এরাও সেই প্রাচীনকালের সিরিলের ভূত
প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:১৮
মেয়েদের একটা স্কুল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পোড়া স্কুলের মেয়েরা হাউমাউ করে কাঁদছে- এরকম একটা ছবি গতকাল টাইমলাইন জুড়ে ছিল। সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে- দুর্বৃত্তরা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে স্কুল। এই দুর্বৃত্ত কারা সেটা কোথাও লেখা হয়নি!
ঠিক ৪০০ খ্রিষ্টাব্দে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীর শেষ গবেষক হাইপেশিয়া নামের মেয়েটিকে কুটি কুটি করে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল এরকম কিছু দুর্বৃত্ত। তারা কারা ছিল জানেন? সেইসময়ে খ্রিস্টধর্মের ধর্মগুরু সিরিল আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা হাইপেশিয়াকে খুবই ভয় পেতো। কারণ হাইপেশিয়া পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান আর জ্যামিতিতে এতো বেশি পণ্ডিত ছিলেন যে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ তাঁর লেকচার শুনতে আসতো। মানুষজনের বুদ্ধি বেড়ে গেলে এসব ধর্মান্ধদের লেকচার কে শুনবে?
কাজেই ৪১৭ খ্রিষ্টাব্দে হাইপেশিয়া যখন লেকচার দিয়ে ফিরছিলেন, তখন তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে, বিবস্ত্র করে, কেটে কুটিকুটি করে পুড়িয়ে দিয়েছিল সিরিল আর তাঁর ধর্মান্ধ সাঙ্গপাঙ্গরা। পুড়িয়ে দিয়েছিল আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীর লক্ষ লক্ষ বই আর কয়েকশো বছর ধরে বিজ্ঞানীদের হাতে লেখা জার্নাল, বিজ্ঞান প্রোজেক্ট। তাঁর মৃত্যুর পরের ১০০০ বছরকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে ‘অন্ধকার যুগ’ বলা হয়।
চরমোনাই পীর কিছুদিন আগে পাঠ্যপুস্তকে হাজার হাজার ভুল নিয়ে কথা বলায় সংবাদমাধ্যমকে হুমকি দিয়েছিল। হুমকি দিয়েছিল- পাঠ্যবই থেকে হিন্দু লেখকের লেখা সরাতে হবে। শরতের গল্প, হুমায়ূন আজাদের কবিতা ইত্যাদি...
এরাও সেই প্রাচীনকালের সিরিলের ভূত। নিজেদের ধর্মের লেবাসে মুড়িয়ে তারা চায় মেয়েরা অজ্ঞ থাকুক, মূর্খ থাকুক, পিছিয়ে থাকুক। মেয়েরা কিছু করে কম বুদ্ধির, কম যুক্তির, কম জ্ঞানের, কম সম্মানের, কম যোগ্যতার হোক। কাজেই এই পীর বা এদেরই অনুসারী কেউ যে মেয়েদের স্কুল পোড়ায়নি, তার গ্যারান্টি কি?
মেয়েরা কাঁদছে তা দেখে তামাশা আর সার্কাস দেখা সরকার কেবল একজন ভ্যানচালকের প্রতি সদয় হয়ে চাকরি দিয়ে দেয়। কিন্তু এতোগুলি মেয়ের পোড়া ভবিষ্যৎ দেখে একটু সমবেদনা পর্যন্ত জানায় না কেন?
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি'র ফেসবুক থেকে