মেয়ে নিজের পরিচয়ে পরিচিত হও
প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০১৭, ২১:২৮
ইদানিং ফেসবুকের খুব কমন পোস্ট হলো স্বামী নিয়ে আদিখ্যেতা। স্বামী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা কোনো ইউরোপিয়ান দেশে থাকলে ঐ মেয়েকে আর পায় কে? আবার আরেক দল আছে বাবাকে নিয়ে গর্বিত। এবং এতো বেশি গর্বিত যে বাবাকে বাদ দিলে তাদের নিজেদের যোগ্যতা কী সেটাই ভুলে যায়। এসব মেয়েকে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, "আচ্ছা তোমার প্রতিষ্ঠিত স্বামীটি যদি তোমাকে কখনও ছেড়ে দেয় তখন কী করবে অথবা তোমার স্বনামধন্য বাবার সম্পদ ছাড়া তুমি কী নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে?"
আমাদের মেয়েদের জীবন কাহিনীটা খুবই করুণ। আমরা বিয়ের আগে থাকি বাবার বাড়িতে, বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে, ছেলে বড় হওয়ার পরে ছেলের বাড়িতে। এভাবেই জীবনটা কেটে যায়। কখনও আমাদের নিজের বাড়ি হয় না। অথচ, প্রতিটা সংসারই গড়ে উঠে আমাদের হাতের ছোঁয়ায়। এর জন্য মেয়েরাই একমাত্র দায়ী। কারণ, আমাদের অজ্ঞতা। আমরা যখন বাবার ঘরে থাকি তখন বাবার পরিচয় নিয়েই গর্বিত থাকি। বাবার টাকায় নিজের শপিং, পড়াশুনা এমনকি ডেটিং করি। বাবা টাকা খরচ করে বিয়ে দিবে এই আশায় বিয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকি। বাবা যদি শরীরের শেষ রক্তবিন্দুটুকু বেচেও বিয়ে দেয় এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকে না। বাপ-ভাইকে নিঃস্ব করে বিয়ে করতেও আমাদের দ্বিধা নেই।
আর বিত্তশালী পিতার মেয়েদের কথা কী বলবো! বাবার মর্যাদায় তাদের অনেকের অহংকারের সীমা থাকে না। কিছু ব্যতিক্রমধর্মী মেয়েও আছে যারা বাবার সম্পদের তোয়াক্কা করে না। কিন্তু কিছু কিছু মেয়ে একটা উচ্চপদস্হ স্বামী জোটানোর জন্য কত যে ছলাকলা করে তা বলে শেষ করা যাবে না। এই ধরনের মেয়েদের জন্য সমাজটা পরিবর্তন হচ্ছে না। এবং হবেও না। কারণ, আমাদের সমাজের ৯৫ শতাংশ মেয়ে এখনও বাবা অথবা স্বামীর পরিচয় নিয়েই গর্বিত। তাদের নিজেদের কী আছে সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। স্বামী ছেড়ে দিলে অথবা বাবা মরে গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই ভাবনাটা নেই।
আমার কেবল একটাই কথা আমি কেন অন্যের পরিচয়ে পরিচিত হবো? আমার তো যোগ্যতা আছে তবে কেন আমি বাবা অথবা স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হবো? প্রতিটা মেয়ের কাছে একটাই অনুরোধ এমন কিছু করো যাতে তোমাদের স্বামী এবং বাবা সকলের কাছে গর্ব নিয়ে তোমার গল্প করতে পারে। এমন কিছু করো যাতে তোমার পরিবারকে মানুষ তোমার নামে চিনে। স্বামী অথবা বাবা কেবল আমাদের গর্ব হোক সর্বস্ব না।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়