিল খেলতে কিন্তু ও তাতে রাজি নয় ও আমার মত গাড়ি খেলতে চায়। আচ্ছা তুমিই বল মেয়েদের এমন করা ঠিক? মেয়েদের যাই বলা হয় তাই শোনা উচিত না? মেয়েরা তো কিছু পারেও না কিছু বোঝেও না তাহলে এত কথা বলে কেন মেয়েরা?
আমি অবাক হয়ে গেলাম মাত্র আট বছরের ছেলের মুখে এমন কথা শুনে! ওদের মা আমার সামনেই ছিল, আমি তাকে বললাম এই ছেলে কি বলে আন্টি?
তিনি বললেন, এদের পুরো পরিবারই এমন। ওদের দাদীও এমন সব কথা বলে, আমি এসব কানে নেই না।
তারপর আমি এই ঘটনাটা চিন্তা করতে করতে, খুব কমন একটা বিষয় আমার মনে এল, তা হল পুরুষতান্ত্রিকতা। একটা আট বছরের বাচ্চার মধ্যে কিভাবে গেঁথে গেছে সে না বোঝার আগেই। মাত্র আট বছরের একটা ছেলে তার তিন বছরের বোনকে ঠিক করে দিচ্ছে রংটা পর্যন্ত।
এটা ভাবা যায়!
পরিবারের আচরণবিধি এবং শিক্ষার ফলেই যুগযুগ ধরে ছেলেরা পরিবারের মোড়ল। ফলত ছেলেরা সারাজীবন মেয়েদের ছোট করবে। তার আচরণেই প্রকাশ পাবে মেয়েদের বুদ্ধি কম।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই আমার আবারো মনে হল, 'পরিবারই শিশুদের প্রথম বিদ্যাপীঠ কথাটা সত্য। না হলে এভাবে ছেলেদের রক্তে কখনো মিশে যেতো না যে মেয়েরা কিছুই পারে না।
আর 'মা-ই সন্তানের প্রথম শিক্ষক' কথাটা শুনতে ভাল লাগলেও আদতে যৌক্তিক নয় এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। কারণ মায়েরা লেখাপড়া, আচরণ, ব্যবহার শিখালেও তার কলকাঠি নাড়ে বাবারা। একজন মা কি কোনদিন মন থেকে শেখাতে পারে মেয়েরা কিছু পারে না?
হ্যাঁ, অনেক মায়েরাই আছেন যারা ছেলেদের বলেন তুমি বাঘ, গর্জন কর আর মেয়েদের শেখান তুমি বাঘ তো নয়ই তুমি বিড়ালও নয় যে তুমি মিউমিউ করবে। তুমি শুধুমাত্র মেয়ে কাজেই তুমি চুপ থাকবে, কারণ বোবার শত্রু নেই। কিন্তু এভাবে আর কতো দিন?
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী