বুক উঁচু করে হাঁটার অপর নাম মেরুদণ্ড সোজা রাখা
প্রকাশ | ১৩ মে ২০১৬, ১৪:৪৩ | আপডেট: ১৩ মে ২০১৬, ১৪:৪৫
ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন। সবেমাত্র বক্ষবন্ধনী যার ইংরেজি নাম ব্রা, সেটা পরা শুরু করেছি। একদিন খেয়াল করলাম পিঠ চাপড়ে দেওয়ার ছলে আমার মাষ্টারমশাই সেখানে হাত দিয়ে তার আঙুল কিলবিল করাচ্ছেন। আমার মা শিখিয়েছেন শিক্ষক গুরু, তাঁকে স্যার বলবে, বাবা-মা’র চেয়েও ভক্তি করবে...আর তিনি কিনা এমন গা ঘিনঘিনেভাবে একটা জায়গায় হাত রেখেছেন? আমি সেদিন কিছু বলিনি। বলেছি- স্যার আমার পানির তেষ্টা পেয়েছে। উঠে গিয়েছি টেবিল থেকে। এরকম আরও তিন চারবার দেখেছি- আমি লিখছি, উনি আমার পিঠে হাত দিয়েছেন। উনার ঘিনঘিনে আঙুলগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে ব্রা’র হুকে।
সমস্যার কথা পেটের মধ্যে চেপে আমি রাখতে পারিনা। ক্লাসে গিয়ে বান্ধবীদের সাথে বললাম এই সমস্যা। দেখা গেল সমস্যা শুধু আমার একার নয়। আরও অনেকেই আছে যাদের শিক্ষকরা নানা অজুহাতে শরীরে হাত দেয়। এক বান্ধবী জানাল- সে তার মা’কে বলার পর তার মা তাকে ইঁচড়েপাকা, পাকুনি হয়েছিস...ইত্যাদি বলেছেন, গালাগালও দিয়েছেন।
আরেকজনের মা বলেছেন- বুক উঁচু করে হাঁটিস কেন, ঝুঁকে হাঁটবি। বেহায়ার মতন হাঁটলে তো এসবই হবে!
বান্ধবীদের মায়েদের এসব শুনে মনে মনে একটু দমে গিয়েছিলাম। তবুও মা কি বলবেন তা না ভেবেই একরাশ জড়তা নিয়ে সমস্যার কথা খুলে বলেছিলাম আমার মা’কে। বলেছিলাম- স্যার লোকটা বাজে, বলেছিলাম- স্যার লোকটা পিঠে হাত দেয়, আমার গা ঘিনঘিন করে। আমার মা বন্ধুর মতন শুনেছিলেন। অবাক গলায় বলেছিলেন- এই কয়দিন সহ্য করলে কেন! আগেই জানাওনি কেন! পরেরদিন থেকেই সেই স্যার আউট। একটিবারও বলেননি আমি পাকনামি করছি, একটিবারও বলেননি- আমি বেহায়ার মতন বুক উঁচু করে হাঁটি!
অনেকদিন পর আজ যখন অধিকার নিয়ে এতো সচেতন হয়েছি তখন বুঝতে পারি- আমার মা আসলে কি শিক্ষা দিয়েছেন। কিভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে চলতে হয় সেটা শিখিয়েছেন। কারণ, বুক উঁচু করে হাঁটার অপর নাম মেরুদণ্ড সোজা রাখা, অন্যায় না মানা!
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি’র ফেসবুক থেকে