ভালবাসা এক যৌক্তিক যু্ক্তিহীন আবেগ
প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৫৯ | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:০৪
ভালবাসা সর্ব বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত এক মাতলামি, এক উন্মাদনা, এক যৌক্তিক যুক্তিহীন আবেগ।
যৌক্তিক কারণে মানুষ ভালবাসে, আবার অযৌক্তিকতায় মানুষ ভালবেসে ফেলে।
ভালবাসাকে নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করতে গেলে শুধু ভুলই না, চরম অন্যায়ও করবেন। একজনের কাছে যেটা ভালবাসা আপনার কাছে হয়তো সেটা বোকামি। আবার আপনার কাছে যেটা ভালবাসা আরেকজনের কাছে হয়তো সেটা পাগলামি। একজনের কাছে যেটা ভালবাসার চরম পর্যায়, আপনার কাছে সেটা হয়তো নোংরামি। আমার কাছে যেটা ভালবাসার বাধ্যতামূলক বহিঃপ্রকাশ, আপনার কাছে হয়তো সেটা হাস্যকর।
ভালবাসাকে নিশ্চিত নিজের করে পাবে জেনেই অনেকে নিশ্চয়তায় ভালবাসে, ভালবাসাকে কোনদিন পাবে না মেনে নিয়েও মানুষ ভালবাসে।
নিজের শত কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কেউ নিজের ভালবাসার মানুষটাকে সুখী দেখতে অন্যের হাতে তুলে দেয় অথবা অন্যের হয়ে যাওয়া মেনে নেয় এটা যেমন ভালবাসা, ঠিক তেমনি নিজের ভালবাসার মানুষটা নিজের হবে না অথবা অন্যের হয়ে যাবে এটা মানতে না পেরে ভালবাসাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসাটাও ভালবাসা।
ভালবাসার মৃত্যু নিজের জীবদ্দশায় দেখতে হবে সেটা কিছুতেই মানতে না পেরে নিজের জীবন দিয়ে ভালবাসাকে বাঁচানোটা যেমন ভালবাসা, ঠিক তেমনি ভালবাসা নিজের জীবদ্দশায় আমাকে ছাড়া বেঁচে থাকবে এটা মানতে না পেরে ভালবাসাকে সাথে নিয়ে মরে যাওয়াটাও ভালবাসা।
ভালবাসা যা করে তাই মেনে নেয়াটা যেমন ভালবাসা তেমনি ভালবাসাকে ভুল পথ থেকে শুধরে আনাটাও ভালবাসা।
ভালবাসায় উদারতাও থাকে, ভালবাসায় হিংসাও থাকে। ভালবাসায় মায়াও থাকে, ভালবাসায় ঘৃণাও থাকে।
ভালবাসাকে হারানোর ভয়ে কেউ একটু ঝামেলা হলেই লাল চোখে রাতদিন এক করে ফেলে। ভালবাসা আমাকে ছেড়ে যাবে কোথায় এই নির্ভরতায় শত ঝামেলা হলেও কেউ নাক ডেকে ঘুমায়।
ওকে ভাল রাখতেই নিজেকে ভাল থাকতে হবে এটা যেমন ভালবাসা, ঠিক তেমনি ওকে কষ্ট দিতেই নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিব এটাও ভালবাসা।
এক মিনিটও ভালবাসার সাথে কথা না বলে থাকতে না পারাটাও যেমন ভালবাসা, তেমনি প্রচন্ড অভিমানে সারাজীবনের জন্য ভালবাসার সাথে বিচ্ছেদ ঘটানোটাও ভালবাসা।
ভালবাসার মানুষটার যেকোন ভুলে সাথে সাথে তার সাথে ঝগড়া করাটা যেমন ভালবাসা, তেমনি অভিমান পুষে রেখে নিশ্চুপ থাকাটাও ভালবাসা।
ভালবাসলে ভালবাসায় সবই হয়, ভাল না বাসলে কোনকিছুই ভালবাসা নয়।
মানুষ ভালবাসে মন দিয়ে। আর মন বড়ই বিচিত্র। এ মন বায়বীয়। যাকে ধরাও যায় না, ছোঁয়াও যায় না। প্রকৃতির বায়ুর মতই কার মন কখন কোনদিকে বয়ে বেড়াবে তা কেউ জানে না। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া পূর্বাভাস যেমন কখনো কখনো পুরো বিপরীত হয়ে যায়, তেমনি মনকে কোন পথে চালাব সেই নিয়মতান্ত্রিক সিদ্ধান্তও কখনো কখনো পুরো উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে।
ভালবাসা যদি এত বিচিত্র অনুভূতিই না হবে তাহলে আদি হতে এ পর্যন্ত ভালবাসার এত এত আলাদা আলাদা ইতিহাস কেন হবে?
