নারীবাদ এবং পিতৃতন্ত্রের দ্বন্দ্ব
প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:৩৯ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:১৩
যে ছেলেটি মেয়েদের পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা নিয়ে ১২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটা ভিডিও বানালো, সেই ছেলেটিকে বাসে এক নারী তার ঘেটি ধরে তুলে দিয়েছিল, বাসের সংরক্ষিত ৯ টি আসনের একটিতে বসার জন্য। আর তুলে দেয়ার সময় বলেছিল মূর্খ, ছেলেটি সেই অপমান মেনে নিতে পারে নি, এবং তাই মনের দুঃখে সে দেখল টিনের চালে কাক, আমি তো অবাক, কেন নারী আর পুরুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, আমার লিঙ্গ আছে খাড়িয়ে মুততে পারি, স্তন নাই শার্ট খুলে হাঁটতে পারি, এইরকম উচ্চমার্গীয় মানব জাতির কল্যাণমূলক দুইটা কোয়ালিটি থাকার পরও নারীদের “কি ভাবে চলিতে হইবে” এই নিয়ে কথা বলা যাবে না কেন!!
পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়া এমনিতেই আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সেটা ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্যেই। কিন্তু ছেলেটি বার্তা দিয়েছে কোন মেয়েকে পাবলিক প্লেসে সিগারেট খেতে দেয়া যাবে না, কেউ যদি দেখেও তবে সেটা ভিডিও করে যেন ভাইরাল করে দেয়া হয়।
এই ছেলেটার সাথে ওই যে মাদ্রাসার ছেলেগুলো যারা নারীদের জন্য নির্মিত টয়লেট ভেঙে ফেলেছিল, তাদের রয়েছে হুবহু মিল। এই ছেলেটার সাথে মিল আছে তেঁতুল শফীর, এই ছেলেটার সাথে মিল আছে ওই সমস্ত ছেলেদের যারা গোপনে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও করে পরে সেই সঙ্গীকে ব্ল্যাকমেইল করে, বা তার সম্মান হানি ঘটাতে ভিডিও ভাইরাল করে দেয়, এই ছেলেটার মিল রয়েছে ওই ধর্ষকদের সাথে যারা ধর্ষণ করে ঘাড় মটকে, মাথা মুখ থেঁতলে নৃশংসভাবে খুন করেছিল রূপাকে, কিংবা তনুকে, কিংবা শিশু তানহা কে।
হায়াত মাহমুদ রাহাত নামের ছেলেটা এবং প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা ছেলেটা যার নাম সাব্বির তারা দুজনই আসলে পটেনশিয়াল রেইপিস্ট যারা রেইপকে নারীর উপর প্রতিশোধ নেয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র মনে করে, এবং যারা শুধু রেইপ করেই ক্ষান্ত হবে না, সেই নারীকে যত রকম নৃশংসভাবে অত্যাচার করে মারা যায় তা করে খুন করবে।
কেন? কারণ পিতৃতন্ত্র তাদের শিখিয়েছে, পুরুষ নারীর উপরে অবস্থান করে। তারা শিখেছে, নারীকে সম্মানের একটি সিলেবাস রয়েছে, যদি সম্মান করতেই হয়, তবে এবং শুধুমাত্র তবেই সম্মান দিতে হবে, যদি ওই নারী সেই সিলেবাস মেইন্টেইন করে চলে। আর তা যদি না হয়, তাহলে সেই নারীকে শিক্ষা দিতে হবে। যেহেতু খুন সহজে করা যায় না, সহজে করা যায় সম্মান নষ্ট, কিংবা সবার সামনে সেই নারীর ব্যাক্তিগত তথ্য সবাইকে জানিয়ে দিয়ে সেই নারীকে সবার সামনে একটা তামাশার বস্তু বানানো যায় তাই সেটা করতে হবে, এবং সেটা এই অত্যাধুনিক যুগে স্মার্ট ফোনে স্মার্টলি ভিডিও করে নানান মাধ্যমে ভাইরাল করে দিতে হবে।
ধূমপান করা নারীদের জন্য আসলে আধুনিক কোন ট্রেন্ড না। এক সময় ছিল, যখন এই গ্রাম বাংলার নারীরাই হুক্কা টেনে ধূমপান করতেন। নারীবাদের সাথে ধূমপান করার সম্পর্ক নেই। কিন্তু শুধু নারী বলেই একজন নারী ধূমপান করতে পারবেন না, কিংবা চিপায় চুপায় ধূমপান করতে পারবে, লুকিয়ে করতে পারবে, কিন্তু কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে, “আমরা হুক্কা টানি না হুক্কার খবর জানি না” এইখানেই নারীবাদ এবং পিতৃতন্ত্রের দ্বন্দ্ব।
লেখক: আইনজীবী