শরীর তো শরীরই
প্রকাশ | ০৯ জুন ২০১৭, ১৫:৫৭ | আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭, ১৭:৩১
১. পিরিয়ডপূর্ব যে মন খারাপ তার সাথে জগৎ সংসারের কোন সম্পর্ক নাই। পুরুষের সংযোগ নাই। কারো মাথা ব্যাথা নাই। পিরিয়ডপূর্ব বিষন্নতা, শরীর খারাপ লাগা এবং পিরিয়ডকালীন শারীরিক কষ্ট, যন্ত্রণা, অস্বস্তি এবং বিরক্তির সাথে মেয়ের একাই ডিল করতে হয়। তবে সমাজ তারে স্যানিটারি প্যাড কিনতে দেখলে ত্যাছড়া চউক্ষে চায়, হাসাহাসি করে, রোজার সময় ‘রোজা আছো নি?’ জিজ্ঞেস করে, জামার পিছনে লাল রক্ত দেখে গা ঘিনঘিনায়। তখন তার সব ছোঁয়া নিষেধ, যাওয়া নিষেধ, প্রার্থনা নিষেধ। পিরিয়ড একটা নিষিদ্ধ ঘটনা, ফিসফিসানির ব্যাপার। তবে সকল ফিসফিসানিওয়ালা এবং না ফিসফিসানিওয়ালা, ঘেন্নাবাদী, না ঘেন্নাবাদী সকলেই তাগো মায়ের পিরিয়ডের রক্ত দিয়ে ভেসে দুনিয়াতে আসছে। এবং এর আগের নয় মাস ওই রক্তের ভিতরেই ডুব দিয়া ছিল।
২. মাতৃত্ব রাখঢাকের, মাতৃত্ব আসলে পেট বড় হয়, স্তন বেড়ে যায়, কালো কালো দাগ হয়, স্ট্রেচ মার্ক পড়ে শরীরে। মাতৃত্বের শারীরিক মানসিক কষ্ট বেদনা যন্ত্রণা মেয়ের একার। শুধু নয় মাস না, আরো অন্তত আড়াই বছর লাগে শরীর পুরো আগের ফর্মে আসতে। এই সমাজে হবু মা বা বাচ্চাসহ মায়ের জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়া, তারে বেশি যত্ন করা, অফিসে তারে সুবিধা দেয়া- এইসব সহজে ঘটে না। কিন্তু মাতৃত্বজনিত কারণে চাকরি যায়, প্রমোশন আটকায়, ইনক্রিমেন্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ড হারানোর ঘটনা ঘটে। হবু মায়ের বড় পেট দেখে লোকে হা করে চায়। মেয়ে লজ্জায় বড় ওড়না বা আঁচলে তার মাতৃত্ব লুকায়। লোকের মনে থাকে না তাগো মায়েদেরও পেট হইছিল, বুক বড় হইছিল, তাগো মায়েদেরও তাদেরকেই রাস্তা ঘাটে দুধ খাওয়ানো লাগছিল।
৩. মেয়ের শরীরের দিকে পুরুষে চায়। মেয়ের হাত পা কোমর নিতম্ব বুক পেট কিছুই তাদের নজর থেকে বাদ যায় না। যারা চায় তাদের মনে থাকে না এই হাত পা বুক পেট কোমরওয়ালা এক মহিলাই তারে পেটে ধরছিল। আবার আরেক মহিলার মাধ্যমে তারা একই রকম হাত পা বুক পেট নিতম্বওয়ালা কন্যা বা নাতনীর জনক বা দাদা নানা হবেন।
তো, শরীর তো শরীরই। এই এক শরীর নিয়া এত। এই নারী শরীর নিয়া গবেষণা কইরাই আপনাদের দিন যদি কাটে, কামের কাম করবেন কখন?
শারমিন শামস্ এর ফেসবুক থেকে