আড়ালে তার পুরুষতন্ত্র হাসে!
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৯:৪২
সম্প্রতি বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন একটি চিঠি লিখেছেন তার দুই নাতনিকে। সেখানে নারীদের গুণ গেয়েছেন, বলেছেন নারীদের সম্মান করতে চায় না সমাজ, পরিবার। নারীদের জন্য পৃথিবীটা বড়ই কঠিন। তাই তার দুই নাতনীকে পরামর্শ দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের পছন্দে চলতে শেখে, অন্যের ছায়ায় না চলে। পুরো চিঠি পড়ে আমার হাসি পেয়েছে। কারণ- এই অমিতাভই অল্প বয়সে চিত্রনায়িকা রেখার সঙ্গে প্রেম করেও নিজের পারিবারিক মর্যাদা বজায় রাখতে বিয়ে করেছিলেন জয়া ভাদুরি ওরফে জয়া বচ্চনকে। এই অমিতাভই মাঝবয়স পার করে কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে ছেলের বউ ঐশ্বরিয়া রায়কে বিয়ে দিয়েছিলেন গাছের সঙ্গে মঙ্গল দোষ কাটাবার জন্য। পাছে তার ছেলের অমঙ্গল ঘটান ঐশ্বরিয়া! এই অমিতাভই ধর্ষণ নিয়ে একটি জঘন্য কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন! সেই তিনিই যখন নারী স্বাধীনতার গান গাইছেন তখন সেটি আমার কাছে হাস্যকর লাগে।
সম্প্রতি দীপিকা পাড়ুকোনের ক্লিভেজ দেখা যাওয়ায় যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছিল তখন দীপিকার মন্তব্যটি ছিল আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেছিলেন- অন্তর্বাস দেখা যাওয়া কোনো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। কাজেই সেটি নিয়ে তিনি লজ্জিত নন। হালের স্টার কারিনা কাপুর মা হওয়ার সময়কার স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে মুটিয়ে যাওয়া শরীরে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে। সাহসী উচ্চারণে বলেছেন- মা হওয়া খুবই প্রাকৃতিক একটি বিষয়, এতে লুকোছাপার কিছু নেই। আর টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা তো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেই দিয়েছেন- আপনারা আমার স্বামীকে কেন কখনোই জিজ্ঞেস করেন না তিনি কবে বাবা হচ্ছেন? শুধু আমাকেই কেন শুনতে হয়- আমি কবে মা হচ্ছি?
যারা পর্দা কাঁপায় তাদের থেকে সমাজ নিয়ে কুসংস্কার নিয়ে মন্তব্য পেলে আমরা খুশি হই, আনন্দিত হই- তারা শুধু দর্শকদের আনন্দিতই করে না, সমাজ, নারী স্বাধীনতা নিয়ে খোঁজ রাখে। কিন্তু লোক দেখানো নারী স্বাধীনতার কথা বলে লাভ নেই।
অমিতাভ নাতনী আরাধ্যকে চিঠিতে এক চিলতে আবেগ মিশিয়ে বলতেই পারেন- তুমি অন্যের ছায়ায় থাকবে না, নিজের পছন্দে চলবে। লোকে তোমার বিয়ে করা চাইছে না তুমি বিয়ে করতে চাইছ সেটা ভেবে দেখবে। অথচ তিনি সহধর্মিণী জয়াকে বা পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়াকে কখনোই বলতে পারেন না- নামের সঙ্গে ‘বচ্চন’ পদবীটি ব্যবহার করবে না। কারণ তাতে তো পুরুষতন্ত্র যায়! কেন বলবেন? বললে তো নিজের দোষ, ধর্মের দোষ, কুসংস্কারের দোষ... সব দোষ একেবারে প্রকাশিত হয়ে পড়বে!
অমিতাভকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। স্বয়ং রবিঠাকুর বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করেও নিজের মেয়েদের ৯ থেকে ১৪ এর মাঝেই বিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ- মুখে বললেও মনের মানা বড় কঠিন ব্যাপার। নারীর জয়গান গাওয়ার পেছনে যতটা না নারীর জয়, তারচেয়ে নারীর জয়গান গেয়ে নিজেকে মহান করে তোলায় নিজের জয় অনেক অনেক বেশি। তাই এখন মেঘ দেখে ভয় লাগার বদলে, আলো দেখেও ভয় লাগে। কারণ আর কিছুই নয়, আড়ালে তার পুরুষতন্ত্র হাসে!
লেখক: তরুণ লেখক ও সাহিত্যিক