মে দিবস শুধুই একটা ছুটির দিন!
প্রকাশ | ০১ মে ২০১৯, ২০:৫৪
মে দিবস শুধুমাত্র একটা সরকারি ছুটির দিন। রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে, আরামে গাড়ি চালানো যায়, যানজটের শহরে দ্রুত অফিসে যাওয়া যায়। সর্বোপরি, একদিনের স্যালারি ছুটির দিনে ডিউটি করার ফলে ডাবল পাওয়া যায়। এটাই মে দিবসের মাহাত্ম্য। মহান মে দিবস সফল হোক। এরচেয়ে বেশি কেউ কিছু দাবি করলে সে অতি অবশ্যই উন্নয়নবিরোধী। তাকে তুলে এনে চাবকানো হোক।
যদিও ১৮৮৭ সালের এই দিনে কর্মঘণ্টা আনলিমিটেড থেকে ৮ ঘণ্টায় নামিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করে শ্রমিকরা প্রাণ দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী এই মহান মে দিবসে সরকারি ছুটি, র্যালি, সমাবেশসহ এই দিবসের চেতনা নিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ানো টকশোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেখানে ফুল টাইম মালিক ও পার্ট টাইম শ্রমিক নেতা, সেলিব্রিটি সিনিয়র সাংবাদিক, মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, তাদের মজুরি নিয়ে কথা বলেন, সামাজিক-রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও অধিকার আদায়ের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলাপ করেন।
আলাপ শেষে ১২ ঘণ্টা ডিউটির পর ওভারটাইম ডিউটিতে থাকা ড্রাইভারের পেছনের সিটে বসে বাসায় ফেরেন। ওভার টাইমের টাকা আর সরকারি ছুটির দিনে ডিউটি করার টাকার হিসাবটা ড্রাইভারের জানা, একদিন দুই কেজি গরুর মাংস কেনা যাবে। কিন্তু মে দিবস কী সে সম্পর্কে সেই শ্রমিকের কোন আইডিয়া নাই। এটা বেশ স্বস্তির। ১২ ঘণ্টার ডিউটি ২২ ঘণ্টা করালেও সমস্যা নাই।
মানবাধিকার কর্মী, এনজিও কর্মী, সচেতন নাগরিকদের নিশ্চয়ই শ্রমিকদের এই কর্মঘণ্টার বিন্যাস চোখে পড়ে না? কিংবা তারা হয়ত ধরেই নিয়েছেন, অধিকার কর্ম শুধুমাত্র দাপ্তরিক? শুধুমাত্র টেলিভিশনের পর্দায়, পত্রিকার কলামে, রিসার্চ পেপারে, প্ল্যান প্রোপোজালের ফ্যান্টাসিতে? এর কোন প্রায়োগিক বাস্তবতা নাই?
প্রশ্নহীন নির্বিবাদী শ্রমিক বাজারে সবসময়ই চাহিদার তুঙ্গে। সে চাকরি যার অধীনেই হোক, যত বড় সচেতন সুশীল প্রগতির স্টেক হোল্ডারের প্রতিষ্ঠানেই হোক। কারখানার শ্রমিক ছাড়াও শ্রেণীগত অবস্থানের দিক দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর অন্তর্গত যেমন সুপারশপের কর্মচারী, কার-বাসের ড্রাইভার হেল্পার, সিকিউরিটি গার্ড প্রত্যেকের কর্মঘণ্টাই ১২ ঘণ্টা বা তার অধিক।
মালিক শ্রেণীর জীবন না হয় গুরুত্বপূর্ণ, তার সন্তান গুরুত্বপূর্ণ, বিদেশে অবকাশ যাপন গুরুত্বপূর্ণ, সঙ্গীর সাথে সিনেমা-নাটক, সভা-সেমিনার গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রমিকের কোন জীবন থাকতে নাই। তার বাচ্চা নিউমোনিয়া-টাইফয়েডে মরলেও ক্ষতি নাই। রংচটা কাপড় পরে শিশুপার্কে ঘুরতে যাওয়া খ্যাত বিনোদন, সঙ্গীর সাথে বলাকা অভিলাষে বসে 'জানপাখি' সিনেমা দেখার কোন গুরুত্ব নাই। কুত্তার বাচ্চারা তো তেল-ময়দা চুরি করেই দেশটাকে শেষ করে দিল। কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপিরা বরং দেশের সম্মান। তেল-আটা চুরি গুরুতর অপরাধ, বড় বড় টেন্ডারের পয়সা চুরি অ্যাওয়ার্ডেবল। রাষ্ট্রপ্রধানের কাছাকাছি পর্যন্ত যাওয়া যায়। দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার গ্রাফ ধেই ধেই করে ওপরের দিকে ওঠে। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
চাকরি দেওয়ার চেয়ে বড় দাক্ষিণ্য এই সমাজ-সংসারে আর কিছু নাই, মে দিবস সম্পর্কে জেনে তাই শ্রমিকের অত দরকার নাই। তার কাজ চাকরি করা, জীবনের লক্ষ্যই চাকরি করা। ঘণ্টা দিয়ে কী আসে যায়?
হ্যাপি মে ডে গাইজ।
লেখক: সাংবাদিক