মধুর আমার মায়ের হাসি
প্রকাশ | ১৪ মে ২০১৭, ১৪:২৩
‘মা’ শব্দটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি শব্দ। মা শুধু একটি শব্দ বললে ভুল হবে। মা হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান, মা হচ্ছে একটি বটবৃক্ষ। একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে যেমন তার সুফল মানুষ ভোগ করতে পারে, একটি শক্ত খুঁটিকে আঁকড়ে ধরে মানুষ যেমন দিগ্গি্বজয় করতে পারে, একটি বটবৃক্ষের ছায়াতলে মানুষ যেমন শান্তির নীড় হিসেবে ঠাঁই খুঁজে পায়, ‘মা’ হচ্ছে সে রকম একটি অতি আশ্চর্য অতিমানবীয় নাম। মাকে শুধু মা হিসেবেই সাদামাটাভাবে নেওয়া যায় না। মায়ের গুণের বিচার করতে বসলে সারাজীবন একজন মানুষ সাধনা করতে থাকলে তা শেষ হবে না। গবেষণার পর গবেষণা চলতে থাকবে কিন্তু মা নামের তাৎপর্য লিখে, বলে বা গবেষণা করে কূলকিনারা হবে না।
মা করে না বা করতে পারে না- এমন কাজ জগৎ সংসারে আছে বলে মনে হয় না। একটি পরিবারকে সুখী করা বা হওয়ার পেছনে মায়ের ভূমিকা অনন্য। পরিসংখ্যান দিয়ে ব্যাখ্যা করাও তা যুক্তিযুক্ত নয়। বর্তমান সামাজিক কাঠামোর আদলে মা তিল তিল করে একটি পরিবারকে করে তোলেন একটি জগৎ সংসার। যে সংসারে আমরা সবাই হচ্ছি একেক জন সদস্য। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় মা হচ্ছে একটি যন্ত্র, যে কি-না সন্তানদের জন্মদান ও লালন-পালন করে বড় করে তোলেন। কিন্তু মাকে দেখার কেউ নেই। সংসার, সন্তান-সন্তুতি ও স্বামী সামলানোই হচ্ছে মায়ের একমাত্র ও প্রধানতম কাজ। তার কোনো নিজস্বতা নেই, তার কোনো দুনিয়া নেই, তার কোনো শখ বা আহ্লাদ নেই বা থাকতে পারে না। মা শুধু সংসারের একজন সেবক হিসেবে সব দায়িত্ব পালন করে যাবে এবং দিন শেষে তার জন্য থাকবে শুধু অবহেলা, অযত্ন, অত্যাচার, নির্যাতন, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা এবং একাকিত্ব।
ছেলেমেয়ে এক সময় বড় হয়ে যায়, স্বামী তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা সবই সময়মতো পূরণ করে নেন এবং সবশেষে মায়ের জন্য পড়ে থাকে অযত্ন ও অবহেলা এবং উৎকণ্ঠা। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এই মা-ই কত কষ্ট, অপমান ও নির্যাতন সহ্য করে তার নিজের সংসারকে ভালো রাখার জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করে যান। কোনো মা-ই কোনো সংসারের অমঙ্গল চান না। কিন্তু ভাগ্যচক্রের খেলায় মাকেই সব মন্দ কাজের ভার নিতে হয় এবং লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। পরিবারের বাকি সদস্যরা কেউই মন্দ কাজের ভার নিতে চায় না বা নেয় না। সবাই সবার সুবিধাটুকু হিসাব করে নিয়ে নিতে চেষ্টা করে বা নিয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ, এর বাইরেও মায়ের অনেক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত আমাদের সমাজ কাঠামোতে বিদ্যমান আছে। তবে সেটা সাধারণ দৃশ্যপটের মধ্যে পড়ে না। ক্ষেত্র বিশেষে সেগুলো দেখা যায়। কিন্তু সামান্য কিছু ও দু-একটি দৃষ্টান্ত তো আমাদের জন্য সুখকর হতে পারে না। প্রায়ই আমরা দেখতে পাই, কিছু কিছু রত্নগর্ভা মাকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু আমাদের পুরো সমাজের আনাচে-কানাচে কত রত্নগর্ভা মা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন, কে তাদের খোঁজ রাখে বা রাখছে।
সত্যি কথা বলতে কী, আমাদের বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় মাকে মূল্যায়ন করা বা মায়ের আদর্শিক গুণাবলিকে ঠিকমতো তুলে ধরা হয় না বা হচ্ছে না। কিন্তু স্বর্গীয় এই সম্পর্ক-সম্পত্তির ব্যাপারে প্রত্যেকটি মানুষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
সূত্র: সমকাল