এই সিস্টেম মেয়েদের পারিবারিক সম্পত্তি বানানোর সিস্টেম

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:৩৭ | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:৪৮

ফারজানা মাহবুবা

কোরানিক সাইন্সে পড়েছি শুনেই হয়তো অনেকেই সুযোগ পেলে আমাকে ধর্মীয় বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করেন।
বেশীরভাগ সময় আমি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যাই।
কারন হলো- আমি যে উত্তরটা দিবো, সে উত্তরটা নেয়ার মত মাইন্ডসেটের অভাব!
কথাটা খুব দাম্ভিক, উন্নাসিক শোনাচ্ছে?
শোনালে আমি খুবই দুঃখিত।
কিন্তু এটা সবচে’ বড় বাস্তবতা।
আপনি আমার সাথে কথা বলছেন একজন “অধীনস্ত”র পজিশন থেকে।
কিন্তু আমি আপনাকে উত্তর দিতে হলে আপনাকে উঠে আসতে হবে একজন ‘নাগরিক’র পজিশনে।
সমস্যা হলো, আপনি তো নাগরিকের পজিশনে নেই!
আরেকটু খুলে বুঝাই।
যেমন ধরুন, আপনি প্রশ্ন করছেন, ‘আমার হাজবেন্ড যদি অনুমতি দেয়, তাহলে আমি কী....?’
প্রশ্নটা দেখুন।
আপনি কিন্তু অলরেডী কনটেক্সটটার জন্য একটা কন্ডিশন সেট করে দিয়েছেন।
তা হলো আপনার হাজবেন্ড’র অনুমতি।
এখন আমি যদি আপনাকে একজন “স্বাধীন নাগরিক” ধরে নিয়ে উত্তর দেই, আপনার রিএকশান দু’টোর একটা হবে।
এক- হয় আপনি আমাকে ‘ফেমিনিষ্ট’ ‘ওয়েষ্টার্ন ব্রেইন ওয়াশড’ হাবি জাবি যা আছে এসব ভাবা শুরু করবেন।
দুই- অথবা আপনি খুব কনফিউজড হয়ে যাবেন!
কারন আপনি ধর্মকে যে এংগেলে এত বছর ধরে, আপনার সারা জীবন ধরে দেখে এসেছেন, শুনে এসেছেন, বুঝে এসেছেন, আমি সে এংগেলে কথা বলছি না।
আমি আপনাকে একজন সম্পূর্ণ “স্বাধীন” “নাগরিক” ধরে নিয়ে কথা বলছি!
-
শব্দ দু’টো খেয়াল করুন-
“স্বাধীন” আর “নাগরিক”।
এ দু’টো শব্দ- বিশেষ করে মেয়েদের জন্য- ধর্মকে বুঝতে চাইলে খুবই খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যখন আপনার প্রশ্নেই বলছেন “আমার হাজবেন্ড যদি অনুমতি দেয়”- আপনি অলরেডী নিজেকে স্বাধীন নাগরিকের অবস্থান থেকে নামিয়ে একটা ‘অধীন’ অবস্থানে নিয়ে গেছেন।
আমি জানি, এতটুকু পড়েই অনেকে এক্ষুনি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া শুরু করে দিয়েছেন!
ভাবা শুরু করে দিয়েছেন- জানতাম!
জানতাম এই মেয়ে এই ধরনের কথাই বলবে!
জানতাম এই মেয়ে অন্য মেয়েদেরকে তাদের জামাইদের বিরুদ্ধে ক্ষেপাতেই এসব হাবি জাবি লিখে!
