সংস্কৃতির রাজনীতি, আদৌ কি সম্ভব?
প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০১৬, ০১:১৫ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬, ০১:৪১
রাজনীতি চর্চার বিষয়। তারও গলা সাধা দরকার। এই রাজনীতি অনেকটা বাবা লোকনাথের মত। রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে, রাস্তায়, মাঠে-ময়দানে শুধু নয়, নিজের ঘরের ভেতর, একা, সমষ্টির মাঝে, স্বপ্নে, ভয়ে সর্বত্র তার স্পষ্ট আনাগোনা। কিন্ত মুশকিল হচ্ছে, যদি কোনো শিল্পী মনে করেন যে তার শিল্পক্ষেত্র রাজনৈতিক নয়, তাহলে শুধু তার রাজনীতি নয়, শিল্পের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও শিল্পের কার্যকারীতাও প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য।
আমাদের দেশে একটা ধারা কিছুকাল যাবত শক্তিশালী হয়ে উঠছে যারা শৈল্পিক উচ্চারণকে রাজনীতির বাইরে রাখতে চান। সে কারণেই কিনা জানিনা, প্রায়ই তাদের রাজনৈতিক উচ্চারণেও শিল্পীর নৈপুণ্যের অভাব চোখে পড়ার মত ঠেকে। সফদারের শিল্পে রাজনীতি ছিল না। তার শিল্পটাই তার রাজনীতি ছিল। ওনার রাজনীতি চর্চা মঞ্চে শেষ হতে পারত না, কারণ ওনার মঞ্চের কোন বাউন্ডারি ছিল না। ছিল রোঁয়ায় রোঁয়ায় শিল্প, আর সর্বত্র থইথই করা নাছোড়বান্দা রাজনৈতিক উচ্চারণ।
দুঃখের বিষয়, আমাদের আশেপাশে এখনও একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আর সংস্কৃতিকর্মী আলাদা থাকেন। হাতে গোনা কিছু অন্যরকম মানুষ ছাড়া সে অর্থে কাউকে দেখি না যার শিল্পই আন্দোলন। আমরা ভুলে যাই সলিল চৌধুরী কেন সংস্কৃতিকর্মী ছিলেন। ভুলে যাই যে তার সৃষ্ট গানের ফর্ম, সুর ছিল প্রতিবাদী। ভুলে যাই কেন কবীর সুমনের কিছু গান না লেখা আসলে প্রবলভাবে রাজনৈতিক। আর দেখেও দেখি না গণনাট্য আন্দোলনের সাথে কোথায় গিয়ে রুদ্ধসঙ্গীতের সাক্ষাৎ মধুরেণ সমাপয়েত-সম হয়না।
আমরা ভুলে যাই, অন্ধ হয়ে থাকি। আর চোখ বুজে মাইকে বুঁদ হয়ে রাজনৈতিক অধিবেশনে দুটো গান গেয়ে মনে করি দেশে বিপ্লবী গানের জোয়ার এনে ফেললাম বলে। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, রাজনীতিকে শুধু গানের বাণীতে, পরিবেশনস্থলে খুঁজবেন না। সর্বাগ্রে রাজনীতিকে খুঁজুন শিল্পীর মধ্যে। শিল্পীর রাজনীতি ব্যতীত শিল্প নিছকই ফোকলা দাঁতের মাড়ির মত, যা দিয়ে কোন কিছুই গুড়িয়ে ফেলা যায় না।
সুমন চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, "আমাদের নকল ভণ্ড কৃষ্টি চালায় করাত বুকে", কিন্ত তাদের সাজানো জলসার গায়েনের কোন বুক নেই এখন আর। 'আর্ট ফর আর্টস সেক'- জপতে জপতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে 'শিল্পী'-রা। আর রাজনীতি একা বসে এখনও ভেবে যাচ্ছে অধিবেশনের আগে দুটো গান গাইতে দিলে বিপ্লবের দামী সময় নষ্ট হবে না তো?
শবনম সুরিতা'র ফেসবুক থেকে