ক্ষমা করুন শাওন মাহমুদ
প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৭, ০২:৩১
আমাদের একটি দেশ দিতে গিয়ে আপনি হারিয়েছেন আপনার বাবাকে। আমরা হারিয়েছি একজন সুরস্রষ্টাকে, বাংলার একজন কৃতি সন্তানকে। শুধু আপনিই নন, আপনার মতো এমন অসংখ্য সন্তানের পিতৃহারা বিপন্ন জীবনের বিনিময়ে, আলতাফ মাহমুদের মতো অসংখ্য কৃতি সন্তানের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি দেশ, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা। কিন্তু আপনাদের যোগ্য সম্মান আমরা দিতে শিখিনি।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে একটা সম্প্রদায় আছে, যারা শুধু বেঈমানই নয়, অসভ্য ও কুলাঙ্গার। এরা পাকিস্তান প্রেমী। এরা বাংলাদেশে বাস করে কিন্তু আত্মা বন্ধক রাখে পাকিস্তানের কাছে। বিশেষ করে পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের কাছে। আর তাই পাকিস্তান বা পাকিস্তানী ক্রিকেট খেলোয়ারদের নিয়ে এরা ফ্যান্টাসিতে ভোগে। গ্যালারীতে 'ম্যারি মি আফ্রিদি' বলে নির্লজ্জের মতো হেঁদিয়ে মরে বা আফ্রিদিকে গুরু মানে। এরা ৭১ এও ছিলো, ৭৫ এও ছিলো, ২০১৭ তেও আছে। আপনি এদের আমার চেয়ে ভালোই চেনেন। এরা না জানে নিজের সঠিক ইতিহাস, না বুঝে দেশ, না চিনে দেশের সূর্যসন্তানদের।
এইতো, মাত্র দুইদিন আগেই এরকম এক কুলাঙ্গারের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছিলাম। যে কিনা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকার পরিবর্তন চায়। এর পরপরই আরো দুইতিনটা স্ক্রিনশট চোখ পড়েছে আপনাকে নিয়ে। কিন্তু সেগুলোর ভাষা এতোটাই জঘন্য ও নোংরা যে সেগুলোর স্ক্রিনশট শেয়ার করা যায় না কোনভাবেই।
ওই পাকিপ্রেমীদের পাকিস্তানী বাপ আফ্রিদি বলেছে, বাংলাদেশ তার সেকেন্ড হোম। বাংলাদেশ আবার কেমন করে আফ্রিদির সেকেন্ড হোম হয়? স্বাভাবিক কারণেই আপনি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মাত্র চারলাইনের একটি স্ট্যাটাসে। আর যায় কোথায়? পাকিস্তানের কাছে আত্মা বেঁচে দেয়া এদেশীয় কিছু কুলাঙ্গার আপনাকে রক্তাক্ত করতে নেমে পড়েছে মাঠে তাদের অকথ্য, অশ্রাব্য ভাষার ঝুড়ি নিয়ে। আর আপনি যেহেতু একজন নারী, তাই তারা বেছে নিয়েছে তাদের বাপেদের বহু ব্যবহৃত অস্ত্র। যা কিছু তাদের পূর্বসূরীরা করেছিলো আমাদের মা বোনদের সাথে একাত্তরে, তারই পুনরুচ্চারণ করেছে তাদের মনের সব নোংরামী নিয়ে।
এই হলো বাংলাদেশ। আপনি ঠিকই বলেছেন, এরা না চেনে আফ্রিদি, না চেনে শাওন মাহমুদ। আমি অত্যন্ত লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী শাওন মাহমুদ। আমরা কিছুই করতে পারি না। আপনি, আপনারা আমাদের এই অক্ষমতাকে ক্ষমা করুন। এরা তো সেই কুলাঙ্গারদেরই উত্তরসূরী, যারা ৭১ এ রাজাকার হয়েছিলো, ৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছিলো। এদের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করার নেই।
লেখক: কবি ও সাহিত্যিক