প্রাপক প্রধানমন্ত্রী, প্রেরক- একজন ধর্ষিতা!
প্রকাশ | ১১ মে ২০১৭, ১৯:৪৫
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার কাছে এই প্রথমবারের মতন চিঠি লিখতে বসেছি বড় দুঃখে। আমার উদ্দেশ্য আপনি আমার দুঃখটুকু বুঝবেন, এবং বুঝে একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন। আপনি হয়তোবা জানবেন গত ৭ই মে বনানীতে দায়ের করা ধর্ষণ মামলাটির কথা, যেখানে আপনার দুজন কন্যা ধর্ষিত হয়েছে সমাজের প্রভাবশালী কয়েকজন ধর্ষকের হাতে। বহুল আলোচিত এই মামলাটির শুরু থেকেই টাকা এবং ক্ষমতার জোরের কাছে সাধারণ মেয়ে দুটি বিপর্যস্ত, শোনা যাচ্ছে ধর্ষকেরাও পালিয়ে গেছে দেশ ছেড়ে। এমন অবস্থায় আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই পারবে না এই ধর্ষণ মামলার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে। আমি তাই আমার ধর্ষিত দুই বোনের জন্য আপনার কাছে লিখতে বসেছি।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে কল্পনা করতে অনুরোধ করছি আপনার নিজ কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের কথা। মনে করুন- আপনি জানলেন আপনার কন্যাটি লজ্জায়, ঘৃণায়, ভয়ে গোপন করে আছে তার ওপর পাশবিক কিছু নির্যাতনের কথা। কারণ ধর্ষকদের কাছে আছে সেই ধর্ষণের সচ্চিত্র ভিডিওদৃশ্য। আপনি সেটি জানলে কি করতেন?
যেহেতু আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, আপনি আপনার সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে গ্রেপ্তার করতেন দুই বর্বর জঘন্য অপরাধীকে, এরপর আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে উপযুক্ত সাজা দিতেন। কিন্তু এই অসহায় মেয়ে দুটির মায়েরা কেউ প্রধানমন্ত্রী নয়। নয় বলেই দুজন লজ্জা, ভয় ও সমস্ত অপমান নিয়ে একেকটি দীর্ঘ দিন পার করছে।
আমি ঠিক এটিই চাইছি। চাইছি আপনি আপনার এই দুই কন্যাকে ধর্ষণ করার সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন যে- অপরাধী যেইই হোক, অপরাধের সাজা অবশ্যই হবে।
আপনিতো জীবনে বহু কিছু হারিয়েছেন। পঁচাত্তরে পুরো পরিবারকে হত্যা হতে দেখেছেন। বিচারের অপেক্ষায় চল্লিশ বছরের বেশি অপেক্ষা করে থেকেছেন। আপনি ছাড়া এই ব্যথা আর কে বুঝবে? আমি মনে করছি এদেশে ক্ষমতাবান একজন মানুষ আছেন যার ওপর আমি ও আমরা আস্থা রাখতে পারি।
বিশ্বাস করুন- আপনার ধর্ষিতা দুই কন্যার একজন পরম আকুতি নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আপনাকেই স্মরণ করেছে। সে বলেছে- প্রধানমন্ত্রী তো মেয়ে, আর কেউ না বুঝলে তিনি বুঝবেন।
যে মেয়ে দুইটি ধর্ষিত, নির্যাতিত, অপমানিত হওয়ার পরেও আপনার কথা মনে রেখে আপনার ওপর বিপর্যয়ের শেষ ধাপেও আত্মবিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রেখেছে, আপনি কি তাদের পরম মমতায় বুকে আগলে নেবেন না?
আপনি তো সেই মেয়েগুলিকে গণভবনে বিয়ে দিয়ে তাদের মায়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন পুরান ঢাকায় যাদের বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল। আপনিতো সেই মেয়েগুলোর বিয়ের দিনে তাদের সুখী দাম্পত্য জীবনের সূচনায় সাক্ষী হয়েছিলেন।
আপনি কি এই মেয়ে দুটোর ক্ষেত্রে পারবেন না তেমন কিছু করতে? অন্তত এইটুকু সাজা নিশ্চিত করতে যাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আপনাকে? আপনার কানে কি এই আকুতিটুকু পৌঁছাবে না?
তারা যে পরম বিশ্বাসে আপনাকে মনে রেখে সুষ্ঠু বিচারের জন্য আপনার কাছে আবেদন জানিয়েছে, আপনি কি পারবেন না সেই বিশ্বাসটুকুর প্রতিদান দিতে?
ইতি
-আপনার কোনো এক ধর্ষিতা কন্যা
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি'র ফেসবুক থেকে