নৈতিক শিক্ষায় পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:৫২ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:৫৬

বর্তমানে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও আমরা প্রকৃত শিক্ষার অর্জন থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। শুধু শিক্ষায় শিক্ষিত হলে হবে না আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আর এজন্য শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। নৈতিক শিক্ষা মানব জীবনকে সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলে। আজকের কোমলমতি শিশুরাই হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ। তাই ছোট থেকে শিশুদের যে শিক্ষা দেওয়া হয় তারা সেটাই মনের মধ্যে লালন করতে থাকে। আর এজন্যই প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা দানের গুরুত্বটা অনেকটা বেড়ে গেছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবারের যথেষ্ট ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই পড়ানোর সাথে সাথে জীবনকে কিভাবে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করা যায় সেই শিক্ষা দিতে হবে, আর এটাই হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা। ছাত্ররা শিক্ষকের কথাকে বাবা মার চেয়ে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই ছাত্রদের চারিত্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ কিভাবে জাগ্রত করা যায়, শিক্ষকদের উচিত সেই দিক গুলো নির্দেশনা দেওয়া। কোন কোন ভাল বিষয়গুলো ছাত্রদের জীবনকে আলোকিত করবে এবং কোন কোন খারাপ বিষয়গুলো তাদেরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে সেই পথ তাদেরকে দেখাবে শিক্ষকেরা।

ছোট থেকে ছেলেমেয়েদের চারিত্রিক গঠন শুরু হয়, তাই চরিত্র গঠনের বিষয়গুলো পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আলোচনা করতে হবে। সব সময় সত্য কথা বলার অভ্যাস তাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ সেই পার্থক্য নির্ণয়ের ক্ষমতা তাদের মধ্যে ছোট থেকে থাকতে হবে তা না হলে তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকবে না, ফলে তারা বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হবে। মানবিক মূল্যবোধ এর শিক্ষা ছোট থেকে দিতে হবে যেমন সবসময় মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে হবে, গরিবদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে, অন্যয়ের প্রতিবাদ করতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে। ছোট থেকে তাদেরকে নীতিবাক্য শেখাতে হবে। মানব জীবনে প্রভাব ফেলবে এমন শিক্ষণীয় বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে রাখতে হবে।

প্রত্যেক ধর্মে সুন্দর সুন্দর কথা থাকে যা জীবনকে আলোকিত করে তুলে তাই স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা প্রয়োজন। ছোটবেলা থকে ধর্মীয় শিক্ষা পেলে মানবজীবন মানবিক গুণাবলিতে পরিপূর্ণ হবে। প্রত্যেক ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে সবার।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের পারিবারিক শিক্ষার ভূমিকা অন্যতম। ছোট থেকে বাবামায়েরাই ছেলে মেয়েদের কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, কোন কাজটা করা যাবে না এগুলো শিখাতে হবে। ধরুন আপনার ছোট ছেলেটি একদিন স্কুল থেকে কারো একটি পেন্সিল নিয়ে আসলো, আপনি তা দেখেও তাকে কিছু বললেন না, পরের দিন হয়ত সে কারো আর একটি পেন্সিল নিয়ে আসলো। এভাবে চলতে থাকলে একদিন সে মনে করবে এটাই নিযম। এটা কোন অপরাধ না। তাই সন্তানের নীতি নৈতিকতা ও মনমানসিকতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবারের যথেষ্ট ভূমিকা থাকা উচিত।

ছেলেমেয়েদের উচ্ছৃঙ্খল জীবনের জন্য অনেকে তাদের বাবা মাকে দায়ী করে। তাই আপনার সন্তানটি কোথায় কি করছে চোখ কান খোলা রাখুন। সন্তানকে বেশি বেশি সময় দেন। তাদের সাথে বেশি করে গল্প করুন। তাদেরকে মাঝে মাঝে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান। একটা বিষয় পড়ার চেয়ে তারা দেখে দ্রুত শিখে। ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে তাদের মধ্যে এক ধরনের জেদ তৈরী হয়। আর এই জেদের কারনে তারা নষ্ট জীবনের প্রতি পা বাড়ায়। ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাবা মা দের রাগ ক্ষোভগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাবা মা-দের মনমানসিকতার পরিবর্তন না আসলে ছেলে মেয়েদের মনমানসিকতার উন্নয়ন হবে না। সন্তানের সামনে কারো দুর্নাম করা যাবে না। তা না হলে এটা তাদের বাক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলবে।

এখনকার ছেলে মেয়েরা ঘরে বসে থাকতে থাকতে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে অবাধে যে কোন খারাপ সাইটে ঘুরাফেরা করতে পারে, তাই তাদের কথা চিন্তা করে কিছু কিছু সাইট অফ রাখতে হবে, যাতে তাদের বিকৃতি মনমানসিকতা তৈরী না হতে পারে। বা আপনার সন্তানকে বলুন তোমার সামনে অনেক কিছু ঘটতে পারে, জীবনে চলার পথে ভাল-মন্দ অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে পার, তবে মানুষ হিসেবে তোমার যা কিছু ভাল তা গ্রহণ করতে হবে।

অনেক বাবা মা চাকুরি করেন, সন্তানদের বেশি সময় দিতে পারেন না তাই তাদের সাথে সব সময় ফোনে যোগাযোগ রাখতে হবে, ঠিকমত স্কুল থেকে বাসায় ফিরল কিনা, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করল কিনা, ঘুমালো কিনা, হোম ওয়ার্কগুলো করে ফেলতে বলা। এতে দেখবেন যে আপনার সাথে আপনার সন্তানটির সম্পর্ক সুন্দর থাকছে। অফিস থেকে আসার পর সবটুকু সময় তাদেরকে দিন। তাদেরকে বুঝান তোমাদের ভবিষ্যতকে আরও নিশ্চিত ও সুন্দর করার জন্য আপনি চাকুরীটা করছেন। সন্তানকে বেশি করে ভালবাসুন দরকার হলে মৃদু শাসনও করুন।

আজকের ছেলে মেয়েরাই ভবিষ্যতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাই তাদের মানসিক শক্তি অর্জনের দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। মানসিক শক্তি দৃঢ় হলে কোন দুর্বলতাই তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।

আজকের শিশুটি আগামীর স্বপ্ন। তাই তাদেরকে ছোট থেকে ভাল মানুষ হিসেবে তৈরি করার দায়িত্বটি স্কুল, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সর্বোপরি আমাদের সকলের। শিক্ষার পাশাপাশি যার মধ্যে নৈতিকতা আছে তার দ্বারা অসামাজিক কার্যক্রম করা কঠিন। তাই সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আগে বলুন একজন ভাল মানুষ হও। তাই বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সুশিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার গুরুত্বটা খুবই প্রয়োজনীয়।

লেখক: তরুণ লেখক