ইমো, জিফ, স্টিকার
প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২১, ২০:৫৬
এক সময় ইশারা ইঙ্গিত, নানা ধরনের ধ্বনি সৃষ্টি করে মানুষ তার আবেগ, অনুভূতি, মনের ভাব প্রকাশ করতো। তখন ও ভাষা আবিষ্কার করতে পারেনি। পরবর্তীতে বাগযন্ত্র ব্যবহার করে ভাষা আবিষ্কার করে মানুষ। সেও এক দুদিনের কাজ নয়। আমরা এত আধুনিক মানুষ, নতুন একটি বিদেশী ভাষায় দক্ষ হতে হলেও বেশকিছু সময় দিতে হয়। আর সেই আদিম যুগে মানুষ তার ভাষা মাত্র তৈরি করছে, আর ওটা মাত্র এক দুইদিনে হয়ে যাবে, তাতো নয়! যুগের পর যুগ লেগে গেছে হয়ত একটি ভাষা তৈরি হতে। তখনও মানুষ লিখতে জানতো না। কিন্তু মানুষ সবসময় চেয়েছে তার চিন্তাকে, তার আবেগ, অনুভূতি, জীবনের কোন একটা ঘটনা বা তার অভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করতে। প্রকাশকে সে রাখতে চেয়েছে দীর্ঘস্থায়ী করে। ততদিনে মানুষ তার হাত একটু একটু করে মুঠো করতে শিখে গেছে। মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। চোয়াল ছোট হতে আর মস্তিষ্ক বড় হতে শুরু করেছে ততদিনে। সে তখন পাথরের গায়ে, গাছের উপর, মাটিতে ছবি এঁকে এঁকে মনের কথাগুলো প্রকাশ করতে শুরু করলো। অর্থহীন দাগগুলো একত্রে জুড়ে যেন একেকটা ছবি হয়ে গেলো। সে ছবিগুলোই ধীরে ধীরে একসময় লিপিতে পরিনত হলো। পাঁচ হাজার বছর আগের আবিষ্কৃত লিপিগুলো এখনো মানুষের সভ্যতার, মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, মননশীলতার পরিচয় বহন করে। লিপি আবিষ্কার মানব সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
লিপি আবিষ্কারের পূর্বের আর পরের মানুষের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য রয়েছে। আর এখন আমরা এমন আরেক যুগে প্রবেশ করেছি, লিপি বা অক্ষর ব্যবহার না করেই একে অন্যের সাথে ভাবের আদান প্রদান করে ফেলতে পারি। সে যুগের চিত্রলিপিগুলোরই আরেক রূপ যেন ইমো, জিফ আর স্টিকারগুলো। এখন কথা হচ্ছে, এসব ইমো, জিফ আর স্টিকার কি আমরা ব্যবহার করবো নাকি করবো না?
মাত্রাতিরিক্ত ইমো/জিফ/স্টিকারের ব্যবহার বিরক্তিকর। তাছাড়া খুব সহজেই এসব ব্যবহার করা যায় বলে, লোকে এখন আর কষ্টকরে দুটো বাক্য লিখতে চায়না। আবার কখনো কখনো মনের অনুভূতি/অভিব্যক্তি প্রকাশে অক্ষরের চেয়ে বেশি কার্যকর যেন এসব ইমো/জিফ/স্টিকার। হাসতে হাসতে মাটিতে গড়িতে পড়ার ইমো, কাউকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার অনুভূতি, রাগের অনুভূতি, এমনি হাজার সব অনুভূতি প্রকাশে ইমো/জিফ/স্টিকারের যেন বিকল্প নেই।
তবুও মানব মনের সব অনুভূতি, আবেগ, চিন্তা প্রকাশে ইমো/জিএফ/স্টিকার যথেষ্ট নয়। ভাষাও কখনো কখনো সেখানে ব্যর্থ। মানবহৃদয়ের সেসব কম্পাঙ্কগুলো প্রকাশ করার উপায় এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই হয়তো কবি বলেছেন-
“অনেক কথা যাও যে বলে, কোন কথা না বলি,
তোমার ভাষা, বোঝার আশা, দিয়েছি জলাঞ্জলি।”
লেখক: লেখক ও শিক্ষক