জাগো নারী জাগো
প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:৩৫ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:৩৯
গত ২৫ শে নভেম্বর পালিত হয় নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ১৯৮১ সালে ল্যাটিন আমেরিকা মহাদেশের নারীদের সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে 'আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস' ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে দিবসটি স্বীকৃতি পায় এবং তখন থেকে বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়।
নারীপক্ষ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। তারা ১৯৯৮ সাল থেকে পুলিশ, স্বাস্থ্য ও বিচার বিভাগের সাথে যুক্ত হয়ে "নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০০৩' প্রয়োগের কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা গুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় 'নারীর উপর সহিংসতা নিরসনে আইন-আদালতের ভূমিকা'।
এর আগে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে নারীপক্ষের সালভিত্তিক প্রতিপাদ্য:
১৯৯৭ - এসিড আক্রমণ
১৯৯৮ - ধর্ষণ
১৯৯৯ - দলীয় রাজনীতি অঙ্গনে নারীর অবদান
২০০১ - নির্বাচন ২০০১: নারীর প্রতি সহিংসতা
২০০৩ - আত্বহত্যা করা প্রতিবাদ নয়, পরাজয়
২০০৪ - ধর্ষণউত্তর মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষা স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা
২০০৫ - নারীর প্রতি সহিংসতা: নারীর বিকাশের পথে অন্তরায়
২০০৬ - জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারীর প্রতি, বিশেষ করে সংখ্যালঘু নারীর উপর সহিংসতা প্রতিরোধ
২০০৭ - পরিবারে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সর্বস্তরে কার্যকর ব্যবস্থা চাই
২০০৮ - জাতীয় নির্বাচনে নারী, বিশেষত সংখ্যালঘু নারীর উপর সহিংসতা প্রতিরোধ
২০১০ - উত্যক্তকরণ নারীর সামাজিক বিকাশ ও উন্নয়নের অন্তরায়
২০১২ - নারীর উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ করন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
২০১৩ - নারীর প্রতি সহিংসতা আর না
২০১৪ - বাল্য বিয়ে রোধ কর, নারী নির্যাতন বন্ধ কর
২০১৫ - নারীর উপর যৌন নির্যাতন: প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ গড়ুন।
অর্থাৎ, মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, ঘরে নির্যাতনের কথা যেমন চার দেয়ালের মধ্যে চাপা রাখলে প্রতিরোধ করা অসম্ভব তেমনি বাইরের সহিংসতা প্রতিরোধেও চাই প্রতিবাদ, আইনের শাসনের সুষ্ঠু প্রয়োগ। আর একজন দুইজন নয়, প্রতিটি নারীর মধ্যেই সেই সাহস আর স্পৃহা থাকতে হবে। মনের জোড় মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায়। আর সেই জোড় দেখেই পিছিয়ে যাবে মানুষ নামক পশুসূলভ নির্যাতনকারীরা।
দুঃখজনক হলো নারী নির্যাতনের বিষয়গুলো আইনের আওতায় আনা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্যাতনের স্বীকার নারীকেই খারাপ প্রমাণের চেষ্টা চলতে থাকে। নারীর প্রতি সহিংসতা বা যেকোনো ধরণের নির্যাতন গুরুতর অপরাধ। আর এই অপরাধের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের জন্য সরকারকে মামলার সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ, চিকিৎসক, আইনজীবী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ঘরে, বাইরে, থানায়, হাসপাতালে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, আদালতে- সর্বত্র নারীকে নিজের সচেতনতা যেমন বাড়াতে হবে, প্রতিবাদমুখর হতে হবে সব সময় সব অন্যায়ের, তেমনি নারীকে দোষারোপ না করে পাশে দাড়ানোর মানসিকতার প্রবৃদ্ধি ঘটাতে হবে সর্বত্র।
লেখক: আইন শিক্ষার্থী