এভ্রিলের সাহস আর আত্মবিশ্বাসই তার সৌন্দর্য
প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৪৩ | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৫০
জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল।
মেয়েটার বিয়ের ছবি দেখলাম পত্রিকায়। পাশাপাশি তার বর্তমান কালের ছবি। রাত-দিন পার্থক্য।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাগুলোতে আমার কোন উৎসাহ কখনোই ছিলো না। হাসিমুখে বিজয়িনীদের ছবি পত্রিকায় দেখা পর্যন্তই আমার জানাশোনা সীমাবদ্ধ। সব প্রিভিলেজেড ব্যাকগ্রাউন্ডের মেয়েরা, যাদের নিজেদের জীবনের কোন স্ট্রাগল নেই, কোন যুদ্ধজয়ের কাহিনী নেই। শুধু রূপের আলোর ঝলকানি আর প্রতিভা প্রদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এই সৌন্দর্য।
'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' কমপিটিশন নিয়েও তাই আজকের আগ পর্যন্ত আমার কোনোই আগ্রহ ছিল না। আজ জেনেছি, এই মেয়েটা অন্যদের মত না। ওর নিজের জীবনের একটা গল্প আছে, বাঁচার গল্প, বিজয়ের গল্প।
গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে এভ্রিলের মাত্র ষোল বছর বয়সে বাল্যবিবাহ হয়েছিল। বিয়েটা কয়েকমাসও টেকেনি।
সেই অবস্থা থেকে মেয়েটা নিজেকে তুলে নিয়ে এসেছে, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে শিখেছে। আমূল বদলে নিয়েছে নিজেকে। হাই স্পিড বাইক চালায়, ইয়ামাহার মত ব্র্যান্ড এর অ্যাম্বাসেডর হয়েছে মাত্র ২০ বছর বয়সেই। কতটুকু আত্মবিশ্বাস আর প্রত্যয় থাকলে এতোটা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব, ভাবা যায়?
তার জীবনে ঘটে যাওয়া বাল্যবিয়ে নামক একটা দুর্ঘটনার কারণে 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়ার তথাকথিত যোগ্যতা হয়তো সে হারিয়েছে কিন্তু আমার চোখে মেয়েটার সাহস আর আত্মবিশ্বাসই তার সবচাইতে বড় সৌন্দর্য।
আয়োজকদের ব্যর্থতা, পক্ষপাতিত্ব কিংবা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার নিয়ম ভাঙা নিয়ে সমালোচনা চলতে পারে। কিন্তু অনেককেই দেখলাম মেয়েটার চরিত্র নিয়ে, তার আগের বিয়ে নিয়ে ট্রল করছেন। আজেবাজে ছবি ও লেখা পোস্ট করছেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই অমানবিক মনে হচ্ছে। যারা এমন করছেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে দয়া করে একটু বিবেচক হোন। নোংরামি বন্ধ করুন।
'মুকুট' ফিরিয়ে নেয়া হোক আর তার কাছেই থাকুক, সমাজের সকল প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, হাজার হাজার প্রতিযোগীর মধ্য থেকে সেরা দশে আসা এই মেয়েটি বাল্যবিবাহের শিকার সকল তরুণীর জন্য যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সেই 'অদৃশ্য মুকুট' টি কেউ তার কাছ থেকে চাইলেও ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
মেয়েটির জন্য ভালোবাসা।
লেখক: ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট