লেখককে বাঁচিয়ে রাখুন
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:৪৬
আমি লেখালেখি করি ঠিক আছে, একটা বইও বের হলো, কিন্তু আমার জীবন লেখকের না। আমার জীবন আসলে চাকরের। কোনদিন এই চাকর জীবন থেকে বা দাস জীবন থেকে আমি হয়তো বের হয়ে একটা লেখক জীবনে প্রবেশ করতে পারবো না। আবার এও হতে পারে, আমি লেখক জীবন সামলাতে পারবো না। সবাই যেমন বিপ্লবী হতে পারে না, তেমনি সবাই লেখালেখি করলেও লেখক জীবন যাপন করতে পারে না।
আমি কেন বলছি, আমার জীবন চাকরের? হ্যাঁ শুনতে খারাপ শোনালেও বলছি, কারণ একজন লেখককে হতে হয় অপ্রাতিষ্ঠানিক, সমস্ত শৃঙ্খল মুক্ত। আমাদের এই দেশে এরকম হওয়া অসম্ভব কঠিন, গায়ের এক পরত চামড়া ছিলে যায়।
এমনিতেই পরিবারে পিতা মাতারা সন্তানদের জন্য যে স্বপ্ন দেখে তা মানুষ হওয়ার স্বপ্নের চাইতে ভালো এবং বড় চাকর হওয়ার স্বপ্ন। আমরা ঠিক মতো মানুষই হতে পারি না, আবার লেখক হবো! পরিবার আর সমাজ যদিও বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানের লেখক হতে চাওয়ার বাসনা মেনে নেয়ও, তার পর পরই তাদের বক্তব্য থাকে, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে অমুক লেখকের মতো হও। মানে ক্রিকেট যখন খেলবাই তবে শচীন ট্যান্ডুলকার হও, নইলে শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে, দেখো কোথাও চাকর হতে পারো কি না। তারপর আরো একজন চাকর বিয়ে করো, এবং গান্ডে পিন্ডে বাচ্চা চাকর জন্ম দেও।
এখানে, দুটো ভালো কথা বলে উৎসাহ দেয়ার পরিবর্তে, চারটা খারাপ কথা শুনিয়ে নিরুৎসাহিত করতে পারলে যেন অনেকেই বেশ জিতে যায়। কারণ একজন মানুষ স্বাধীন হয়ে যাবে, আর অন্যরা তোষামোদে দাস হয়ে থাকবে এটা তো হতে দেয়া যায় না। পেছন জ্বলে যাবে যে।
লেখককে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় সমাজের স্বার্থে, মানব সভ্যতার স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে। লেখকের বই কিনতে হয়, যেন তাকে পয়সার জন্য কোন চাকর জীবনে প্রবেশ করতে না হয়। কারণ একজন লেখককে যদি প্রাতিষ্ঠানিক হতে হয় তবে সে, সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে পারবে না, প্রতিবাদ করতে পারবে না। আর যখন অন্যায়ের প্রতিবাদ হয় না, তখন মানুষকে হতে হয় বন্দী, বিপন্ন।
লেখকের বই কয়টা বিক্রি হয়েছে এটা জিজ্ঞেস না করে, বরং তার লেখা নিয়ে, লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলুন। লেখকের দায়িত্ব লেখা, বই বেচা না।
বইমেলায় যান। বই কিনুন, বই উপহার দিন। লেখককে সম্মান এবং সম্মানী দুটোই দিন।
লেখক: আইনজীবী