আপনি যা ‘জানতেন’, তা জানতে থাকুন।
অন্য যারা এতকিছু আগে থেকেই “জানতেন” না, আমার কী উদ্দেশ্য না উদ্দেশ্য তারচেয়ে বড় কথা- নিজে ইসলামকে স্টাডি করুন।
আমি সেই ক্লাস ফাইভে মাদ্রাসায় পড়া শুরু করা থেকে শুরু করে রিলিজন (ইসলাম), কালচার এন্ড জেন্ডার এর উপর পিএইচডি করা পর্যন্ত যতদূর ইসলামকে নিয়ে একাডেমিক্যালি পড়েছি, বুঝতে চেষ্টা করেছি-
আমি শুরুতেই একটা জিনিষ বুঝে নিয়েছি।
তা হলো, ইসলাম আমাকে একজন “স্বাধীন” “নাগরিক” হিসেবে দেখে।
এরপর আমি বাকী সবকিছুকে- সবকিছু বলতে সবকিছুকে- আমার স্বাধীন নাগরিকত্ব দিয়ে মেপেছি।
যেহেতু পড়তে পড়তে দেখেছি- ধর্ম এবং এর ব্যখ্যা শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হতে হতে কতটা প্যাচগি খেয়ে গেছে বিভিন্ন কারনে (সে অ-নে-ক কারন!), 
তাই যখনই কনফিউজড হয়েছি-
এবং কনফিউজড না হওয়াটা অস্বাভাবিক, 
কারন আমাদের সমাজ এবং ব্যবস্থা দু’টোই যখন কোনো মেয়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন তাকে দমানোর সবচে কার্যকরী পন্থা হিসেবে ব্যবহার করে ধর্ম’র বিভিন্ন রকমের ব্যখ্যাকে-
তাই যখনই কনফিউজড হয়েছি, সবার আগে ঐ সিচুয়েশনাকে প্রশ্ন করেছি-
আমার স্বাধীন নাগরিকত্ব কী এখানে কোনোভাবে কমপ্রোমাইজড হচ্ছে?
যদি হয়, তাহলে এখানে দুই নাম্বারী আছে!
সামথিং ইজ ফিশি ফিশি হেয়ার।
তাই অনেক ক্ষেত্রে উত্তর মেনে নিতে না পারলেও ভয় থেকে (এই ভয় নিজের অজ্ঞতাকে, নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে) দরকার হলে চুপ করে থেকেছি। 
কিন্তু মেনে নেইনি।
নিজেকে বলেছি, সময় পেলেই সুযোগ পেলেই এটা নিয়ে নিজে পড়ালেখা করে জানতে হবে।
-
অনেকেই জিজ্ঞেস করে- চাকরি করা কী ধর্মীয়ভাবে জায়েজ?
আমি এধরনের প্রশ্নে এতটাই থতমত খেয়ে যাই, 
সিরিয়াসলি, 
উত্তরই দিতে পারিনা!
কারন আমি যখন দেখি, আমার সামনের মানুষটা নিজের স্বাধীন জন্মকে কতটা পরাধীন, কতটা অধীন করে নিয়েছে যে বেচারী চাকরি করবে কী করবে না সেটা ইসলামে জায়েজ কিনা তা নিয়ে কনফিউজড, 
আমি নিজেই তখন ঐ মানুষটার মানসিক অবস্থা নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাই!
এখন আমি যদি উনাকে হাদীস খুলে খুলে দেখাই, 
এই যে দেখেন অমুক মহিলা সাহাবী ব্যবসা করেছেন, 
এই যে এখানে দেখেন, অমুক মহিলা সাহাবী বাজারে জিনিষ পত্রের দাম উঠা নামা কন্ট্রোল করতেন, 
এই এখানে দেখেন, উনি কত বড় প্রফেসর ছিলেন ছেলে সাহাবারা দূর দূরান্ত থেকে এসে উনার কাছে পড়তেন! 
ঐখানে দেখেন, উনি কত বড় পলিটিক্যাল এডভাইজার ছিলেন। 
আচ্ছা এখানে দেখেন, উনি কতবড় যোদ্ধা ছিলেন যে স্রেফ তাবুর খুঁটি দিয়ে তলোয়ারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কতজনকে ঘায়েল করেছেন! 
আচ্ছা ওটা বাদ দেন, এটা দেখেন, এখানে উনি কত বড় সোশাল ওয়ার্কার ছিলেন! 
এই দেখেন! 
ঐ দেখেন!
আমি যদি এটা করি, এতে লাভ নেই।
এবং এটা ঠিকও না।
কারন এর অর্থ হলো, আপনাকে আমি উদাহরন দিয়ে ইসলামকে বুঝানোর চেষ্টা করছি।
অথচ হওয়ার কথা ছিলো উল্টোটা।
আপনি ইসলাম বুঝে তারপর উদাহরন দেখবেন যে উদাহরনটা ইসলাম অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা।
তাই বলছিলাম, লাভ নেই।
ধর্ম অনুযায়ী আপনি ‘চাকরি করতে পারবেন কিনা’ ‘এটা করতে পারবেন কিনা’ ‘ওটা করতে পারবেন কিনা’ এটা বুঝার আগে আপনাকে বুঝতে হবে মুসলিম হওয়া মানে কী।
এবং সেই মানে বুঝতে হলে আপনাকে পারিবারিক নাগরিকত্বের পাশাপাশি আপনার সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক নাগরিকত্বকেও বুঝতে হবে।
কারন, ইসলামে আপনি যে মানুষ তা “ছেলে মানুষ” বা “মেয়ে মানুষ” হিসেবে ডিফাইন করা হয়নি, করা হয়েছে একজন নাগরিক হিসেবে।
পরিবার হলো ঐ নাগরিকদের নাগরিক দায়িত্ব পালনের সবচে ক্ষুদ্রতম ইউনিট।
কিন্তু ক্ষুদ্রতম ইউনিটেই যদি আপনি নিজেকে বন্দী করে ফেলেন, 
বাকী সব ইউনিট সামলানো যদি ‘ছেলেদের দায়িত্ব’ হয়ে যায়, 
তাহলে আমাকে উলটা আপনাকে প্রশ্ন করতে হবে- আপনি ইসলামকে আসলে কতটুকু বুঝেছেন?
-
হুযুরদেরকে, মুসলিম স্কলারদেরকে দেখি কথায় কথায় ইসলাম মেয়েদেরকে কতটা উঁচু মর্যাদা দিয়েছে, কতটা মহান করে দেখেছে, তা প্রমান করতে গিয়ে ইসলামের প্রথম যুগের মহিলা সাহাবাদের কথা টানেন।
আয়েশা (রাঃ) এর কথা বলেন।
গলায় খুব আবেগ নিয়ে এসে বলেন, ‘উনি এত বড় স্কলার ছিলেন যে যদি দু’জন সাহাবার মধ্যে হাদীস নিয়ে মতবিরোধ হত, তারা আয়েশা রাঃ এর কাছে যেতেন কোনটা ঠিক জানার জন্য’!
Dr. Muhammad Zubayr Siddiqi’র একটা বই আছে- Hadith Literature: Its Origin, Development, Special Features & Criticism
এই বইয়ে একটা চ্যাপ্টার আছে- Women Scholars of Hadith
পুরাই টাশকি খেয়ে যাবেন মুসলিম মহিলা স্কলারদের অবদান জেনে।
তো, কথা এখানে না।
কথা অন্যখানে।
আমি, যে কিনা স্কলার হওয়া অনেক দূরের কথা, স্রেফ একটা পিএইচডি ডিগ্রী নিতে গিয়ে-
-প্লীজ এখানে অবশ্যই আপনার জানা দরকার- 
কেউ পিএইচডি করলেই তাকে স্কলার ভাবা শুরু করবেন না। 
এটা একটা ডিগ্রী। 
এই ডিগ্রীর মূল অর্থ হচ্ছে- যে এই ডিগ্রী পেলো সে এখন স্কলারশিপ মানে জ্ঞানের দরজা খোলার যোগ্যতা অর্জন করলো মাত্র। 
এখন তাকে ঐ দরজার ভিতরে ঢুকে আসল পড়ালেখা করার অনুমতি দেয়া হলো মাত্র।
যা বলছিলাম, 
ঐ এক ডিগ্রী নিতে গিয়ে জীবন শুধু ছ্যাড়া ব্যাড়া না, পুরা লেজেগোবরে হয়ে গেছে!
তাও ভাগ্যিস এমন জামাই ছিলো যে নিরেট একটা কংক্রীটের খাম্বার মত বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো যখনই কুইট করতে চেয়েছি।
সেখানে স্কলার হওয়া?!
হা হা হা!
আমি সিয়িয়াসলি হাসছি।
হুযুররা যারা মহিলা মুসলিম স্কলারদের উদাহরন দেন, তারা হয় জানেন না স্কলার হতে হলে একজন মানুষকে তার ব্যক্তিগত জীবনে কী পরিমান সময় ব্যায় করতে হয় পড়ালেখা/ জ্ঞান অর্জনের পিছনে,
অথবা তারা ভাবেন মেয়েরা গাধা, বোকা!
