আমাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে
প্রকাশ | ০২ মে ২০১৭, ২১:৫৩
পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ স্বামী আছে। খারাপ স্ত্রীও অগণিত। কিন্তু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে খারাপ পিতা একটিও নেই, নেই কোন কু-মাতা। দুনিয়ার সব সন্তানের কাছে তার বাবাটিই শ্রেষ্ঠ, তার মায়ের মতো আর কেউ নয়। অথচ আমাদের দাম্পত্য হিংসা বিদ্বেষে তুরুপের তাসের মতো জিম্মি হয়ে যাচ্ছে আমাদের সন্তানরা।
দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর সন্তানের কাস্টডি মামলা করে মায়ের বুক থেকে সন্তান কেড়ে নেয় হিংস্র পুরুষরা, মায়ের কান্না ইথারে বিথারে ভেসে বেড়ায়। আবার অনেক নারীও শুধুমাত্র নিজের ইগোর জন্য, প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে বছরের পর বছর সন্তানকে পিতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেন, বাবাকে সন্তানের সাথে দেখা করতে দেন না, বাবার কিনে দেওয়া উপহারটুকুও ছুঁয়ে দেখতে দেন না। সে বাবার বুকেও পাথর চাপা বিবর্ণ ঘাসের মতো কান্না লুকিয়ে থাকে।
সন্তান ফিরে পাওয়ার জন্য স্ত্রীর পায়ে ধরে বহুবার কেঁদেছে এক বাবা। মন গলেনি সে নারীর। চাইলেই ভদ্রলোক কাস্টডি মামলা করতে পারেন। কিন্তু বাচ্চাদের মা হারা করতে চান না বলে তা না করে বছরের পর বছর ধনুকভাঙ্গা অপেক্ষায় আছেন, যদি কোনদিন তার সন্তানের মায়ের মনে দয়া হয়!! পিতা সন্তানদের কাছে পেতে চান, সন্তানরাও তাদের বাবাকে চায়। কিন্তু মা চায় না পিতা-পুত্রের মিলন। মা মনে করেন সন্তান কেড়ে নেয়াটাই উনার উপযুক্ত শাস্তি। কি ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা ! কি নির্মমতা!! মানুষ এতো নির্মম হবে?
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা ছাড়া কোন সন্তান জন্ম নেয় না, নিতে পারে না। হতে পারে খুবই ক্ষণস্থায়ী, খুবই পেশাদার, তবুও ভালোবাসাবাসির সুন্দর সেই মুহুর্তের মাঝেই ওরা আসে আমাদের জীবনে। পরম করুণাময় দয়া করেন বলেই ওরা এসে আমাদের যৌথ খামারে গোলাপ ফোটায়, পাখি ডাকায়। বিশ্বসংসারের সব আলো জ্বালিয়ে ওরা আমাদের জীবনটা আলোকিত করে রাখে। আর আমরা সেই আলোর টুকরো, ফুলের হাসি গুলোকে তছনছ করি আমাদের বিষাক্ত দাম্পত্যের ঝড়ে।
আমাদের অসুস্থ অনিয়ন্ত্রিত দাম্পত্যের রেষারেষিতে যখন আমরা সন্তানের সামনেই তাদের মাকে বেশ্যা ডাকি, সন্তানের সামনে বাবাকে লম্পট বলে প্রমাণ করি তখন আমাদের নৈতিক অবস্থানও যে তাদের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় তা কি একবারও ভাবি? যে সন্তান মা বাবার পারষ্পরিক চরিত্রহননের প্রক্রিয়ার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে কি পরিমাণ নিরাপত্তাহীনতার ভেতরে বড় হতে থাকে তা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। একটু ব্যক্তিত্ব, একটু মানবিক বোধ দরকার হয়।
হতে পারে আপনার স্ত্রী আপনার প্রতি বিশ্বস্ত নয়। হতে পারে আপনার স্বামী বহুগামি। কিন্তু ভুলে যাবেন না, এই অবিশ্বস্ত মানুষটি কিন্তু আপনার সন্তানের মা/বাবাও। কোনভাবেই তাকে সন্তানের অধিকার বঞ্চিত করার অধিকার আপনার নেই, নেই সন্তানের সামনে তাকে ছোট করার অধিকার। বিশ্বাস করুন, এই মানুষটির সম্মানের সাথে আপনার সন্তানের সম্মান, ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস নির্ভর করে। তাই শুধুমাত্র ইগোর জন্য সন্তানের সামনে তার বাবা/মাকে অপমান করে নিজেকে ছোট করবেন না প্লিজ।
ভুলে যাবেন না, শিশুদেরও নিজস্ব বিবেচনাবোধ আছে। আজ হয়তো আপনি যা বোঝাচ্ছেন তা সে মেনে নিচ্ছে, কিন্তু কাল সে ঘুরে দাঁড়াতে পারে আপনার দিকেই। মনে রাখবেন, মায়ের কোল এবং বাবার ঘাড় ছাড়া কোন সন্তান বিকশিত হয় না। কেবল শরীরে বড় হয় বা অতিজোর কিছু 'পরীক্ষা পাশ' করতে পারে। তাই জেদের বশে সন্তানকে বাবার সাথে দেখা করতে না দেয়া কিংবা হেডম দেখানোর জন্য সন্তানের কাস্টডি নেয়ার চর্চা বন্ধ করুন। সন্তানকে জিম্মি করা থামান। এখুনি।
নিজেদের অসুস্থ দাম্পত্যে সন্তানকে না জড়িয়ে তাকে দুজনের পক্ষে যতটুকু সম্ভব কোয়ালিটি সময় দিন। যদি একেবারেই সম্ভব না হয় তাহলে তাকে বুঝিয়ে বলুন যে, আপনাদের ভেতরের অমিল যেনো তার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে তার জন্য আপনারা দুজনেই কন্সার্ন। তাকে নির্ভরতা দিন, যেন কোনভাবেই সে নিজেকে আপনাদের জীবনে 'ঝামেলা' মনে না করে। সন্তানকে ভালোবাসুন, তার বাবা/মাকেও সম্মান করুন। থাকুক তার সাথে আপনার যতো দুরত্ব। সন্তানের স্বার্থই সর্বোত্তম স্বার্থ এই সত্য মেনে নিন।
আমাদের সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে...
সাদিয়া নাসরিন এর ফেসবুক থেকে