নারীকে ঊর্ধ্বশির দেখতে রাজি নয় সমাজ
প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৭, ১৪:৪৬
এতোদিন আওয়ামীলীগের ভোটের রাজনীতিতে বোকামি দেখতে পেতাম; মনে হতো যাদের ভোটের জন্য এ হেন কূপমন্ডুকতায় গায়ে গা মিশানো, তাদের ভোট যে আওয়ামীলীগের কপালে কখনো জুটবে না এটা তারা বুঝতে পারছে না! ঘোর আঁধারে তাদের উপর ভরসা থেকেই ছিলো এই 'কোমল ক্ষোভ' এর উৎসরণ, এখন বুঝতে পারছি।
ন্যায়বিচারের প্রতীকস্বরূপ মৃণাল হকের গড়া ভাস্কর্য অপসারণ এই আঁধারকে এতো গাঢ় করেছে যে জমাট বেঁধে গেছে সব ক্ষোভ। ন্যুনতম ভরসা নেই আর। এখন আর একে বোকামি মনে হচ্ছে না। ভোট পাওয়ার দুরাশা নয়, কলুষিত হয়েছে ওদের আগাপাশতলা। হেফাজতকে একটু একটু করে নিতে নিতে আওয়ামীলীগ আর বাকি রাখেনি নিজেকে। বিলুপ্ত হয়েছে। নতুবা এই ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না।
এখন আর আওয়ামীলীগ বা হেফাজত নয়। একাকার তথাকথিত 'সমাজ'কে দেখতে পাচ্ছি ভাস্কর্যের অপসারণে।
ভাস্কর্য তো আরো আছে। এই ভাস্কর্যে সমস্যা কী আর এর অপসারণে সমর্থন আর সহযোগিতার কারণ-ই বা কী? এটা দিয়েই কেন শুরু (শুরু-ই বলছি, হেফাজত যে এখানেই থামবে না তা স্পষ্ট)?
এই মুহূর্তে সব ভাস্কর্যেই আপত্তি? না, তা নয়। আরো অনেক ভাস্কর্য আছে যেগুলোতে এখনো আঙুল ওঠেনি।
নারীমূর্তিতেই আপত্তি? নাহ, তা-ও নয়। এখানে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বোরখা পরিহিতা কিংবা 'নম্র' নারীমূর্তি থাকলে তাতে আপত্তি হতো না তাদের, অন্তত এখনই নয়।
তাহলে? এই ভাস্কর্যের নারীরূপেই মূলত আপত্তি এবং সমর্থন। কেন? কী আছে এতে?
আছে। এর ভঙ্গিমায় আছে। এই নারীমূর্তি 'নম্র, ভদ্র, আনত" নারীরূপ নয়। নারীকে এমন উন্নত শির, বুক চেতিয়ে দাঁড়ানো, আত্মবিশ্বাসী আর উর্ধ্বমুখ দেখতে এ সমাজ রাজি নয়। এদের বুক কাঁপে এমন ভঙ্গিমায় নারীকে দেখতে। এদের নামাজ 'নষ্ট' হয়, এদের 'মতিভ্রম' হয় নারীর এমন রূপে। ন্যায়বিচারের ঝান্ডা নারীর হাতে দেখতে এরা অসম্ভব এক অস্বস্তিতে পড়ে যায়। এই 'এরা' সবাই মিলে মিশে একাকার- সে হোক হেফাজত, কিংবা আওয়ামীলীগ, বিএনপি অথবা যেকোনো 'আমজনতা' যাদের ভিড়ে আজকাল চলা মুশকিল! নিজের পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ার এই অনুভূতি থেকে তাদের মুক্তি মিলে, স্বস্তির নিঃশ্বাস সন্তর্পণে বেরিয়ে আসে তাদের ভেতর থেকে- যখন মৃণাল হকের 'জাস্টিশিয়ার' পায়ের নিচের মাটি সরে যায়!
জিনাত হাসিবা স্বর্ণার ফেসবুক থেকে