ট্রাষ্ট মী, আয়েশা রাঃ যদি প্রতিদিন সকালে নাস্তার টেবিলে দুই প্রকারের ফ্রেশ ভাজি আর তরকারী দিতে হতো একদম চুলা থেকে নামানো এখনি সেঁকা গরম গরম রুটি,
ফলোড বাই টাটকা বানানো চা!
তারপর দুপুরে কমপক্ষে তিনটা তরকারী তো অবশ্যই, আবার ফলোড বাই বিকেলে নাস্তা, চা।
আর রাতে আবার দুপুরের তরকারীগুলোর সাথে কমপক্ষে একটা ফ্রেশ তরকারী।
প্রত্যেকবার এগুলো টেবিলে আবার সার্ভ করা, এবং সবার খাওয়ার পর ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা!
আরো গভীরে গিয়ে যদি আয়েশা রাঃ এর শ্বশুড় শ্বাশুড়ি দেবর ভাসুর থাকতেন, এমন হতো কেউ খাওয়ার পর প্লেট ধুয়ে রাখা তো দূরের কথা, টেবিলে কাউকে কাউকে হাত ধোঁয়ার পানি পর্যন্ত এনে দিতে হতো!
আবার এর মধ্যে ধরুন যদি আয়েশা রাঃ ‘র উপর আজকালকার মেয়েদের উপর মানসিক যে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অত্যাচারগুলো চলে এগুলোও চলতো!
‘এটা এভাবে না রেধে ওভাবে রাধলে মজা হতো’ 
‘এটা ঠান্ডা হয়ে গেছে, ঠান্ডা খাওয়া যায় নাকি?’ 
‘এত লবন বেশী দিয়েছো? মুখেই দিতে পারছিনা’ 
‘টেবিলে বোন-প্লেট দিলে না? ঝুটা কোথায় ফেলবো?’ 
‘প্রতিদিন একই নাস্তা খেতে কার ভাল লাগে? অন্য কিছু বানাও না!’
হে হে!
আর লিষ্ট লম্বা না করি।
এই সবকিছুর পর আবার ধরুন আয়েশা রাঃ এর সময়কালের ছেলেরা যদি তাদের চোখের সামনে স্লিম এন্ড সেক্সি মেয়েদেরকে ঘুরে বেড়াতে দেখতো আর আয়েশা রাঃ কে তার বিবাহিত জীবনে মানসিক প্রেশারে বডি ইমেজ কনসার্নে ভুগতে হতো নিজের সৌন্দর্য্য নিয়ে, নিজের মোটা হয়ে যাওয়া নিয়ে,
ওরে আল্লাহরে,
উনার স্কলারশিপ যেতো একদিকে!
উনি যেতেন আরেকদিকে!
ট্রাষ্ট মী, আমি খুব খুব খুব কমিয়ে বলেছি।
আমাদের সমাজের যে পারিবারিক সিস্টেম, এই সিস্টেম আপনাকে ‘স্কলার’ বানানোর সিস্টেম না।
এই সিস্টেম ঘরের মেয়েদেরকে “আমার হাজবেন্ড যদি অনুমতি দেয়”-টাইপের অধীনস্ত পারিবারিক সম্পত্তি বানানোর সিস্টেম।
-
আর তাই হুযুররা, মুসলিম স্কলার রা আয়েশা রাঃ একটা মাত্র খেঁজুর খেয়ে ইফতার করেছেন এ হাদীস শোনান,
কিন্তু একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করেন না, আরে তাই তো, উনি কেনো এত এত ইফতার বানিয়ে ফ্রেশ ফ্রেশ বুট জিলাপী পেঁয়াজু হালিম বেগুনী বানিয়ে বসে বসে উনার জামাই আসার অপেক্ষা করেননি?!
হুযুররা, মুসলিম স্কলাররা, ভুলেও এত গন্ডা গন্ডা হাদীস থেকে এই প্রশ্ন তুলে এনে আপনাকে শোনাবেন না, 
একী অবস্থা? 
রাসূল সঃ কেনো উনার বউদেরকে এক বাড়ীতে রাখেননি? 
যৌথ পরিবারের কী হবে?
একী কাহিনী?
রাসূল সঃ এর দুধ মা, যাকে উনি এত এত এত শ্রদ্ধা করতেন, 
একদম নিজের মায়ের মত, 
ইনফ্যাক্ট উনি তো মা-ইই, 
নিজের বউদেরকে কেনো রাসূল সঃ সে মায়ের সাথে এক বাসায় রাখেন নি?
উলটা মা যেখানে মরুভূমিতে থাকতেন, ওখানেই থাকতেন!
আজীবন থেকেছেন?!
এসব কী?!
হায় হায়, হাদীসে এসব কী দেখছি?
কেনো কোনো সাহাবা বিয়ের পর বউ নিয়ে তাদের বাপ মা’র সাথে এক বাড়িতেই থাকার কোনো কথা পাওয়া যায় না?!
না।
এসব প্রশ্ন আপনি শুনবেন না।
-
হুযুররা, মুসলিম স্কলার-রা আপনাদেরকে উদাহরন দেন- কীভাবে মুসলিম ফীমেল সাহাবা রা উনাদের সন্তানদেরকে তলোয়ার চালানো শেখাতেন!
এ কথাটা উনারা বলেন সন্তানকে প্রতিপালনের গুরুত্ব হিসেবে।
কিন্তু জনাবগন, ঐ মহিলা তলোয়ার চালানো না শিখলে কী আকাশ থেকে যাদুমন্ত্র দিয়ে ঠাস করে শিখে ঠুস করে সন্তানকে শেখাচ্ছিলেন?!
আর এ কেমন সমাজ যে সমাজে মেয়েদেরকে তলোয়ার চালানো শেখানো হয়?
যে সমাজে মেয়েদেরকে যুদ্ধবিদ্যা শেখানো হয়?
হুযুরেরা এত এত হাদীস বলেন,
কয়জন হুদাইবিয়া’র সন্ধি’র সময় রাসূল সঃ এর স্ত্রী উম্ম সালামাহ যে চরম ক্রিটিক্যাল, ভয়ংকর রকম ক্রিটিক্যাল পলিটিক্যাল সিচুয়েশানে রাসুল সঃ এর পলিটিক্যাল এডভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন,
এবং রাসূল সঃ উনার এডভাইজ অনুযায়ী কাজ করেছেন -
এসব হাদীস শুনি না কেনো?
যদি শুনিও, উত্তর দিন- যে সময়ে এত বড় বড় পুরুষ সাহাবা রা কোনো উপায় বের করতে পারছিলেন না,
উলটা অনেক সাহাবা নিরবে রাসূল সঃ এর এই চুক্তি করাটাকে খুব অপছন্দ করে বসে ছিলেন,
সে সময়ে কীভাবে একজন মহিলা এমন চমৎকার ভাবে পলিটিক্যাল সল্যুশান দিতে পারে?
উনি এত পলিটিক্যাল জ্ঞান কোথায় পেলেন?!
সোজা কথা- পলিটিক্স শিখলেন কীভাবে?
আজকের মুসলিম সমাজে কয়টা মেয়ে পলিটিক্স বুঝে?
বুঝে!
ভুল বলেছি। আমাদের মেয়েরাও পলিটিক্স বুঝে!
খালেদা জিয়া – শেখ হাসিনা ছাড়া আর একটা পলিটিক্স-ই আমাদের সমাজের মেয়েরা বুঝে,
সেটা হলো পারিবারিক পলিটিক্স!
কারন ওখানেই তাদের শুরু, আর ওখানেই তাদের শেষ কিনা!
রাষ্ট্রীয় পলিটিক্স নিয়ে মাথা ঘামানো- ওসব তো ছেলেদের কাজ!
-
মজার কথা কী জানেন?
এই যে আমি যতটুকুই পড়েছি ইসলামকে, 
এখনো পড়তে চেষ্টা করছি,
কোরআন এবং হাদীসে কোথাও মেয়েদেরকে স্রেফ “হাউজ ওয়াইফ” নামের প্রফেশানে ফেলে দেয়ার কোনো উপায় দেখিনি!
আপনি যদি একজন মুসলিম হতে চান,
ছেলে হোন বা মেয়ে,
আপনাকে একজন রাষ্ট্রীয় নাগরিক হতেই হবে!
এখন আপনি এবং আপনারাই বলুন- ক’জন মেয়ে আমাদের সমাজে আসলেই রাষ্ট্রীয় নাগরিক?!
-
আম্মাকে (শ্বাশুড়ি) দেখে দেখে আমি খুব ফ্রাস্ট্রেটেড।
একটা মানুষের জীবন স্রেফ তিনটা বিষয়েই শুরু, তিনটা বিষয়েই শেষ!
উনার সন্তান। 
উনার “স্বামী”। 
আর সন্তান এবং স্বামীকে ভাল ভাল খাওয়ানোর জন্য রান্নাবান্না!
তো, খুব হতাশ হয়ে সেদিন বললাম,
‘আম্মা, আপনি যখন মারা যাবেন, আল্লাহ যখন জীজ্ঞেস করবে, তোমার জীবনে তুমি কী করেছো, আপনি কী উত্তর দিবেন?’
আম্মা একটা বিশাল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন,
‘কী আর বলবো? বলবো, আমি আপনার অন্য বান্দাদের খেদমতে জীবন পার করেছি!’
জিজ্ঞেস করলাম, ‘অন্য বান্দা মানে আব্বা আর আপনার ছেলে মেয়েরা?’
উনি বললেন, ‘হ্যা’।
আম্মার চেহারায় এক ধরনের যে ডেসপারেশান আর সারাজীবনের ক্লান্তি ফুটে উঠেছিলো সে সময়ে, 
তাই আর আম্মাকে আঘাত করতে মন চায়নি।
তাই আর বলা হয়নি, আল্লাহ যদি জিজ্ঞেস করে, তুমি আমার বান্দাদেরকে খেদমত করছো ভাল কথা, আমাকে কী খেদমত করছো?! 
– তখন আম্মা কী জবাব দিবেন?
যদি এই প্রশ্নটা করতাম, 
আর আশেপাশে কোনো চালাক হুযুর থাকতো, 
সে হুযুর আম্মাকে শিউর বলে দিতো, বলেন, আপনার বান্দাদের খেদমত মানেই তো আপনাকে খেদমত!
কথা এখানেই।
যুগের পর যুগ, 
শতাব্দীর পর শতাব্দী, 
মুসলিম মেয়েদেরকে এ কথাই শেখানো হয়েছে- তোমার পরিবারকে সার্ভ করো, তাইই আল্লাহকে সার্ভ করা!
তোমার হাজবেন্ডকে সার্ভ করো!
তোমার সন্তানদের সার্ভ করো!
হুযুরগন, 
আপনারা কেনো মেয়েদেরকে রাষ্ট্র এবং সমাজকে সার্ভ করার কথা বলতে ভুলে যান?!
যে আল্লাহ আমাকে একজন স্বাধীন রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে জন্ম দিয়েছেন,
সে স্বাধীন আমাকে পরিবার- হাজবেন্ড- সন্তান স্রেফ এই গন্ডির মধ্যে বেঁধে ফেলার ক্ষমতা আপনাকে কে দিয়েছে?!
কোথা থেকে পেয়েছেন এত অসীম ক্ষমতা, জনাব?
জ্বী! জ্বী! 
এতটুকু পড়ে যারা চিৎকার শুরু করে দিচ্ছেন, এই মেয়ের উদ্দেশ্য কী?
আমার উদ্দেশ্য একটাই- 
আমার ধর্ম আমাকে ঠিক ততটুকুই আল্লাহ’র খলীফা করে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ঠিক যতটুকু আমার হাজবেন্ডকে, আমার বাবাকে, আমার ভাইকে খলীফা করে পাঠিয়েছেন।
আমার বাপ ভাই জামাই কেউ আমার চেয়ে এক বিন্দু বড় খলীফাও না, এক বিন্দু ছোট খলীফাও না।
তারা যেমন রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং পারিবারিক নাগরিক; আমিও হুবুহু তাই।
হু আর ইউ রিয়েলী যে কিনা আমার রাষ্ট্রীয় আর সামাজিক নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে স্রেফ ‘পারিবারিক নাগরিক’ বানিয়ে দেন?
