নারী ও পুরুষ পাশাপাশি হাঁটুক
প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০১৮, ১৪:৩৫
আজ ৮ই মার্চ। বিশ্ব নারী দিবস। এই দিবসটা ঘিরে আজ অনেক সভা, সেমিনার আয়োজন করে নারী অধিকার, নারী নির্যাতন, নারীর অর্থনৈতিক অবদান সহ অনেক বিষয় আলোচনা করা হবে। কিন্তু সমাধান কতদূর হবে জানি না। এসব করে নারীরা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে তার হিসেব কষলে তেমন চোখে পড়ে না। তবে এক সময় দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্যই ‘শ্রমজীবি নারী দিবস’ হিসেবে দিনটি পালন করা হতো। এরপর ধীরে ধীরে নারী অধিকারের বিষয়গুলো চলে আসে।
সব দেশে নারীরা কম বেশী নির্যাতিত হয়। কোন দেশে নারীরা তেমন ভাল নেই। যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, যৌতুক, ইভটিজিং প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। নারী তার অধিকারের কথা বললে নির্যাতিত হচ্ছে। শুধু একদিন আলোচনা করে এর সমাধান আমরা করতে পারবো না। যতদিন আমরা ঘর থেকে নারীদের সম্মান দিতে না পারি ততদিন নারীরা অসম্মানিত হবে। যদি আমরা নিজ ঘর থেকে নারীদের সম্মান শুরু করি দেখবেন সমাজ রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে নারীরা সম্মানিত হচ্ছে। নারীদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও নারীর মতামতের প্রতি স্বাধীনতা যেদিন থাকবে এই দিবসের গুরুত্ব তখন অনেকটা এমনি কমে যাবে। তখন নারীদের জন্য আলাদা দিবস লাগবে না। তবে আবার এটুকু বলা যায় যে তাও এই একটা দিনই নারীদেরকে নিয়ে গোটা বিশ্ব ভাবে তাদের গুরুত্ব এই পৃথিবীতে কতটুকু। তারপরও দেখবেন এই বিশেষ দিনটাতেও কোথাও না কোথাও নারী নির্যাতিত হচ্ছে। যে মানুষটা নারী অধিকারের পক্ষ নিয়ে এতক্ষণ কথা বলল সে লোকটাই দেখবেন যে নিজের ঘরে স্ত্রীর অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম অনেক আগে বলে গেছেন "বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর"। সত্যি তো, নারী পুরুষ মিলে তো এই পৃথিবীটা বাসযোগ্য হয়েছে। তাহলে নারীদের মতামতের স্বাধীনতা থাকবে না কেন? আমাদের ধারনা আছে যে বুঝি শ্রমিক, দিনমজুর ও রিকশাওয়ালারা স্ত্রীকে মারে। যদিও এটা আমাদের ভুল ধারনা। বর্তমানে আসলে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত সবাই স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে মানসিক নির্যাতনটা বেশি। যা একটা মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। শারীরিক যন্ত্রগুলো সহজে ভুলা যায় কিন্তু মানসিক যন্ত্রাগুলো উঠতে বসতে আঠার মত লেগে থাকে। আমাদের বিবেক যদি জাগ্রত না হয় তাহলে আমরা কখনও পরিপূর্ণো মানুষ হতে পারবো না। আর মানুষ হতে না পারলে এসব নির্যাতন চলতে থাকবে।
নারী অধিকারের বিষয়গুলো নিয়েও পুরুষকেও এগিয়ে আসতে হবে সততার সাথে। একটি পরিবারে নারী ও পুরুষ দুজনই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সেই পরিবারের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নারীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এমন কি শিক্ষিত মেয়েরাও পরিবারের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। নারীরা শিক্ষিত হয়েছে কিন্তু তাদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠা থেকে অনেক দূরে।
অনেক বাবা বলে মেয়ে তুমি আকাশে উড়ো, তোমার সফলতা আকাশ ছুঁয়ে যাক। শুধু বাবা নামক পুরুষটি এই কথাটা তার মেয়েকে খোলা মনে বলতে পারে। আহা বাবা ছাড়া, সব পুরুষেরা যদি এরকম করে প্রতিটা মেয়েকে বলতে পারতো, তোমার পথে কোন কাঁটা নেই, তুমি নিরাপদ, ভয় পেয়ো না, শুধু এগিয়ে যাও, আমরা পাশাপাশি হাঁটতে চাই, পৃথিবীটা অনেক সুন্দর- তাহলে হয়ত নারী দিবসের জন্ম হতো না। নারী অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠার প্রশ্নও থাকতো না।
লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা