সৌন্দর্য মানে নিজেকে পণ্য করা না
প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০১৭, ২১:৪৫
আমার মনে আছে, একবার নাইজেরিয়ার একটা মেয়ে ‘বিশ্বসুন্দরী’ হয়েছিল। স্কুলে আমার ক্লাসের ফর্সা বান্ধবী এসে বলল- কালো বড় বড় দাঁতওয়ালা একটা টিংটিঙে মেয়ে এবারের বিশ্বসুন্দরী হয়েছে! বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা কমিটির লোকদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
এদেশের বেশীরভাগ মেয়েই নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে। তাদের মতে কালো, বেঁটে, মোটা, ফাক ফাক দাঁতওয়ালা মেয়েদের কেউ বিয়ে করবে না। কাজেই কালো, বেঁটে, মোটা, ফাঁকা দাঁতওয়ালা মেয়েটি যতই পড়াশুনা জানা হোক, শিক্ষিত হোক, বিদুষী হোক তার দাম সবসময়ই ফর্সা, পড়াশুনা না জানা, পুতুলের মতো একটি মেয়ের চেয়ে নীচে থাকবে!
মেয়েদের মধ্যে এই ভাবনাটা ঢুকে যায় ছোটবেলা থেকেই। ছোটোবেলা থেকেই বারবি, ডিজনি প্রিন্সেস দেখে দেখে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বলতে গায়ের দাগহীন সাদা রঙ, মসৃণ চুল, গোলাপি ঠোঁট- এগুলিই সৌন্দর্যের স্কেল ধরা হয়। সাথে আছে ফেয়ার এন্ড লাভলি’সহ যাবতীয় ক্রিম আর পাউডারের বিজ্ঞাপন।
আমার ছোটোভাবীকে দেখতে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন আমার মা। আমি আমার মায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম- ছেলের বৌকে কেমন দেখলে?
তিনি বলেছিলেন- মেয়েটার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে মেয়েটা সাধারণ। মুখে ভারী মেকআপ লাগিয়ে গালের দাগ আড়াল করেনি, অথবা তিন ইঞ্চি হীল পরে নিজেকে অতি লম্বা দেখাতে আসেনি। সে যা, তাই হিসেবেই এসেছে। অসম্ভব মেধাবী একটি মিষ্টি মেয়ে!
সৌন্দর্য নিয়ে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদের নিজেদের ধারণা বদলানো জরুরী। নিজে গায়ের রঙ ফর্সা করার জন্য দিনান্ত মুলতানি মাটি মেখে, উপটান মেখে, ফেসিয়াল করে সারাদিন পুরুষের দোষ দিয়ে চলবে তা হবেনা। তুমি না বদলালে পুরুষও বদলাবে না।
যাকে ভালবাসা যায় তার সবই সুন্দর লাগে, আর যাকে ভালবাসা যায়না তার কিছুই সুন্দর দেখায় না। সৌন্দর্য মানে নিজেকে পণ্য করে তোলা না, নিজেকে অনন্য করে তোলা! মনে থাকবে?
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি'র ফেসবুক থেকে