ভালবাসায় যদি এত ভিন্নতা না থাকবে প্রত্যেকটা মানুষের হাতের ছাপ কেন ভিন্ন হবে?
কিন্তু তোমাকেই বুঝতে হবে কোনটা সত্যিকারের ভালবাসা, কোনটা মিথ্যা অভিনয়, কোনটা সাময়িক মোহ, কোনটা আজীবনের দ্রোহ।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভালবাসলে তুমি অন্ধ হয়ে যাও, সত্য-মিথ্যা বিবেচনার যোগ্যতা হারাও। তোমার জন্য সুখবর হচ্ছে এইটাও ভালবাসা।
তুমি নিশ্চিন্তে ভালবাসতে থাকো। যে প্রতারনা করবে সে ভালবাসা হারাবে, ঠকবে সে। আর তুমি দিনশেষে অভিজ্ঞ হবে, জ্ঞানের ঝুলিটা বড় হবে। বেঁচে থাকার কারণে বেঁচে থাকবে অথবা বেঁচে থাকার হাজারটা নতুন কারণ জন্ম নিবে।
কিন্তু ভালবাসার আবেগের সাথে সাথে একটু বিবেচনাবোধও তোমার থাকতে হবে। যাতে মানুষের কাছে চরম ঘৃনিত হওয়ার মত কাজটা করতে বাধ্য হওয়ার আগে তুমি সাবধান হতে পার। এটুকু বিবেকবোধ তোমার মধ্যে আছে। শুধু সেই বিবেককে অলসতায় ঘুমাতে না দিয়ে তাকে চর্চার মাধ্যমে সদাজাগ্রত রাখতে হবে। কারণ ভুলটা তখনই হয়ে যায় যখন বিবেক নাক ডেকে ঘুমায়। ভালবেসে প্রতারিত হলে, প্রতারককে কোপাতে মন চাইলে মানবতার খাতিরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ তোমাকে করতেই হবে। এজন্যই তুমি মানুষ,আর সে প্রতারক।
সমাজ যতই নিন্দিত চোখে দেখুক না কেন, বেঁচে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে বাধ্য হয়ে নিজেকে হত্যা করাটাও ভালবাসা। সেই ভালবাসায় জিতে যাও তুমি। আর হেরে যায় দুই দল-যারা তোমাকে ভালবাসেনি এবং যারা তোমাকে নিঃস্বার্থে ভালবেসেছে (পরিবার/বন্ধু/শুভাকাঙ্খী)। যারা তোমাকে ভালবাসে তাদের হারিয়ে দেয়াটা তোমার অন্যায়, স্বার্থপরতা, অকৃতজ্ঞতা। তাই যারা তোমাকে সত্যিকারের ভালবাসে তাদের জিতিয়ে দিতে তোমাকেও জিততে হবে মৃত্যুকে হারিয়ে দিয়ে।
আর যারা ভালবাসেনি তাদের হারাতে হবে তোমাকে ভালবাসেনি বলে অনুতপ্তের দহনে পুড়িয়ে। সেজন্য নিজেকে পৌঁছাতে হবে সেই বেদীতে যেখানে পরাজিতরা (যারা ভালবাসেনি) নিচ থেকে ঘাড় উপরে তুলে তোমাকে দেখবে। আর জয়ীরা (যারা ভালবেসেছে) তোমার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে।
ভাল থাকুক অণু-পরমাণু আবেগটুকুও, বেঁচে থাকুক সরষে পরিমান ভালবাসাটুকুও।
হেরে যাক তিল পরিমান কপটতাটুকুও, ধূলিস্যাৎ হোক মিথ্যে অভিনয় ক্ষমতার অদৃশ্য জীবাণুটুকুও।