তোমরা যারা নিজেদের কালো বলে অসুন্দর ভাবো!
প্রকাশ | ০৩ মে ২০১৭, ১৮:০৭
মেয়েটি আমার বান্ধবী, কেউ প্রথম দেখায় তাকে সুন্দর বলত না। এই সমাজের অসুন্দর হওয়ার সকল যোগ্যতা তার ছিল। ছিল তার শ্যাম বর্ণ। ব্যাস হয়ে গেলো সে অসুন্দর অযোগ্য অগ্রহণযোগ্য। সমাজের চোখে প্রথম শ্রেণির সুন্দরী, আমারই আরেক বান্ধবী আমার এই অসুন্দর বান্ধবীর ছবি দেখে রীতিমত চোখ কপালে তুলে আমাকে প্রশ্ন করল “এই মেয়ে তোর বান্ধবী”? রাগ সামলে বিরক্ত প্রকাশ করতেই সে বুঝল বেশি কথা বললে আমিই তার বান্ধবী থাকব না আর!
কিন্তু সেই অসুন্দর মেয়েটির ছিল অদম্য সাহস মেধা আর মনোবল। সে ঠিক ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ের টপ করে যায় পরিবারের সাহায্য ছাড়াই। এক স্বনামধন্য এনজিওতে নিজ যোগ্যতায় চাকরি নিয়ে এখন সে উচ্চ পদে আসীন। শ্যাম বলে অনেকেই তাকে সহজলভ্য ভাবত, দুর্বল ভাবত। যেন ডাকেলেই চাকরি বাঁচাতে ধেই ধেই করে চলে যাবে। সে ইস্পাতের মত শক্ত ছিল। তার এই আপোষহীন চেতনা তাকে পৌঁছে দেয় সেই স্থানে যা তার প্রাপ্য।
না সে এখানেই থেমে নেই। সে একজন সফল উদ্যোক্তা বর্তমানে। তার অনলাইন শপ এখন অন্যদের চাকরী পাওয়ার স্থান। তার অধীনে এখন অন্যরা কাজ করে। সে তাদের বেতন দেয়। পরিবার চলে তার অধীনে কাজ করা লোকদের।
খুব কি সহজে সে সব পেয়ে গিয়েছিল? না। বরং কঠিন ছিল তার পথ অন্যদের চেয়ে। তাকে প্রতি পদে পদে তার যোগ্যতার প্রমাণের পাশাপাশি প্রমান দিতে হয়েছে যে সে অসুন্দর না। এই সফল জীবনের প্রতিটি বাঁকে তার দিকে সবাই আঙ্গুল তুলেছে, তার চেহারার দিকে আঙ্গুল তুলেছে, তার গায়ের রঙের দিকে আঙ্গুল তুলেছে, তার নারীত্বের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। সে সবকয়টা আঙ্গুল শুধু বাঁকিয়েই দেয় নি, ভেঙেও দিয়েছে।
সে কেন পেরেছে এসব জানো? কারণ সে নিজেকে অসুন্দর ভাবত না। একবারও ভাবে নি তাকে দিয়ে কিছু হবে না। ভেবেছে, তাকে পারতেই হবে। সমাজের চোখে সুন্দর হওয়ার চেয়ে সে নিজের কাছেই সুন্দর হয়েছে। নিজের জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়েছে। যে জীবন অনেক তথাকথিত সুন্দরীরা গড়তে পারে না। বরং সুন্দর ধুয়ে অন্যের পায়ে কাছে পড়ে থাকে।
তোমরা যারা নিজেকে কালো বলে অসুন্দর ভাবো, ভাবো তোমাদের দ্বারা কিছু হবে না তারা আগে নিজেদের সুন্দর ভাবতে শিখো। সৌন্দর্য অন্তরে, তৃপ্তিতে, আত্মমর্যাদায়। সুন্দর হতে তোমার ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি লাগবে না। লাগবে দুইবেলা সাহস, তিনবেলা আত্মবিশ্বাস, আর চব্বিশ ঘণ্টার মনোবল।