সারপ্রাইজটা কি?

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:৫৪

টেলিভিশন অন করতেই দেখি নায়ক নায়িকাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য মহা তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। নায়িকা বারবার জানতে চাইছে সারপ্রাইজটা কি! নায়ক বাবাজি কোনভাবেই বলবে না। কিন্তু নায়িকার সেই একই ডায়লগ 'বলো সারপ্রাইজটা কি, বলো সারপ্রাইজটা কি?'

আমি হাতে খাবার নিয়ে হা করে তাকিয়ে আছি সারপ্রাইজটা কি দেখার জন্য! সারপ্রাইজ কি, সারপ্রাইজ কি করতে করতে শুরু হয়ে গেল বিজ্ঞাপন বিরতি। আমি চ্যানেল না ঘুরিয়ে বসে আছি সেই সারপ্রাইজ দেখার অপেক্ষায়। বিজ্ঞাপন বিরতির পরে আবারও নায়িকার একই ডায়লগ,'সারপ্রাইজটা কি?'

নায়কের ধৈর্যের প্রশংসা না করলেই নয় এখানে। নায়ক বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে চলেছে নায়িকাকে, আর একটু অপেক্ষা করো, সবুরে মেওয়া ফলে। নায়ক আবার বসে আছে ড্রাইভিং সিটে। গাড়ি চালাতে চালাতে নায়িকাকে বারবার করে বলে চলেছে এইতো আর একটু। 

আমার হঠাৎ মনে হলো আমি কাহিনী অনেকটা ধরে ফেলেছি; এইবার হয়তো গাড়িটা এক্সিডেন্ট করবে এবং এটাই হবে ঘটনার ট্র্যাজেডি।

নাহ! সিরিয়ালের পরিচালক আমাকে নিরাশ করে নায়ক নায়িকাকে নিয়ে গেল সেই আকাঙ্ক্ষিত জায়গাটিতে। আমি সারপ্রাইজ দেখার সাথে সাথেই আর একটুকুও অপেক্ষা না করে চ্যানেল পাল্টালাম। গতানুগতিক সুইমিং পুল, ঝর্ণা এসবই হচ্ছে সারপ্রাইজ।

প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু হামলা চালানো হচ্ছে। খুব বড় রকমের কোন হামলা না হলে কেউ এখন তেমন আর এসবে মাথা ঘামাতেও চাইছে না। সময় কই এসব নিয়ে পড়ে থাকবার! এভাবেই শেষপর্যন্ত যে কয়জন টিকে থাকতে পারে। 

নাসিরনগরের হামলায় রসরাজের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও জামিন হচ্ছে না কোনভাবেই। দেখা যায়, বড় কোন সংখ্যালঘু হামলার ঘটনার পরেই 'ডেইলি সোপ'-এর সেই সারপ্রাইজ দেখার মতো আমরা সবাই চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি রাষ্ট্রের দিকে, সঠিক বিচার হবে এই প্রত্যাশায়। 

কিন্তু রাষ্ট্রও সেই ডেইলি সোপ-গুলোর মত নানা রকম ভাঁওতাবাজি দিয়ে আমাদেরকে সেই একই রকম গৎবাঁধা সারপ্রাইজ উপহার দিয়ে যায়। আমরা চ্যানেল ঘুরাই, আবারও নতুন কোন রসরাজের গল্প শুরু হয়। আবারও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি....

ডানা বড়ুয়া'র ফেসবুক থেকে