সন্তানদের শৈশব ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০১৯, ২০:৫২ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০১৯, ২১:০৬

বাচ্চাদের পড়াশোনা সংক্রান্ত কিছু ব্যাপার আমাকে ইদানীং খুবই ভাবায়। যেহেতু শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি প্রতিনিয়ত নানা ঘটনার ভিতর দিয়ে আমাদের যেতে হয়।

আমার ছেলেটা যেহেতু এবার জেএসসি দিবে, ওর অবস্থা দেখেই অনুধাবন করা যায় বাকিদের কি অবস্থা! যদিও অভিভাবক হিসেবে আমি একেবারেই হিমুভাই। তারপরও দেখতে পাচ্ছি ছেলেটার কোন অবসর বলে কিছুই নাই। অথচ সেই কলেজে পড়া পর্যন্ত সন্ধ্যাবেলাতে ডাকাডাকি করে আমাদের বাসায় ঢুকাতে হতো।

আমরা কি ভালো রেজাল্ট করিনি? ভালো রেজাল্ট করে কি আলুটা ছিলছি এখন? আমি যা করাই তার জন্য সিম্পল বি.কম পাশ করলেও চলতো(দয়া করে কেউ যেন ভাববেন না আমি কাউকে হেয় করছি। পরিস্থিতি বুঝাতে লিখেছি।) আমার এত্তগুলা সার্টিফিকেট আমার কাছে ইউজলেস মনে হয় ইদানীং। এবং আমি খুবই হতাশ।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা কেবলমাত্র শিক্ষক আর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের জানা হয়ে গেছে। এদেশে বড় পোস্ট, নেতাগিরি,ক্ষমতার ব্যবহার(পড়ুন অপব্যবহার) রংবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি যারা করে তাদের কত শতাংশ খুব ভালো রেজাল্ট এর অধিকারী?  বরং বছরের পর বছর দেখছি পকেটে মালপানি থাকলেই হয় হর্তাকর্তা।

আর বাচ্চাদের অভিভাবকদের কথা কি বলবো! (সবাই অবশ্যই না) কিছু কিছু অভিভাবকের এমন চাওয়া পাওয়া স্কুলের প্রতি যে সব কিছু শিক্ষকরাই করে দেবে। সিস্টেম থাকলে আবদার করতো, পরীক্ষাও যেন শিক্ষকরা দিয়ে দেয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা দিবে। স্কুলে এসে বাচ্চারা বাংলা-ইংরেজি সাহিত্য, অংক, সমাজনীতি, রাজনীতি, ভূগোল, ইতিহাস ইত্যাদি শিখবে এবং তা আগ্রহের সাথে। শিক্ষা ব্যবস্থা এতোই বৈষম্যমূলক ও বৈচিত্র্যময় হয়েছে যে বাচ্চাদের কাছে এখন পড়াশোনাটা বিভীষিকা হয়ে গেছে। প্রতিবছর বই, সিলেবাস ও নিয়ম পরিবর্তন!

এর উপর অভিভাবকদের নানাবিধ অভিযোগ! অন্যদের বাচ্চা ভালো করলে আমারটাও করতে হবে। হাতের লেখা খারাপ কেন? বাসায় খাওয়াদাওয়া করেনা কেন? বাসায় পড়তে বসেনা কেন? বাসায় কারো কথা শুনেনা কেন? মিথ্যা বলে কেন? নোটিশ দেখায় না কেন? শিক্ষকদের ফোন নং ব্লক করে রাখে। বাসায় নিউজ পেপার পড়েনা কেন? আদবকায়দা জানেনা কেন? বড়দের সম্মান করেনা কেন? এতো কেন'র উত্তর আমরা কোথায় পাই!?

আর সবাই কি ডাক্তার হয়!
সবাই কি ইঞ্জিনিয়ার হয়!
সবাই কি লেখক হয়!
সবাই কি সরকারি চাকুরির পেছনে ছুটে!
সবাই কি আঁকিয়ে হতে পারে!
সবাই কি বিজ্ঞানী হয়!
যদি উত্তর না হয়,
তবে কেন আমরা বাচ্চাদের ছোটবেলাটা নষ্ট করে দিচ্ছি এভাবে? আর সবকিছু স্কুলে শিখানো পড়ানো যায়না, এটা সম্ভব নয়। এটা কেন অনেক অভিভাবক বুঝতে চাননা!

কিশোর অপরাধ বেড়ে গেছে ভয়ানক ভাবে। অভিভাবক কি জানেন যে এর জন্য আপনারাই দায়ী? টাকা আছে বলেই চাওয়া মাত্রই বাচ্চাকে দামী ডিভাইস কিনে দিলেন। তারপর আর খবর নিলেন না সেটা দিয়ে সে কি করছে। আপনার বাচ্চা তারপর উচ্ছন্নে গেলো, পরে তো হায় হায় করে আর লাভ নেই।

আজকাল সব অভিভাবক চায় তার বাচ্চা অলরাউন্ডার হবে। কখনো কি নিজে একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবেছেন অলরাউন্ডার সবাই হতে পারেনা। অনেকের মধ্য কেউ কেউ হয়। বরং সারাদিন অন্যদের সাথে তুলনায় বাচ্চার যে মানসিক ক্ষতি আপনি/আপনারা তার ছোটবেলায় করে দিচ্ছেন এটার সূদুরপ্রসারী কুফল বাচ্চাটাকেই আজীবন বয়ে নিতে হবে।

যত্ন করা মানে অতিরিক্ত খবরদারি করা নয়। বাচ্চাকে যত্ন করার মানে হলো সে কি চাইছে, কিসে তার ভালো এবং কতটা সে নিতে পারছে সেদিকে মনোযোগ দেয়া।

লেখক: শিক্ষক ও লেখক