মেয়েদের অন্তর্বাস কেন সেক্স অবজেক্ট

প্রকাশ | ০১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:১০ | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:১৩

মেয়েদের অন্তর্বাস!!! জিনিসটার মধ্যে একটা নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ ভাব আছে। এখনো অনেক বাড়িতে কোন টাওয়াল বা অন্য কাপড়ের নিচে রেখে দড়িতে শুকোতে দেওয়া হয়। একবার খোদ আমার ফেমিনিজমবাংলা ব্লগ সাইটে এক অন্তর্বাস অনলাইন শপের নিউজ দিয়েছিলাম। আমার মটো ছিল তিন ছেলে এরকম একটা শপ চালাচ্ছে, যখন অন্যরা সেটা নিয়ে মজা করছে।

কিন্তু নাম নিয়েই ফেঁসে গেলাম। শপের নাম ছিল গোপনজিনিস ডটকম। আমার প্রিয় আপুরা খেপে গিয়ে বুঝালো, নামের ভেতরেই এক পুরুষতান্ত্রিক মজ্জাগত গন্ধ। মেয়েদের অন্তর্বাস বলেই সেটা গোপন জিনিষ হয়ে গেল! ফুটপাতে ছেলেদের অন্তর্বাসের ছড়াছড়ি থাকে! কই মেয়েদের অন্তর্বাস তো তেমন একটা দেখা যায় না? টাওয়ালের নিচে রাখা এক টুকরো নিষিদ্ধ কাপড় যেন আপামর সোসাইটির কাছেই নিষিদ্ধ। কিন্তু কেন?

মেয়েদের অন্তর্বাস এর সাইজ নিয়ে আমার এক বন্ধু একবার বিষয়টা জিজ্ঞেস করেছিল। আমিও হাবলা বললাম, চেস্টের মাপ তো সবার এক হবে না স্বাভাবিক। তাহলে সাইজ এক হবে কি করে? ছেলেটার রিপ্লাই আমাকে অনেকক্ষণ ভাবিয়েছিল, "আরে মেয়েদের সাইজ এ একটা জিনিস আছে"। খুব নামকরা ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে পড়া বন্ধু সাইজ নিয়ে এই চমকপ্রদ কথাটি আমাকে বহুদিন ভাবিয়েছিল।

হ্যাঁ তাই হয় বৈকি। চেস্টের সাইজের ভিন্নতার প্রতি লোলুপ দৃষ্টি একটা অন্তর্বাসকে সেক্স অবজেক্ট বানিয়ে ফেলে। আর তা নিয়ে মেয়েদের লজ্জার সীমা থাকে না। তরল পদার্থ 'দুধ' আর 'স্তন্য'-কে এক করে ফেলে মেয়েদের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে সেক্সিজম জোক খুঁজে বেড়ায় তারা। আর তাই ভাত পায় সাজু খাদেমরা। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে এই জোকসটা ছেলেদের অন্তর্বাস নিয়ে করলে কি এত ভাইরাল হত? নাকি সাজু খাদেম কোনদিন সেটা করেছিল?

ডার্টি জোক এর মধ্য সেক্স একটা প্রচ্ছন্ন বিষয়। কিন্তু যখনই সেটা সরাসরি কারো গায়ের রঙ, জাতি, Disability, sexual preference, gender identification নিয়ে করা হবে তখনই সেটা জোক থাকে না। বুলিং হয়ে যায়। There is a huge difference between humor and harassment.

আমরা যে মীরকে আজ জাতীয় জোক গুরু ধরছি, সেও কিন্তু ঋতুপর্ণ ঘোষের জেন্ডার নিয়ে কৌতুক করেছিল। একদিন ঋতুদা তাকে নিজ অনুষ্ঠানে ডেকে বলেন, " তুমি কি জানো যখন তুমি আমাকে কপি করে লোকদের হাসাও, তুমি শুধু আমাকে অপমান করো না, আমার মত হাজার ট্রান্স মেলকে অপমান করো।" সেই থেকে মীর এই করা বন্ধ করে দেয়। 

সাজুকে তো বোঝাতে হবে এই জোকটা হ্যারাজমেন্ট। আবার যে এই ভিডিও ভাইরাল করেছে তাকেও শাস্তি দিতে হবে অনুমতি ছাড়া এটা সে কেন করেছে?

তারপরেও একটা কথা থেকে যায়, যতদিন একজন মেয়ে নিজে বিশ্বাস করবে পুরুষের অন্তর্বাস লজ্জার বিষয় না, আমারটা বিষয়। ততদিন বাদবাকি মানুষের কাছে এটা নিষিদ্ধ আর জোকসের বিষয় হয়ে থাকবে।

ধুম করে আজ সাজু খাদেমকে নিয়ে সমালোচনার চাইতে জরুরী প্রয়োজন এই সেক্সিজমকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা। ক্লাস সিক্সে উঠলেই এত হাজার হাজার ছেলে বয়েজ স্কাউটে যায়, চাইলে কি তাদের থেকে এই সেক্সিজম ভুত তাড়াতে পারতাম না??? সেটা চেষ্টা করেছি কখনো?

সাজু খাদেম কিংবা আমার ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ডদের সমালোচনা করে বা দোষ দিয়েই আমরা খালাস। কিন্তু যারা দিচ্ছি তারাই বা কি করছি আগামী সাজু খাদেমদের জন্য?  :) নতুন বছরে এই নিয়ে কিছু ভাবা হোক।

সবাইকে হ্যাপি নিউ ইয়ার। 

মারজিয়া প্রভা'র ফেসবুক থেকে