রান্না ও গৃহস্থালি: পুরুষের শখ, নারীর দায়িত্ব!
প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৩৭ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪২
এই দেশের শতকরা পঁচানব্বই ভাগ পুরুষ রান্না জানে না। তারা রান্নাঘরের কোন কাজও ভাল করে জানে না। এই যে তারা এত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ পারে না, জানে না এবং করে না, এজন্য তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র লজ্জা, দ্বিধা, খারাপ লাগা, অনুতাপ- কিছুই কাজ করে না। বরং আশ্চর্য ব্যপার হচ্ছে শতকরা চুরানব্বই ভাগ পুরুষ এই নিয়ে মোটামুটি গর্বিত থাকে যে তারা রান্নাবান্নার মত 'মেয়েলি' কাজ জানে না এবং এ নিয়ে কোন ধরণের আগ্রহ বোধ করে না।
অথচ এদের সকলেই খেতে পছন্দ করে এবং খাবার এদের জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা।
সভ্য দেশের পুরুষেরা রান্নাকে মেয়েলি কাজ ভাবে না। তারা রান্না জানে, রান্না করে এবং রান্নাসহ যাবতীয় গৃহস্থালি কাজ নিজের কাজ মনে করেই সম্পন্ন করে। সভ্য সমাজে গৃহস্থালি পুরুষের বা নারীর একার বিষয় নয়। সন্তান লালন পালনের দৈনন্দিন দায়িত্ব নারীর ঘাড়ে এককভাবে ফেলে রাখে না কোন সভ্য পুরুষ। অথচ আমাদের অসভ্য পুরুষেরা যখন বিদেশ গমন করেন, তখন ঠিকই রান্ধেন, বাড়েন এবং ঘরের কাজকর্ম করেন। আবার বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আবার অহংকারী পুরুষ হয়ে যান এবং রান্নাঘরকে নারীর জায়গা ভাবা শুরু করেন।
আমার পরিচিত অনেক পুরুষ আছেন, যারা রান্না করেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই শখের রাঁধুনী। প্রতিদিন সংসারে যে রান্না, খাওয়াদাওয়া হয়- তার দায়িত্ব তারা পালন করেন না। যদি কখনো মনে হয়, তখন একটু গরুটা রান্ধেন কি গ্রীক সালাদ বানান কি একটু পোলাউ রান্না করে মেহমান আপ্যায়ন করেন। তাদের এই ভূমিকায় তাদের স্ত্রী সন্তানরা আপ্লুত হন। দিকে দিকে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এবং তারা একদিন রান্না করে নাম কিনে ঢেকুর তুলে প্রতিদিন সকালে বউয়ের তৈরি নাশতা খেয়ে বউয়ের রান্না করা লাঞ্চ বক্সে ভরে অফিস গমন করেন।
ঘরের রান্না এবং গৃহস্থালীকে নারীর মত প্রতিদিনের দায়িত্ব বলে কাঁধে তুলে নেন এরকম পুরুষ আমি দেখি নাই এই দেশে। কিন্তু বিশাল পদে কর্মরত কি গৃহিনী- সকল নারীকেই দেখছি প্রতিদিনের গৃহস্থালী ও রান্না নিয়ে ভাবতে, করতে এবং সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে। এজন্য নারীর কোন প্রশংসা দিকে দিকে ছড়ায় না। কারণ নারীই রান্না করবেন- এটাই স্বাভাবিক।
আমি অফিসে মিটিংয়ে বসেও বাসায় কি রান্না হবে তার চিন্তা করে ফোনে সেই বন্দোবস্ত করি, বাসায় ফিরে রান্না করি এবং অফিসে যাওয়ার আগে রান্নাসহ গৃহস্থালী সকল কাজ গুছিয়ে রেখে যাই এবং আমি রোজগারও করি।
এদেশের পুরুষ রোজগার করে এবং রোজগার করা ছাড়া সংসারে তার আর কোন কাজ আছে বলে সে মনে করে না। রান্নাঘরসহ গৃহস্থালী দায়িত্ব ও কাজের বোঝা বউয়ের উপরে দিয়ে তিনি ঢঙ মেরে বলেন, বউ আমার হোম মিনিস্টার। বউ এই ঢং মার্কা মন্তব্যে গলে মাখন হয়ে যান এবং সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফিরে একাই রান্নাঘরে ঘামতে ঘামতে রান্নার দায় সারেন।
এই দেশসহ এই উপমহাদেশের পুরুষের মত ধান্ধাবাজ, অকর্মণ্য, অলস, অপদার্থ এবং চতুর পুরুষ খুব কম আছে। আর এদেশের নারীর মত ওভারওয়ার্কড, স্ট্রেসড, বঞ্চিত আর স্টুপিড নারীসমাজ এই দুনিয়ায় আর কোথাও নাই।
লেখক: লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা