সম্মান যোনীতে নয়, বেশ্যাও গালি নয়
প্রকাশ | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ০০:০৯ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ০০:৩০
তুমি যদি মেয়ে হও, প্রতিবাদী হও এবং লেখালিখি করো তাহলে এদেশে তোমার জন্য চমৎকার একটি গালি অপেক্ষা করে আছে, সেটি হচ্ছে- বেশ্যা এবং নষ্টা! অর্থাৎ, তুমি যদি বলো- মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না, মেয়েদের ধর্ষণ করা যাবেনা, মেয়েদের চারদেয়ালে আটকে ফেলা যাবেনা, মেয়েদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবেনা, তখন তোমাকে শুনতে হবে- তুমি একজন বেশ্যা! এবং সেইসাথে একজন নষ্টা!
এই বেশ্যা কিন্তু আমরা নিজেরা হইনি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নিজে হাতে ধরে বেশ্যা হতে শিখিয়েছে। এই সমাজ যাদের 'বেশ্যা' বলে ডাকে তারা নিজেরা এদের তৈরি করেছে, ভোগের জন্য। আর এই বেশ্যারা অনেক বেশি স্বাধীন। কারণ- তাদের জন্য বেশ্যা কোনো গালি নয়, পেশা। পেটের দায়ে ওই পেশাতেই থাকতে হচ্ছে।
যদি তাদের পেশাকে অন্যায় বলে ধরা হয় তবে যারা বেশ্যালয়ে যায় তাদের জন্য আলাদা কোনো শব্দ কেন নেই? তারা পুরুষ বলে?
এই বেশ্যাদের বাচ্চাদের জারজ বলা হয়। বিয়ে না হয়ে বাচ্চা হলেও ‘জারজ’ গালিটি শুনতে হয়। অথচ বিয়ে হয়েও যেসব মেয়ে প্রতিরাতে ধর্ষিত হয় স্বামীর দ্বারা তাদের সন্তানও তো তাহলে জারজ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। যে সমাজে একটি মানব শিশুকে জারজ বলে চিহ্নিত হতে হয়, সেটি আদৌ কি একটি সভ্য সমাজ?
তাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যখন বেশ্যা, জারজ গালিগুলো খাই তখন ভালোই লাগে। মনে হয় পুরস্কার পেলাম! কারণ আমার কাছে, এই সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার প্রথম আশীর্বাদ হচ্ছে এই গালিগুলো। গালিগুলো মনে করিয়ে দেয়- মেরুদণ্ড নামের অদৃশ্য হাড়গুলো বিক্রি করে দেইনি এখনো!
শোনো মেয়ে, সমাজের চোখে নষ্ট হয়ে কষ্ট পাবার দরকার নেই। কারণ সম্মান যোনীতে থাকেনা। সম্মান থাকে জ্ঞানে, মেধায় আর সৃজনে! সম্মান থাকে বেশ্যা ও নষ্টা নামের গালিতেও। অসম্মানের জীবনের থেকে সম্মানের গালিও ভালো। বুঝেছ তো?