সেক্স এন্ড দ্যা সিটি: হাসি মিটিমিটি!
প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:৩৭ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ০০:২৬
আগে দেখতাম অলস লোকজন খুব ভালো চিঠি লিখতে পারে। আমিও সেইসব অলসদের একজন হিসেবে আনন্দে বিগলিত হতাম। কিন্তু এখন দেখছি- অপদার্থ মেয়েরা খুব ভালো মন্ত্রী, এমপি, মেয়র হতে পারে! একজন তারানা হালিম, অন্যজন আইভি। একজন পর্ন সাইটে কারা প্রবেশ করেছে, যৌন উত্তেজক ছবি দেখেছে-এসব প্রকাশ করবেন। অন্যজন হাতে ‘আল্লাহ’ লেখা নৌকা নিয়ে ‘বাংলাদেশ একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র’-ব্যাপারটি প্রতিষ্ঠা করবেন! বাংলাদেশে নারী স্বাধীনতার বন্যা বয়ে যাবার কারণ হচ্ছেন তারা! এদেশে অভিনেত্রী হয়ে, টেলিকম্যুনিকেশানের বিন্দুটি না জেনেও মন্ত্রী হওয়া যায়! তেমনি হেফাজতে ইসলামের এজেন্ডা ধরে, মাথায় কাপড় দিয়ে, নৌকার ওপরে সৃষ্টিকর্তাকে বসিয়ে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করা যায়!
হুমায়ূন আহমেদের ‘আজ রবিবার’ নাটকে ছোটোবেলায় একটা ডায়ালগ শুনে খুব হেসেছিলাম। একজন বড় চাচাকে দুঃসংবাদ দিচ্ছে, সাথে বলছে ‘ও মাই গড!’। বড় চাচা বিরক্ত মুখে বলছে- গড কি তোমার একার? বলো ‘ওহ আওয়ার গড!’ দেশের যে চমৎকার অবস্থা চলছে- তাতে ‘আজ রবিবার’কেও ব্যান হয়ে যেতে হতো বোধহয়! শুনতে হতো- গড (স্পেসিফিকভাবে আল্লাহ) কেবল নৌকার! উনাকে নৌকার ওপর চড়ালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে না। কিন্তু হিন্দুদের দেবতাকে কাবাঘরের ওপর বসিয়ে, হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে, মুসলিম হবার জোরে তোমার কিচ্ছুটি হবে না! দেশে অনুভূতিপ্রবণ একটি ধর্মের অধর্মই চালু থাকবে।
সেক্স এডুকেশানের যাচ্ছেতাই অবস্থা করে রেখে পর্ন সাইট অফ করতে চাওয়াটা সম্ভবত খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। কয়েকদিন আগে আমার পাশের বেডের একটা মেয়েকে আমার দেখাতে হয়েছে- মেয়েরা অন্তঃসত্ত্বা হলে ভ্রূণটির জন্ম কোথায় হয়! সেই জায়গার নাম কি! তার লালে লাল গাল দেখেই দেশের যৌন শিক্ষার মৌন তাৎপর্য বোঝা হয়ে গেছে! তার একাডেমিক কোর্সে ‘ফিজিওলজি’ না থাকলে হয়তোবা এও দেখতে হতো যে- নিজে মা হয়েও টের পাচ্ছেনা, সন্তানটি প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন নিজের শরীরের ঠিক কোথায় ছিল!
যোনীতে তালা লাগিয়ে, নারীশিক্ষার একাডেমিক প্রসার ঘটিয়ে, সুশিক্ষার দফারফা করে দিয়ে বেশ ভেবে নেওয়া যাবে- নারীর প্রগতিতে, অধিকারে বাংলাদেশ অনন্য রোল মডেল! সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের বেগম রোকেয়ার ছবির জায়গায় নূরজাহান বেগমের ছবি দেখিয়ে নারী স্বাধীনতা নিয়ে দু’চারটে সভা সমিতি করে বেশ নারী অধিকার রক্ষা হবে। সাথে তসলিমা নাসরিনকে দুটো গালি, তিনটে বুলি শুনিয়ে নিজেকে উচ্চমার্গীয় বক্তব্যের বক্তা হিসেবে ডজনখানেক তালি দিয়ে বক্তব্য শেষ করতে হবে!
