সমালোচকের চোখে আত্মহত্যা নিয়ে কথা নয়
প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:২৪
আত্মহত্যা প্রবণতায় থাকাকালীন মানসিক অবস্থাটা খুব নাজুক হয়ে যায়। বেঁচে থাকার ইচ্ছে বিলীন হয়ে যায় ক্রমেই। নিজে বেশ কিছুদিন আত্মহত্যা প্রবণতায় ভুগেছি। তাই নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে জানি তীব্র মানসিক দৈন্যের এই সময়ে একটা বিকট বীভৎস বিষণ্ণতা সব সংকটের সমাধান হিসেবে একমাত্র মৃত্যুকেই প্রকৃষ্ট ভেবে নেয়। যেন মরে গেলেই এই সংকটগুলো কখনো ছুঁয়ে যাবে না আমাকে।
কিন্তু এই স্পর্শকাতর অবস্থাটাকে আমরা যদি আমাদের অবস্থা থেকে বিচার (জাজ) করার চেষ্টা করি খুব অন্যায় হবে তাদের সাথে। সবার শারীরিক মানসিক জোর একরকম নয়। জীবনের ঘাত প্রতিঘাতের মুখোমুখি সবাই হতে পারেন না। যারা মুখোমুখি হয়ে বেঁচে আছি তারাও সবাই জোর দিয়ে বলতে পারি না বাকি সবাই জীবনের মুখোমুখি হয়ে, যুদ্ধ করে বেঁচে থাকবেন। নাৎসি বাহিনীর মত যদি বলি - শুধু শক্তিশালীরাই বেঁচে থাকবে আর দুর্বলরা মারা যাবে তাহলে খুব অন্যায় করা হবে দুর্বলদের উপরে।
একজন আত্মহত্যাকারী 'জীবনে বেঁচে থাকা কত অর্থবহ' 'জীবন কতটা সুন্দর' - এত কিছু ভেবে আত্মহত্যা করেন না। সমালোচক (জাজমেন্টাল) হয়ে আমরা অনেক কথাই বলতে পারি। যারা কখনওই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নি তাদের কাছে জীবনে বেঁচে থাকার ব্যাপারটা খুব স্পর্শকাতর এবং যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু এই চেষ্টা যারা চেষ্টা করেছেন কিংবা যারা আত্মহত্যা করে মারা গেছেন তাদের খুব মোটা দাগে সংজ্ঞায়িত করে আমরা বলে ফেলতে পারি না "আত্মহত্যা করা এখন একটা ট্রেন্ড" "আত্মহত্যা করা মানুষগুলো মেরুদণ্ডহীন"। আশা করি মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আমরা আত্মহত্যাকারী মৃত মানুষগুলোর ব্যাপারে উদার হব।
আত্মহত্যা চেষ্টাকারী অনেকেরই অনেক দীর্ঘ সময়ে বিষণ্ণতায় ভোগা যন্ত্রণা থাকে তখন দরকার হয় দীর্ঘমেয়াদী চিকিতৎসা এবং মানসিক সমর্থন। এই দীর্ঘমেয়াদ কখনো কখনো হতে পারে এক দুই বছর, কখনো এর চাইতেও বেশি। অনেক সময় পরিবারের একান্ত কাছের মানুষেরাও হতাশ হয়ে যান চিকিৎসাধীন মানুষটাকে নিয়ে।
আপনি যখন নিজের জায়গায় বসে বলছেন "কেন মানুষ আত্মহত্যা করে?" তখন সেই মানুষটার সম্পূর্ণ অবস্থা ভেবে বলছেন না। খেয়াল করলে দেখবেন আশেপাশে অনেক হতাশাগ্রস্থ দিশেহারা মানুষ ঘুরে বেড়ায়। আমি আপনি নিজে কতটা মানসিক সমর্থন দিয়েছি তাকে? কতদিন তাকে নিয়ে হাঁটতে গেছি ঝিরঝিরে বাতাসে? কতদিন তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছি "তুমি কেমন আছ?"? কতদিন তাকে নিয়ে নাটক দেখতে গেছেন? কতটা দিন তার ভালোলাগা নিয়ে কথা বলেছেন?
যদি দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমর্থন না দিয়ে থাকেন কাউকে তাহলে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে - এই স্পর্শকাতর সময়ে ভোগা মানুষদের নিয়ে আপনার কোন কথা বলার কোনরকম যৌক্তিকতা নেই।
নিজে ভালো আছেন কিংবা নিজে যুদ্ধ করেছেন বলে বাকিরাও কেন আপনার মত যুদ্ধবাজ হবে না বলাটা বাতুলতা - এটা আপনার মাথায় রাখা উচিত।
জগতের সকল মানুষ নিজেদের মত করে সুখী হোক। বেঁচে থাকুক নিজস্ব ভালোবাসায়। ভালোবাসা সবার ঘরে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসুক!
লেখক: জাবি শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মী