সতীচ্ছেদ যখন ‘সতী’ হওয়ার একমাত্র সাইনবোর্ড!
প্রকাশ | ১৪ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:১৩ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭, ২০:০৯
হায়মেনোপ্লাষ্টি কি জানেন?
নানারকম খেলাধূলা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো কিংবা যারা নিয়মিত নাচানাচি করেন, অথবা শারিরীক কসরত করেন, সেইসব অনেক তরুণীর কিশোরী অবস্থায় হাইমেন বা সতিচ্ছেদ ছিন্ন হয়ে যায়! একটি বিশেষ অপারেশনের মাধ্যমে সেই ছিন্ন হয়ে যাওয়া সতিচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করার নামই হায়মেনোপ্লাষ্টি।
ভারতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে হায়মেনোপ্লাষ্টি। মন্তব্য চিকিৎসকদের। কিছুদিন আগে হায়দরাবাদে এক দম্পতি তাদের মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হন। মেয়েটি নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলার ফলে তার সতীচ্ছেদ ছিন্ন হয়ে গেছে, সামনেই তার বিয়ে, শ্বশুরবাড়িতে যাতে মান সম্মান নিয়ে টানাটানি না হয়, সেজন্যই পুনরায় কুমারিত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য মা বাবার এই প্রয়াস!
তবে হায়দরাবাদের এই ঘটনা দেশের মধ্যে বিরল নয়। সারাদেশ জুড়ে এরকম ঘটনার অজস্র উদাহরণ রয়েছে। হায়দরাবাদের সানসাইন হাসপাতালের প্লাষ্টিক সার্জেন ডা. ভবানী প্রসাদ বলেছেন তিনি বছরে গড়ে প্রায় ৫০টি হায়মেনোপ্লাষ্টি করেন!
ভাবতে অবাক লাগে, আজ ২০১৭ তে দাড়িয়েও আমাদের দেশের ৯৮% মা-বাবা নিজে এবং মেয়েটিকেও ভাবতে বাধ্য করাচ্ছেন বৈবাহিক জীবনের পূর্ব শর্তই হল যেনতেন ভাবে নিজেকে কুমারী প্রমাণ করা! অথচ কখনও তাদের শেখাতে দেখা যায় না, স্বামী ঠিকঠাক আচরণ না করলে মেয়েটিকে কী করতে হবে? তার পরিবার অত্যাচার করলে কী করতে হবে? স্বামী পরনারীতে আসক্ত হলে কী করতে হবে? ডিভোর্স চাইলে কী করতে হবে? যৌতুক চাইলে কী করতে হবে? কথায় কথায় গলাধাক্কা, মারধর, গালাগাল করলে কী করতে হবে? যৌনচাহিদা মেটাতে অক্ষম হলে কি করতে হবে?
আমাদের দেশে ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের কুমারিত্বের অগ্নিপরীক্ষা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়। এই সমাজের পুরুষ এবং তাদের পতাকাবাহী নারীদের কাছে সতীত্ব (virginity) একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, এ শব্দটি শুধুমাত্র নারীর জন্য। সতী নারী মানে কুমারী নারী, যে নারীর যোনী কোন পুরুষের স্পর্শ এখনো পায়নি। বেশীরভাগ পুরুষেরা নিজে নিয়মিত বেশ্যালয়ে অথবা একাধিক যৌনসম্পর্কে লিপ্ত থাকলেও বিয়ে করার সময় নিজে এবং তার পরিবারের লোকজন সতী-সাবিত্রী মেয়ে খুঁজেন। অনেক ছেলেবন্ধু থাকা, পূর্বপ্রেম থাকা মেয়েদের থেকে বিবাহ উপযুক্ত ছেলেরা সদা সতর্ক। সে তার নিজের যতই মেয়েবন্ধু বা পূর্বপ্রেম থাকুক না কেন! ফুলশয্যার রাতে স্বামীটি তখনই সবচে’ সুখী হয়, যখন বিছানার চাদরে রক্তের দাগ খুঁজে পায়। অনেক সময় দেখা যায় পরদিন সকালে পরিবারের বয়স্ক নারী সদস্য কেউ কেউ ও বিছানায় দাগ পড়েছে কিনা খুঁজতে আসেন! বউয়ের সতীত্বের প্রমাণ খুঁজে পেতে মরিয়া এইসব নারীরা, স্বামীটির সতীত্বের পরীক্ষা নিতে কিন্তু আসেন না। খুঁজতে আসেন না স্বামীটি সতী কিনা? তার পুরুষাঙ্গটি কোনো নারীর যোনি স্পর্শ করেছিল কিনা?
সতীত্ব রক্ষা শব্দটি এই সমাজব্যবস্থার পুরুষেদেরই তৈরি। পুরুষেরা কি নিজের জন্য এমন অস্বস্তিকর অপমানকর কোনও ব্যবস্থা নিতে রাজি হবেন? কখনোই না, উল্টে মুখে বেশ্যা, মাগি গালাগাল নিয়ে তেড়ে আসবেন! কারণ এই সমাজের পুরুষ এবং তাদের পতাকাবাহী কিছুসংখ্যক মগজ ধোলাই হয়ে যাওয়া নারীর কাছে, সতীত্ব শুধুমাত্র যোনিতেই সীমাবদ্ধ। পুরুষাঙ্গে এর কোন অস্তিত্ব থাকে না।
পুরুষতন্ত্রের পতাকাবাহী সেইসব মা এবং মেয়েদের বলছি, সতীত্বের মতো একটা ফালতু কনসেপ্টকে সমাজে টিকিয়ে রাখতে চাইলে রাখুন আপনারা। তবে শুধু নারীদের জন্য নয়, পুরুষদের চারিত্রিক বিচারের জন্যও সতীত্বকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শুরু করেন এখন থেকে। নিজের মেয়েকে শিখিয়ে দিন, ফুলশয্যার রাতে সেও যেন স্বামীটির সতীত্বের পরীক্ষা নেয়। আর যদি এটা না করতে পারেন তবে সতীত্বের মত একটা অপ্রয়োজনীয়, মধ্যযুগীয় কনসেপ্টকে মন থেকে ছুঁড়ে ফেলেন। ভাবতে শুরু করেন, সতীত্ব বলে কোন জিনিস কোথাও নেই, ছিলনা এবং থাকবেও না। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচুন। নিজেকে সম্মান করতে শিখুন। নিজেই যদি নিজেকে সম্মান করতে না পারেন, পৃথিবীর লোক বাড়ি বয়ে সম্মান পৌছে দিতে আসবে না আপনাদের!