-
এই প্রশ্নটা করে নিজেই আবার উত্তর খুঁজতে বসি।
আমরা- মেয়েরাই হুযুরদের হাতে আসলে এত অসীম ক্ষমতা তুলে দিয়েছি।
তুলে দিয়েছি নিজেদের অজ্ঞতা থেকেই।
একটা উদাহরন দেই।
বর্তমান সময়ের একজন শ্রদ্ধেয় স্কলার, 
যিনি সরাসরি আমার টীচার-ও, যার প্রতি আমার শ্রদ্ধা অগাধ, 
স্যারকে দেখলাম একজন মহিলা প্রশ্ন করেছেন ডোমেষ্টিক ভায়োলেন্সর জন্য ডিভোর্স নেয়া নিয়ে।
স্যার মহিলাকে যে উত্তর দিয়েছেন তার সারমর্ম হলো মহিলার উচিত তার হাজবেন্ডের সাথেই থাকা।
একজন স্কলার যখন আপনাকে এই পরামর্শ দিবে, এটা কিন্তু আপনার কাছে ‘ফতোয়া’র মর্যাদা পেয়ে যায়।
আপনি তখন যত কিছুই হোক আপনার জামাই আপনাকে যতই মারুক,
ডান্ডা দিয়ে কেনো, বটগাছ উপড়ে এনে তা দিয়ে মারুক,
আপনি যতবার ডিভোর্সের কথা ভাববেন, ততবার ভাববেন, নাহ! ইসলামিক্যালি আমি এলাউড না!
এখন আমি যদি আপনাকে আরেকটা হাদীস এনে দেখাই যে, 
এই দেখেন, 
আল্লাহ’র রাসূল সঃ নিজে ঐ মহিলা যখন এসে বলেছে উনার জামাইকে উনার পছন্দ না কারন উনার জামাই’র চেহারা সুন্দর না, 
তখন আল্লাহ’র রাসূল সঃ ঐ মহিলাকে অপশন দিয়েছিলেন ঐ মহিলা ডিভোর্স দিতে চায় কিনা। চাইলে আল্লাহ’র রাসূল তখনই ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবেন। 
কিন্তু ঐ মহিলা বলেছে, 
নাহ, উনি জাষ্ট জানতে চাইছিলেন এই সামান্য কারনে উনি ডিভোর্স দিতে পারেন কিনা। আসলে উনি ডিভোর্স দিবেন না।
কোথায় চেহারা সুন্দর না, আর কোথায় গায়ে হাত তোলা!!!!
-
ফর আল্লাহ’স সেইক, নিজে যতদিন বুঝবেন না আপনি মুসলিম মানে আপনি কী, ততদিন দুনিয়ার তাবত মুসলিম স্কলারদের দাস আপনি। 
উনারা যা বলবে, আপনি তাই করবেন।
সমাজের দাস আপনি। 
সমাজ আপনাকে উঠাবে বসাবে হাসাবে কাঁদাবে।
পরিবারের দাস আপনি। 
পরিবার আপনার গন্ডী বেঁধে দিবে। সাবধান এর বাইরে যাবি তো ঠ্যাং ভেংগে দিবো!
রাষ্ট্রেরও দাস আপনি। 
রাষ্ট্র আপনাকে শেখাবে এই রাষ্ট্রে মেয়েমানুষ মানে ঠিক কতটুকু কী করা আপনার জন্য বৈধ।
ট্রাষ্ট মী, 
ছুটা মুটা প্রশ্ন করা তাই বাদ দিন।
মুসলিম হওয়া মানে কী তা শিখুন। 
এবং জানুন, আল্লাহ আপনাকে স্বাধীন করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। 
না রাষ্ট্র, না সমাজ, না পরিবার, না পৃথিবীর কোনো সিস্টেমের বাপের সাধ্য নাই আপনাকে অধীন করে।
স্বাধীন হয়ে বাঁচুন। 
আল্লাহর বান্দা আপনি। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মুখাপেক্ষী নন।
তাহলে এত তো তো করেন কেনো সারাক্ষন?
কেনো এত ভয় পান?
আল্লাহ আপনার পিঠে যে মেরুদন্ড দিয়েছে, ওটা সোজা করে হাঁটতে পারেন না?
সোজা হয়ে হাঁটুন।
বাঁকা হতে হলে স্রেফ আল্লাহ’র সামনেই বাঁকা হবেন। 
রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবার- কোনো সিস্টেমের সামনে না। 
কোনো মানুষের সামনে তো না ইই।

ফারজানা মাহবুবা'র ফেসবুক থেকে