শেম অন দিলদার!
প্রকাশ | ০৮ মে ২০১৭, ২৩:২৪
আচ্ছা, ধর্ষক কি গাছ থেকে পড়ে? আসমান থেকে নাজিল হয়? কোন মায়ের বুকের উম, বাবার আদর ওরা পায় না? কেন আমার এতো চেনা লাগে ওই মুখগুলো! ওখানে কি আছে আমার ডালিম কুমার, রূপকুমার? না না, তা কী করে হয়? ওরা আমার সোনার ছেলে। ওরা আমার বুক জুড়ে থাকে, জড়িয়ে ধরে রাখে। আমার বুকের ওমে ঘুম ভাঙ্গে ওদের, ঘুমিয়ে পড়ে আমার বুকে। তবে মধ্যরাতে বিকৃত যৌনতার নীল উল্লাসে মেতে উঠা ওই ছেলেমেয়েগুলো, ওরাই বা কারা? ধর্ষক সন্তানের জন্য সাফাই গাওয়া বাবারা কেমন করে পিতা হয়?
যে বাবার সন্তান ধর্ষক হয়, নারী নিপীড়ক হয়, সে বাবা কেমন করে নিজেকে আয়নায় দেখে? যে মায়ের গায়ে ল্যাপ্টানো ছেলে অন্য মেয়ের 'সম্ভ্রমহানি' করে, সে মা নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করে? যে সন্তানের জন্য দশ দুয়ারী ভিখেরির মতো কুড়িয়ে কুড়িয়ে ভালোবাসা আর সচ্ছলতা জমিয়ে রেখেছি আমরা, সেই সচ্ছলতা কেন লাম্পট্যের ছুরি হয়ে আমাদের রক্তাক্ত করে, পোড়ায়? কেন, আমাদের দরজার এপাশে রেখে ওপাশে হারিয়ে যায় বিকৃত যৌনতার চোরাগলিতে? তবে কী হিসেবে কোথাও ভুল ছিল? সমস্যাটা কি আমাদের কর্মফলে?
ভুল তো হয়েই ছিল। আমরা সন্তান জন্ম দিয়েই ভেবেছিলাম মা হয়ে গেছি, বাবা হয়ে গেছি? কিন্তু এই 'মা' হওয়াটাই, বাবাগিরিতেই ছিল মস্ত বড় শুভঙ্করের ফাঁকি। সন্তান গর্ভে ধারণ করা, যথাসময়ে জন্ম দিলে সবাই ‘মা' বা 'বাবা' বলে হয়তো। কিন্তু 'মাতৃত্ব', 'পিতৃত্ব'!!! তার যে অনেক দায়! মাতৃত্ব মানে প্রাণের সাথে প্রাণের প্রেম, প্রাণ থেকে প্রাণের শুরু…এ এক অপার্থিব জীবন আবেদন। পিতৃত্ব মানে সন্তানের প্রাণের সাথে পিতার প্রাণের যোগাযোগ। সে যোগাযোগই না করতে পারলে কিসের মা হওয়া, কিসের বাবা হওয়া !
সন্তানের ভাষা বুঝতে না পারলে, সন্তানের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারলে, সন্তানের জন্য কোনও আদর্শ তৈরি করতে না পারলে কিসের পিতৃত্ব? ধর্ষক সন্তানের জন্য প্রশাসন কিনে, সন্তানের সামনে নেশার দিগন্ত খুলে দিয়ে, স্বেচ্ছাচারিতার বাঁধ খুলে দিয়ে কোন মাতৃত্বের, পিতৃত্বের বড়াই করি আমরা?
শেম অন দিলদার! শেম অন জেনারেল! পয়সা দিয়ে কিছুই কিনতে পারেননি জীবনে আপনারা। সাহস থাকলে এখনো সন্তানের সামনে পিতা হয়ে দাঁড়ান। সন্তানকে নষ্ট না করে তাদের শোধন করুন। আয়নায় নিজেকে দেখুন।
সাদিয়া নাসরিন এর ফেসবুক থেকে