এখনো ‘বিয়ে’ মানেই ‘পাত্রের’ আর্থিক সামর্থ!
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৩১
ভাবছিলাম, কাছের অনেকেই আমার মনের অনেক কথাই বলে দিয়েছে। এই বিষয়ে আমি না হয় না ই বা বলি। কিন্তু হঠাৎই মনে হলো ২/৪ দিন পর চলে আসবে অন্য কোন বিষয়, অন্য কোন ঘটনার ঘনঘটা… না বললে কিছু অনুভূতি তো রয়েই যাবে না-বলা, বলেই ফেলি ছোট্ট করে, ক্ষতি তো কিছু নেই কারো।
বলছিলাম ‘বড় ছেলে’র কথা, গেলো ঈদ নাটকের একটি। অল্প কিছু ভালো পাত্র পাত্রীর স্বাভাবিক অভিনয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, অতি সাধারণ চেনা গল্প, তাই লাখো মানুষের আবেগকে ছুঁয়ে যাওয়াটা খুব বেশিই কাঙ্ক্ষিত। মানুষ দেখেছে, কেঁদেছে, নিঃসন্দেহে নাট্যকারকে সাধুবাদ দিতেই হয়। মানুষকে সাধারণ গল্প দিয়েই নাড়া দিতে পারা খুব সহজও তো নয়! যেটা অনেক বছর ধরে 'হুমায়ূন আহমেদ' করতে পেরেছিলেন বাংলা টেলিভিশনে!!!
মিজানুর রহমান (বাদ দিলে) আরিয়ান নামটা পছন্দই আমার। তার অন্য কিছু নাটকও দেখেছি, প্রেমের ব্যাপারে একটা ভীষণই আবেগঘন এবং আন্তরিক সম্পর্ক তুলে আনছেন একের পর এক, বিষয়টি লক্ষণীয়। এই নাটকেও তাই।
এবার এই ‘বড় ছেলে’-কে নিয়ে অল্প কিছু আমার একান্ত ‘তবে’ কিন্তু’ অনুভব বলি।
নাটক যত আগাচ্ছিলো, প্রেমের সম্পর্কটা যেমন দেখানো হয়েছে, আমি অপেক্ষায় ছিলাম এই বুঝি নায়িকা তার ভালোবাসার মানুষটিকে দু’হাত শক্ত করে ধরে বলবে, এমন সময় থাকবে না, কিছুতেই না, দেখো, আমি আছি তোমার পাশে, দুই জন মিলেই মুখোমুখি হবো বাকি সময়গুলোর। [মেয়েটির পড়ালেখার একটু কিনারাও যেহেতু হয়েছে, একটা শিক্ষিত পরিবারের আদুরে মেয়ে, সে ইচ্ছে করলেই এবার কাজে যোগ দিতেই পারে… এমন কিছুই ছিলো আমার প্রত্যাশা]
যাই হোক গল্পকার নাটকের নামকরণের স্বার্থকতা রাখতে যেয়েই হয়তো তেমনটি আনেননি এই নাটকে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনও বেশিরভাগ পরিবার এবং মেয়ে ‘বিয়ে’ মানেই ‘পাত্রের’ আর্থিক সামর্থ শত ভাগই আশা করে। মেয়ে জব করলেও শুধুই বাড়তি একটা উপার্জন এমনই ভাবে আজও। বিয়েতে এখনও ছেলের কাঁধেই ভর করে যেন সুখ সচ্ছন্দ। ব্যাক্তি আমি বা আমার মতন যে ‘মেয়েদের’ মস্তিকে এমন চিন্তা চেতনার কোন জায়াগায়ই নেই, তাদের কাছে এটি খুব অস্বাভাবিক একটি বিষয়ই বটে। ইন-ফ্যাক্ট আজকের বাংলাদেশও অনেকাংশে সে কথাই বলে। মেয়েরা সংসার চালাচ্ছে আর্থিক এবং মানসিক সবকিছু সবটুকু শেয়ার করেই। আর ভালোবাসা পেলে তো কথাই নেই, প্রেম যেখানে, সেখানে কত স্যাক্রিফাইসই (!) না করে মানুষ!!!
তবে দিন শেষে এটি একটি কেবলই 'নাটক'!!!
নাট্যকার আর একটু সময় নিয়ে ইচ্ছে করলেই এটিকে ২০১৭ সালের সেরা নাটকেরই মর্যাদায় বসাতে পারতেন। আমার মতে, তেমন কিছু না, যদি না এই নাটকেই নায়িকা’কে এমন ঝকঝকে পরিবারের শিক্ষিত একটি মেয়ে না দেখাতেন, আর হ্যাঁ, প্রেম যখন এমন গভীর তবে নাটকের নাম ‘বড় ছেলে’ না হয়ে, হতে পারতো ‘কেউ কেউ পারে না’ বা ‘কেউ পারে, কেউ পারে না’ বা আজকাল তো প্রচুর ইংরেজী নামেও ভালো নাটক হচ্ছে, হতে পারতো ‘রেস্পন্সেবল’ (সাথে ছেলে বা বড় ভাই লাগালেও খারাপ হতো না) হতে পারতো, ‘আই লাভ মাই ফ্যামিলি’… এমন কিছু।
এটা ঠিক আমাদের পারিবারিক ধারা অনুযায়ী ‘বড় ছেলে’র উপর অন্যদের আশা ভরসার জায়গা একটু বেশি (সব বড় ছেলেই তা নিষ্ঠার সাথে যদিও পালন করে না, তবে এমনটি করতেই বাধ্য থাকে বেশীর ভাগ বড় ছেলে, যেমনটি নাটকে উঠে এসেছে)। আবার অনেক ক্ষেত্রে একই জায়গায় 'বড় বোন'ও থাকে আমাদের চারপাশেই আছে এমন উদাহরণ... সে ক্ষেত্রে এই নাটকের সিকুয়াল হতেই পারে ‘বড় মেয়ে’ বলে আরো একটা!!!
যাই হোক, মানুষ নাটকে ফিরতে চায়, দেখতে চায়, তাই তো এত কথা, আশা করি নাট্যকার ঠান্ডা মাথায় সামনে আরো ভালো, পরিষ্কার, ঝকঝকে এবং প্রেসাইস মেসেজ নিয়ে ফিরবেন।
মানে, 'বড় ছেলে'র উপর থেকে এই মানসিক চাপ কমিয়ে আনা হোক আগামী সময়গুলোতে, একটা মানুষ নিজ জীবনে সুখি না হলে সামনে সেই মানুষ কেমন করে একটা সুখি আবহ বজায় রাখবে?
নাট্যকার হয়তো মাথায় রাখবেন, আলাদা করে কোনটা দেবেন কোন নাটকে, ‘প্রেম’ ‘বেকারত্ব’ হতাশা না পারিবারিক টানা পোড়েন বা ভালোবাসা... কোনটা!!!
লেখক: প্রবাসী বাঙালি ও আরজে