এড়িয়ে গেলেই দায়মুক্ত হওয়া যায় না
প্রকাশ | ০১ জুন ২০১৭, ০১:৪২
ধর্মকে সব সময়ই পুঁজি করা হয়েছে বিভেদ তৈরীতে, প্রতিপত্তি গড়তে। বেশির ভাগ লোকই আমরা এড়িয়ে চলি এসব বিষয়, কারণ এ বিষয়গুলোকে ম্যানিপুলেট আর মিস-ইন্টারপ্রেট করা খুব সহজ। উস্কে না দেওয়া বিচক্ষণতার লক্ষণ। কিন্তু নজর আন্দাজ করা বা এড়িয়ে যাওয়া অসচেতনতার মধ্যে পড়ে। চোখের সামনে দেখেও 'আমি তো এইগুলিতে নাই, সব তো অমুকের ষড়যন্ত্র' বললেই দায়মুক্ত হওয়া যায় না। আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হয়ে এই নোংরা চেষ্টাগুলিকে ব্যর্থ করা জরুরী।
'এক টাকার আহার' নামের একটা উদ্যোগের পোস্ট মাঝে মাঝেই দেখেছি। কে তারা, কিভাবে তাদের কাজ চলে তেমন খেয়াল করিনি। শুধু দেখেছি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১ টাকায় পথশিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার আয়োজন করা হয়। জেনেছি এতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সুযোগ আছে। যে কেউ মানুষের জন্য কাজ করছে এটা দেখলেও আরাম পাই, কিন্তু সব কাজে ঢুকতে যাই না। যতোটুকু আমার সাধ্যে কুলায় ততোটুকুই করি।
আজকে একটু তাকিয়ে দেখলাম, অনুরোধেই দেখলাম। দেখলাম এর সাথে জুড়ে আছে এক দঙ্গল তরুণের নিরন্তর স্বেচ্ছাশ্রম। এ দেশে স্বেচ্ছাশ্রমের চল ছিলো এক সময়, কিন্তু কালের বিবর্তনে তা লুপ্তপ্রায়। আমরা যারা বিভিন্ন দায় দায়িত্বে জড়িয়ে গেছি তাদের পক্ষে এই স্বেচ্ছাশ্রম বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অনেক তরুণ এখন এগিয়ে আসছে। টাকার বিনিময়ে এরা কাজ করছে না, টাকার পরোয়া নেই। মন থেকে করছে, নিজেকে গড়ার জন্য করছে, অন্যের আনন্দের সঙ্গী হতে করছে। কিন্তু বেগাড় খেটে লাথি ঝ্যাঁটা সয়েও কাজ করবে না তাই বলে।
এখন যারা আমরা 'বিবিধ দায়িত্বে' জড়িয়ে গিয়েছি বলে মাঠে নেমে অনেক সময় দিতে পারছি না তাদের দায়িত্ব এই তরুণদলকে লাথি-ঝ্যাঁটা থেকে বাঁচানো। নইলে যে অতৃপ্ত আশা নিয়ে আমরা একটু একটু করে পরিবর্তনের চেষ্টায় নেমেছি তাতে জোয়ার আসবে না।
গত দু'দিনে জানলাম এই উদ্যোগটির বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামে বিভিন্ন রকম প্রচেষ্টা আছে সহায়তা প্রয়োজন এমন মানুষদের জন্য এবং সেগুলো দমিয়ে রাখার জন্য অতি পুরাতন কিন্তু সবসময়ই ফলপ্রসু এক প্রচেষ্টা হচ্ছে। যেহেতু এর মূল উদ্যোক্তা হিন্দু ধর্মাবলম্বী (আমি তার ধর্মবিশ্বাস জানি না, শুধু জানি হিন্দু পরিবারে তার জন্ম)- তার উদ্যোগে এতো মুসলিমকে খাওয়ানো হচ্ছে তাতে এক দল উজবুক 'জাত মারার' অপচেষ্টার গন্ধ পাচ্ছে এবং ব্যক্তি উদ্যোক্তার এই পরিচয়কে পুঁজি করে ধর্মের ধোঁয়া তুলে পুরো আয়োজনটার নামে কুৎসা ছড়াচ্ছে।
(https://www.facebook.com/binitaalam.bini/posts/313744675735861)
অখ্যাত অনলাইন পোর্টালের পাশাপাশি দুই একটা প্রতিষ্ঠিত অনলাইন পোর্টালও এতে ভূমিকা রাখছে। এতো বিশ্রী আর তুচ্ছ একটা বিষয় যেটা কিনা টোকা দিয়ে ফেলে দেয়ার মতোন, সেটাকে যখন প্রতিষ্ঠিত লোকজন সযত্নে তুলে নিয়ে পুষ্ট করে তখন আর এই তরুণদের কাছে মুখ দেখানোর জো থাকে না।
এই বাজে ব্যাপারটার দ্রুত অবসান ঘটুক। যারা প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে তাদের সবার জন্য অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা রইলো।
দ্রষ্টব্য: সংযমের মাস বলে যারা রমজানকে মানেন তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে নিন অগোচরে আপনার ভেতরে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অসহিষ্ণুতা বাসা বেঁধে আছে কিনা। দেখতে পান বা না পান, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তুচ্ছাতিতুচ্ছ বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে সংযমের পরিচয় দিন, পারস্পরিক শ্রদ্ধার চর্চায় সচেতন হোন।
জিনাত হাসিবা স্বর্ণার ফেসবুক থেকে