আর ছেলেদের কথা বলাই বাহুল্য, তাদের কাছে ‘সানি লিওন’, ‘মিয়া খলিফা’রা কত জনপ্রিয় সেটা তারাই বুঝবেন। ছেলেদের সাথে যেহেতু মিশেছি, বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছি, বিপদে সাহায্য করেছি- কাজেই তাদের মনের কথা খানিক আমি জেনেছি। সেক্স এডুকেশানের প্রথম পাঠ মানেই হচ্ছে নগ্ন হয়ে বিছানায় যাওয়া, মেয়েটিকে নিজের নীচে শুইয়ে ফেলা, ধর্ষণ শেষে বীরপুরুষ হওয়া এবং ভেবে নেওয়া- শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে!
এদেশের বেশীরভাগ ছেলের কাছে- সেক্স মানেই মেয়েদের স্তন, যোনী, ধর্ষণ ইচ্ছা নিয়ে মাস্টারবেশান। সেক্স মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং নামের নির্যাতনের ছদ্মবেশে বড় ভাইদের রাশিয়ান স্টাইল, ডগ স্টাইলের নিখুঁত অভিনয় করে নিজেদের অভিনয় প্রতিভা বিকশিত করা! সেক্স মানেই বিকৃত যৌনাচার দিয়ে যৌনশিক্ষার দফারফা করে ফেলা। মেয়েদের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে ‘ঢেকে রাখা দরকার’ জাতীয় মনোভাব পোষণ করা।
পর্ন সাইটে আমি অনেকদিন পর পর কৌতূহল হলে ঢুকে দেখি- সেক্স এডুকেশানের কি অবস্থা! সাদা সাদা মেয়ে, আহা-উহু শব্দ, ভোগের বস্তু হওয়া দেখে আমার করুণা হয় এদেশের মেয়েদের ও ছেলেদের প্রতি। গোপনে সাদারঙের আঠালো তরল ছড়ানো, কনডমের নাম না জানা আর ‘ফিজিওলজি’ পড়তে এসে ‘বাচ্চা হওয়ার মন্ত্র’ জানানো শিক্ষাব্যবস্থাকে আমি বাহবা দেই! আমি আরও বাহবা দেই মন্ত্রীসভা জুড়ে থাকা চমৎকার সব নারীদের যারা প্রয়োজনে মাথায় কাপড় দেন এবং অপ্রয়োজনে চমৎকার নীতিমালা প্রণয়ন করেন। যারা বাল্যবিবাহ আইন পাশের পরেও তা নিয়ে রা’টিও করেন না!
এদেশে বেগম রোকেয়া মরে নূরজাহান বেগম হয়ে যান, তসলিমা নাসরিন বেঁচে থেকেও কবরে চলে যান, কবর থেকে রোকেয়ার ভূত উঠে আসেন! আমি নিশ্চিত জানি, এই লেখা প্রকাশের পর কিছু পুরুষ আমাকে গালিতে ধর্ষণ করবেন, কিছু মেয়ে পুরুষের গালিতে তালি দেবেন, আর বাকিরা মাথাকুটে মরবেন। কারণ তারা সংখ্যালঘু, এই সমাজে, এই শহরে বেমানান। একবার এক দেশী বন্ধুর কাছে বিদেশী একটা সিরিজের সন্ধান পেয়েছিলাম। যেটার নাম ‘সেক্স এন্ড দ্যা সিটি’। সে জানিয়েছিল খুবই শিক্ষামূলক একটি সিরিজ, যেটা তাকে যৌনতার শিক্ষা দিচ্ছে!
নারী মন্ত্রীদের দুজনের কর্মকাণ্ড দেখেই হাসি পাচ্ছে। একজন সেক্যুলার দাবী করা দেশটির দাবীটি শেষ করে সৃষ্টিকর্তাকে নৌকায় তুলে দিলেন। অন্যজন পর্ন সাইটে ঢোকা কয়েক কোটি পুরুষকে হুমকি দিয়ে দিলেন- যাহারাই ঢুকিবা তাহারা বুঝিয়া শুনিয়া ঢুকিবা! তার প্রথম আমলে ফেসবুক যেমন ভিপিএন নামক এক বস্তু দিয়ে চালানো যেতো, ইউরোপ আমেরিকার ভার্চুয়াল প্রক্সি নেটওয়ার্ক দিয়ে ঢুকে নিষিদ্ধ মজা পাওয়া যেতো, সেটির কাল আবারো শুরু হচ্ছে!
যৌনতায় ভরা নিষিদ্ধ শহরে আপনাকে স্বাগতম!
একারণেই আমার বলতে ইচ্ছে করছে- সেক্স এন্ড দ্যা সিটি, হাসি মিটি মিটি!
লেখক: তরুণ লেখক ও সাহিত্যিক