একাত্তর এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট
প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০১৬, ১৬:৩২ | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০১৬, ২২:৪৭
একাত্তরে বাঙালির শত্রু ছিল (পাকিস্তান)। তারা বুঝেছিল, বাঙালিদের তারা আর দমিয়ে রাখতে পারবে না। তাই তারা মরণোৎসবে মেতে ছিল। রক্তের খেলায় উন্মাদ হয়ে উঠেছিল। তাই দেশের সাধারণ মানুষের উপর চালিয়েছে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, অত্যাচার, নিপীড়ন এবং নিজেদের হেরে যাওয়া নিশ্চিত জেনেই আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল তাদের, তা হল দেশকে মেধাশুন্য করে দেওয়া। ভয়াবহ ছিল সেই পরিস্থিতি। মানুষ শ্বাস নিতে পর্যন্ত ভয় পেত। সেই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য মানুষ, যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রাণের মায়া না করে। গোপনে পাশ বালিশ কাঁথা দিয়ে ঢেকেও পালিয়ে গিয়েছিল ঘর থেকে, মানুষ। প্রত্যেকের উদ্দেশ্য এক, দেশ স্বাধীন করা। হ্যাঁ আমরা যেমন মরেছি, তেমনি মেরেছি। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর, শত্রুদল আমাদের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল। দেশ স্বাধীনতার ঘোষণা পেয়েছে এবং বাংলাদেশ নামে একটা দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা পেয়েছে।
একাত্তরে যে সকল ঘটনা ঘটেছিল, আমার মতে তার বীজ বপন হয়েছিল দেশ ভাগের সময় অর্থাৎ ৪৭ থেকে। তারপর একে একে ৫২' র ভাষা আন্দোলন, ৬৫'র ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, ৬৯'র গণঅভ্যুত্থান অর্থাৎ তখন তৎকালীন আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং তারপর এলো মহান মুক্তিযুদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে যখন বাঙালির গায়ের রক্ত টগবগ করে ফুটছিল, তখন বাঙালির লক্ষ্য একটাই। তারা নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশ স্বাধীন করবে। আপামর বাঙালি যখন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন তারা জানত তাদের শত্রু কে???
বর্তমানও অনেকটা একাত্তরের মতই, গুম, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অত্যাচার চলছে এবং দেশকে মেধাশুন্য করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দিন দিন ঘটনার জের তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দেশে চলছে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি-হামলা, ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা। অন্য ধর্ম নিয়ে কথা বললে তারা হয়ে যায় প্রগতিশীল আর ইসলাম ধর্ম নিয়ে কিছু বললেই সে হয়ে যায় নাস্তিক। তখনও মানুষ শ্বাস নিতে ভয় পেতো, আজও পায়। বর্তমানে মানুষ কাজের জায়গা তো পরের কথা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে যেতেও ভয় পায়। এমনকি কোন শপিংমল বা রেষ্টুরেন্ট এ যেতেও দু'বার ভাবে।
কিন্তু একাত্তরে বাঙালি নিজেদের শত্রু কে জানলেও আজ বাংলাদেশের মানুষ সঠিকভাবে জানে না তাদের শত্রু কে বা কারা...
তখনও বাতাসে রক্তের গন্ধ ভাসতো, আজও ভাসে কিন্তু সবাই হয়ত গন্ধ নেয়ার অনুভুতি হারিয়ে ফেলেছে।
তাই বলতে চাই, একাত্তর সালের যবনিকাপাত হয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানের যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, কঠোরভাবে তা দমন না করতে পারলে, ফলাফল একাত্তরের থেকেও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মনে হয় আমার।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী