ওয়াজ এবং নারী বিদ্বেষ: মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ
প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৬, ২৩:৩৭
বেহেশতের মোহে উগ্রভাবে ধর্মাচ্ছন্ন এক তরুণ ফ্রান্সের নিস শহরটিকে নারকীয় হত্যা যজ্ঞ চালিয়ে লাশের স্তুপে পরিণত করলো। এর আগে তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ঢাকার গুলশানে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোতে। জীবন বাজি রেখে অগণিত মানুষকে হত্যা করে হলেও তাদের বেহেশতে থাকা হুর পরীদের পেতেই তাদের এই কর্মযজ্ঞ। কিন্তু যে বেহেশতের কথা আজ আমরা শুনছি, ছেলেবেলা বাবা মায়ের কাছ থেকে এররকম বেহেশত পাওয়ার কথা কখনো শুনিনি। আজকাল ধর্মের নামে কতো কি শুনি! জিহাদ, হুর, যৌনদাসী, গেলমান। মায়ের মুখে শোনা বেহেশতে এসবের নাম কথা শুনিনি। ছেলেবেলার সেই বেহেশত আজকের হুরের বেহেশত ছিলো না। মায়ের মতো, আদরের খালার মতো, গর্ভবতী বড় বোনের মতো, লাল ঝুঁটিওয়ালা ফ্রক পরা ছোট বোনের মতো ছিল, নারীদের গুলি করে করেও খুঁচিয়ে খুচিয়ে জখম করে, শরীর বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে বেহেশতে যাওয়ার কথা কখনো আমরা জানতাম না। তাদের জন্য যে বেহেশতের লোভ দেখানো হচ্ছে আমাদের সময় এ রকম চিন্তা ছিল না। ধর্ম সম্পর্কিত ধারণা পেতাম বাবা মা এবং লেখাপড়ার উদার চিন্তার প্রতিফলন থেকে। মানুষের ভালবাসার মাঝেই স্বর্গের উপস্থিতি টের পেতাম। বাবা মা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মানুষকে ভালবাসাটাই ধর্ম, মানুষকে ভালবাসাই স্বর্গ। একটি কবিতা পড়েছিলাম। "কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর"।
রাজপুত্রের মতো অবয়ব নিয়ে জন্ম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের আধুনিক দুলালেরা কোন বেহেশতের জন্য হঠাৎ এমন হায়েনা হয়ে উঠলো তা বোঝা কল্পনাতীত। মা বলতেন মানুষের জন্ম এই পৃথিবীর সকল প্রাণীর মঙ্গলের জন্যে। বেহেশত বা স্বর্গ আলাদা করে পেতে চাওয়া স্বার্থপরতা। আমাদের বাবার বাড়ির মায়ের আদরের পোষা কুকুরটি ৮৮ সনের বন্যার সময় আমাদের বাড়ি ছেড়ে যায়নি। সারাদিন মায়ের পায়ের কাছে আদর পাওয়ার জন্যে ঘুরঘুর করতো। বন্যার পানিতে চারদিক ডুবে গেলে আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। কুকুরটি চারদিকে পানি উঠে যাওয়ায় আমাদের টিনের চালের উপর মায়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে একদিন মরে গেলো। মা বলতেন মানুষের জন্ম অসহায় মানুষের কল্যাণের জন্যে। আব্বা বলতেন বড়শী দিয়ে মাছ ধরা ধোকাবাজী, মুনাফেকী। মুনাফেকরা কখোনো বেহেশতে যাবে না। বাবা মাকে দুঃখ দিলে বেহেশতে যাওয়া যাবে না। প্রতিবেশী, কাজের বুয়া, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন লোকটি অনাহারে থাকলে বেহেশত পাওয়া যাবে না। কারো মনে দুঃখ দিলে, মনে আঘাত দিলে, মিথ্যা বললে বেহেশত পাওয়া যাবে না। ছোট ভাইটি রেগে রেগে বলতো সে বেহেশতে কখোনো একা একা যাবে না। আমরা সবাই একসাথে বেহেশতে থাকতে চাই। পঁচিশ বছর পর এখন ইট কাঠের অট্টালিকায় চার দেয়ালে আটকা পড়ে থাকতে থাকতে বাবা মা হারিয়ে মনে হয় মা- বাবা ভাই বোনে মায়া মমতায় জড়ানো ফেলে আসা যে টিনের বাড়িটি ছিলো, সেটিইতো আসলে বেহেশত ছিলো। যেখানে বর্ষায় ঝম ঝম করে টিনের চালে বৃষ্টি নামতো,আম-নারকেল-পেয়ারা-মাধবী লতা আর বেলী ফুলের গন্ধ মৌ মৌ করতো। প্রতিবেশী গোপালের মা ছিলো, পুজার দিনের নাড়ু ছিল, হাঁস মুরগীর ঘর ছিলো, সেখানে ভোরবেলা সাদা সাদা ডিম ছিলো। বাড়ির গা ঘেঁষে পেছনে একটি হাড়হা গাছ ছিলো। ধবধবে পাঞ্জাবী পরা হুজুর ছিলেন। তাঁর মুখে মানুষকে ভালোবাসার গল্প ছিলো। ভোরবেলা দলবেঁধে আরবী পড়তে যেতাম হুজুরের কাছে। পড়া শেষে গোল হয়ে বেহেশতের গল্প শুনতাম তাঁর কাছে। তিনি ওয়াজ করতেন কিন্তু নারীদের শরীর নিয়ে ওয়াজ করার কথা কখনো শুনিনি। কখনো শুনিনি বেহেশতি নারীদের শরীর 'ডিমের সাদা অংশের মতো নরম' এমন অশ্লীল রূপের বর্ণনা। নারীদের কথা বলতেন 'মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত'। খলিফা আবু বকরের সততা, প্রিয় নবী করিম সঃ এর পথে বৃদ্ধ মহিলার কাটা বিছানো গল্প, আরো কতোকি!
কিন্তু আজ কিছু হুজুরের ওয়াজে শুধু নারীর বদনাম, নারীর শরীর তেঁতুল, ছেলা কলার দাম নেই, এরকম আরো অনেক বিদ্বেষপূর্ণ বর্ণনা। ওয়াজ বাংলাদেশের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির এক বিরাট অংশ। এই ওয়াজের ভক্ত উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক থেকে শুরু করে দেশের সকল শ্রেণীর ধর্মপ্রাণ মানুষ। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্ত মানুষেরা যারা অর্থের অভাবে লেখাপড়া করতে পারে না এবং অর্থাভাবে চিত্ত বিনোদনের উপকরণ থেকে বঞ্চিত, তাদের কাছে বিনোদন হিসেবে এটি একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে। পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজের জলসা এদের কাছে শিক্ষার এক বিরাট উপকরণ। এই ওয়াজের বয়ান নিম্নবিত্ত শিক্ষাবঞ্চিত সাধারন মানুষের জন্যে পরম নির্ভরতার প্রতীক। কারণ ধর্মের মূল বাণী কখনোই এদের কাছে পৌঁছায় না। পৌঁছুলেও ভাষাগত প্রতিবন্ধকতায় কখনই গূঢ়ার্থে পৌছাতে পারে না। ফলে অনেকে তাদের সম্পূর্ণ জীবন পরিচালিত করে এই ওয়াজের নির্দেশনায়। হুজুরের ওয়াজ শুনে তারা হাসে, কাঁদে, জেকের আজগার করে, বিচার আচার সালিশ, পারিবারিক সমস্যা সমাধান, নারীর অবস্থান নির্ণয় করে। কখনো সন্তান আগমনে ওয়াজের আসর বসায়। সিন্নি দেয়। শিক্ষা বঞ্চিত বলে ধর্মীয় গ্রন্থ ভালোভাবে না বুঝেই ওয়াজের বয়ানের উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে পরম মুগ্ধতায়।
সম্প্রতি আবির্ভূত ধর্মভিত্তিক উগ্র সাম্প্রদায়িকতা থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। হ্যামিলনের বাঁশি বাজিয়ে আমাদের সন্তানদের হরণ করে বিশ খাইয়ে পাগল কুকুরের মতো লেলিয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের উপর। পঙ্গপালের মতো কিলবিল করে বেড়ে যাচ্ছে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো একদল ওয়াজ বয়ানকারী হুজুর। সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে আত্মমর্যাদাহীন অকর্মণ্য একদল মানুষ নারীকে হাতিয়ার করে ওয়াজ রচনা করে তারা ধর্মকে রক্ষা করতে চাচ্ছে। এদের শিক্ষা নেই, যোগ্যতা নেই, পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ করে নারীর নামে কুৎসিত নোংরা অশ্লীল কথা বলে নিজেদের পেট চালায়। মুলত নারীর শরীরের বিভিন্ন কুৎসিত বর্ণনাই তাদের ধর্ম ব্যবসার মুল পুঁজি। নারী প্রধান একটি দেশে শারীরিক কুৎসিত ভঙ্গিমা সহ নির্ভয়ে এবং নির্লজ্জভাবে তারা ছোট ছোট শিশুদের সামনে বেহেশতী হুর গেলমানদের শরীরের বর্ণনা করে ওয়াজের নামে। নারীদের প্রতি এদের এই মৌখিক যৌনবিকৃতি ঘৃণা আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখেছি জঙ্গিদের হাতে হত্যা হওয়া নারীদের ময়না তদন্ত রিপোর্টে। নারীর মেধার পরিচয়ে এরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করে। তাই নারীর যোগ্যতার পরিচয়ে এরা ধর্মের অপব্যখ্যা দিয়ে নারীর অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে চায়। এইতো কিছুদিন আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পর ইতিহাসের এক কঠিন সময়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন টেরিসা মে নামের একজন নারী। অন্যদিকে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য লড়াই করতে যাচ্ছেন একজন যোগ্য নারী প্রার্থী হিলারি। তিনি জিতে গেলে পৃথিবীর ক্ষমতায়নে নারীর অবস্থান পাবে এক নতুন মাত্রা। উল্টোদিকে ঠিক এই সময়ে পৃথিবীব্যাপি জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে দানবীয়ভাবে। অরল্যান্ডো গুলশান এবং ফ্রান্সের ঘটনার পর বিশ্ব নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। জঙ্গিবাদ দমনে এ দুই নারী সরকার প্রধান কি পদক্ষেপ নেবেন তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রনে এবং নারী অগ্রগায়নে সকল দেশ, বিশেষত ২৬টি দেশ যেগুলোর সরকার প্রধান নারী, তারা নিশ্চয়ই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন, এটি এখন আমাদের স্বপ্ন।
নারী ক্ষমতায়নের এই স্বর্ণযুগে মনে পড়ে গেলো বাংলাদেশের একজন হুজুরের ওয়াজের কথা, যিনি বলে থাকেন, নারীকে তৈরী করা হয়েছে স্বামীকে শান্তি-তৃপ্তি দেয়ার জন্য, অন্যে কোন উদ্দেশ্যে নয়। ভাবছি হিলারী ক্লিনটন এবং টেরিসা মে এই ওয়াজগুলো শুনলে আমাদের কি ভাববেন। উন্নত দেশে নারী বৈষম্য একটি অগ্রহণযোগ্য বিষয়। তাই কাউকে অপমান করতে হলে এখন আর কেউ মাকে তুলে গালাগাল দেয় না। গাল দেয় নারী বিদ্বেষী বলে। গত কিছুদিন আগে একজন হুজুরের ওয়াজের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখলাম, তিনি বলছেন ''ওমাগোমা স্বামী যদি তোমারে ... শরীরের কোন জায়গা ছেইচ্চা দেয়, বাপাড্ডে গিয়া বিচার না দিয়া সবুর কইরা থাইক্কা যাইতে পারো, সেই ছেইচ্চা যাওয়া জায়গাটা বেহেশতে চইলা যাইবে।''
বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ শিশু-কিশোর, যুবক এই ভিডিওগুলো দেখে দেখে বড় হয়। কখনো কখনো মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুরাও এগুলো দেখে বলতে থাকে, সুবহান আল্লাহ! তারা ওয়াজ শোনার সময় আরবী পড়ার ঢঙে মাথা ঝোলায়, কখনো হুজুরকে জুতো এগিয়ে দেয়, আবার কখনও পেছনে গিয়ে বাতাস করে। যখন একজন হুজুর বলেন যে নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু স্বামীকে শান্তি তৃপ্তি দেয়ার জন্যে, তখন কোমলমতি শিশুরা তাদের মা-বোনদের সম্পর্কে কি ধরণের ধারণা নিয়ে বড় হয়, গুলশান ট্রাজেডির পর তা আবার নতুন করে ভাবতে হবে।
পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে আইসিস জঙ্গিরা যে সকল মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে মহিলাদের মৃতদেহগুলো ছিলো চরম বিকৃত আর ভয়ংকর, যা ৭১ এর পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার কথা মনে করিয়ে দেয়। হত্যার পরেও অসংখ্য বার তারা নারীর শরীরকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করেছে। ভাবতে অবাক লাগে এমন কি কারণে আদর আহ্লাদে বড় হওয়া আলালের ঘরের দুলালরা পরিনত হলো ভয়ংকর দানবে। কারা এই বংশীবাদক যাদের বাশীর সুরে বেহুঁশ হয়ে একের পর এক দেশ ছাড়ছে অপদার্থের দল।
গুলশান ট্রাজেডির সাথে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত তথ্য থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা একটি বিষয় আবিষ্কার করেছেন যা জঙ্গি আক্রমনের মোটিভেশনাল ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছে। ফ্যাক্টরটি হচ্ছে বিতর্কিত তিনজন মাওলানার ওয়াজ ও বয়ান, যা ইউটিউব এবং ফেসবুকে মানুষ গণহারে দেখে আসছে। ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানালে, পুলিশ সদর দফতর এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অতি জরুরি ভিত্তিতে ইউটিউব থেকে এই তিন ব্যক্তির ওয়াজ ও বয়ান সরিয়ে ফেলার জন্য বিটিআরসিতে চিঠি পাঠায়। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিতর্কিত বক্তব্য সংবলিত তাদের বেশ কিছু অডিও এবং ভিডিও ইতোমধ্যে সরিয়ে ফেলেছে। যাদের ওয়াজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারা হচ্ছেন মুফতি জসীম উদ্দীন রাহমানী, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ও মাওলানা তারিক মনোয়ার।
নিজ পরিবারের ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করা সবসময় অপছন্দ করি, তবুও বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তান লালন পালন করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমার ষোলো বছরের ছেলে তার বাবার সাথে যুক্তরাজ্যে লেখাপড়া করছে। চার মাস পর আমার সাথে তার দেখা হয়েছে। প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় তার বাবা তাকে গুণে গুণে হিসেব করে পাউন্ড দেয়। ছেলের স্কুলে যাবার দু'টি প্যান্ট। একটি ছিঁড়ে গেছে বলে সে আমাকে খুব গোপণে জানায় তাকে একটা প্যান্ট কিনে দেয়ার জন্য। আমি বললাম তুমি তোমার বাবাকে বল। সে বলল বাবাকে ভয় লাগে। আমি জিজ্ঞেস করি বাবাকে ভয় করো, আমাকে ভয় করোনা কেনো? তুমিতো দেখছি মিসোজিনিস্ট! আমার কথা শুনে ছেলে যার পর নেই হতবাক হয়ে গেলো এবং মুহূর্তেই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলো। যে ছেলে কখনো কাদেনি সে কাঁদতে লাগলো, ''মা তুমি আমাকে এ কথাটি কিভাবে বললে? হাউ ক্যান ইউ ইনসাল্ট মি ইন সাচ এ ওয়ে?'' আমি হতভম্ব হয়ে বসে থাকলাম। বুঝতে বাকী রইলোনা ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে নারী বিদ্বেষী বলা একটি গালি। ছেলে কাঁদলেও আমি অনেক খুশী হয়েছি। সকল সময় সন্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আগে মানুষ হতে, পরে পুরুষ। আর মানুষ হতে হয় বুদ্ধি বিবেচনা, মানবিকতা আর পরিশ্রম দিয়ে, প্রকৃতি প্রদত্ত কোন শারীরিক অঙ্গ দিয়ে নয়।
তাই নারীর প্রতি ঘৃণা বাস্প রোধে সরকারি পদক্ষেপের প্রতি অভিনন্দন। নারী অবমাননাকর সকল ওয়াজ বন্ধ হোক। প্রয়োজনে নতুন আইন করে করে গ্রেফতার করা হোক এসকল নারী বিদ্বেষী জঙ্গী প্রোডাক্টিভ মোটিভেটরদের। অন্যথায় আপনার আমার দেবশিশুর অবয়বে কিশোররের হাতে করুণ, নির্মমভাবে হত্যা হবে আপনার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী, বোন অথবা মা।
লেখক: সহকারী ব্যবস্থাপক প্রশিক্ষণ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড