সাজগোজ মানেই কি নারীসুলভ!
প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৩২
"প্রতিবাদ করতে গেলে অত সাজতে হয় না। বৈষম্যর বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে অত সাজা উচিত না"-এইটা একটা জাজমেন্টাল ভাবনা। সাজগোজ নিয়ে অনেক কথা শুনি।
: কেন এতো সাজি?
: নারীবাদের সাথে কি সাজগোজ যায়?
: এতো মিলিয়ে পোশাক পরি কেন?
: চুল এরকম রঙ করি কেন?
: ঠোঁটে কেন গাঢ় লিপস্টিক দেই?
: পোশাক-আশাক তো কখনও কখনও খুবই ইয়ে আর কি! কী "শো" করতে চাই আসলে?
ইত্যাদি ইত্যাদি।
এগুলো কি একজন নারী সম্পর্কে সাধারণ ঔৎসুক্য না কি ঠারেঠোরে মেয়েরা কি পরবে না পরবে, সাজবে না সাজবে তার নির্দেশনা দেওয়া?
প্রফেশনাল কারণে মেকাপ নিতে হয়। তবে তা ছাড়াও আমি সাজতে ভালোবাসি, রঙ ভালোবাসি, ট্রেন্ডি আর ফ্যাশনেবল পোশাক পরতে পছন্দ করি। দেশী তাঁত সবচে প্রিয়। কাঞ্জিভরম ছাড়া ইন্ডিয়ান সব প্রাদেশিক শাড়িই সংগ্রহে আছে। মুম্বই এর নেট/জর্জেট শাড়ি আর পাকিস্তানি থ্রিপিসে রীতিমতো ভীতি আর বিববিষা আছে। আরাম লাগে আর চিয়ার আপ হই এমন কাপড় পরতে ভালোবাসি। হাতে চুড়ি, কানে-গলায়-নাকে-চুলে-আঙুলে নানান কিসিমের গয়না পরতে পছন্দ করি। প্রচুর জুতা-স্যান্ডেল আছে সংগ্রহে তবে পারফিউমে আগ্রহ নেই। বিশেষ কোন ব্রান্ডে তো নয়ই।
এখন এইসবের সাথে আমার অ্যাকটিভিজম, আমার কাজ করার দক্ষতা, আমার আদর্শিক জায়গা আর অর্ন্তগত নানান ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক কি?
সাজলেই সেই নারী নরম-কোমল, সাজলেই সেই নারীকে নিয়ে ইয়ার্কি ফাজলামি করা যায়, সাজলেই সেই নারী একান্ত "নারীসুলভ" বা "সুলভ" এরকম ভাবনা অনেক প্রগতিশীলেরাও ভেবে থাকেন।
আবার অনেকে সাজগোজ করাকেই নারীর একমাত্র কাজ বা নারীত্বসুলভ মনে করে থাকেন। সংসদে দাঁড়িয়ে অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ঝাড়লে মুছলে বাড়ি, সাজলে গুজলে নারী! মানে হলো না সাজা মেয়েরা পুরুষের মতো, পুরুষ নিজে শৌর্যবীর্যের অধিকারী প্রশংসনীয় হলেও, তাদের মতো কোন নারী হলে সে আবার "মর্দাটাইপ নারী" হিসেবে অভিহিত হয় যা মোটেও প্রশংসনীয় নয়। মানে সাজগোজও তার ইচ্ছাধীন নয়, আরো নারী হয়ে উঠতে তাকে সাজতে হবে।
এখন সেই আদি ও অকৃত্র্রিম প্রশ্নটি আসতে পারে। "নারী কেন সাজে?" পুরুষকে আকর্ষিত করার জন্য? এই অতিপ্রাচীন ভাবনা থেকে বের হয়ে আসার মনে হয় সময় হয়েছে। কোন কোন সময় সেটা কারণ হতেই পারে কিন্তু নারী এবং পুরুষও সাজে কিন্তু মূলত নিজের ভালো লাগার জন্যই। এই সাজগোজ কতটা আনপ্রোডাকটিভ, কতটা অকারণ তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে কিন্তু ক্যালাস হয়ে থাকার মধ্যে (নারী-পুরুষ উভয়ই) কি ভালোত্ব আছে আমি তো বাবা বুঝি না!
মোট কথা ভালো লাগাকে দাম দেই। আমি নারী। আমার ভালো লাগার দাম দিয়ে আমি বাঁচার অধিকার রাখি।
নারীসুলভ, শিক্ষকসুলভ, মাতৃসুলভ- এইসব খুবই আপেক্ষিক সব ব্যাপার স্যাপার। কারো বাহ্যিকতা দিয়ে এগুলো বিচার করা যায় না।
লেখক: সাংবাদিক