নারীর জন্য ‘ডাবল প্যান্ডেমিক’
প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০২০, ১৩:৩০ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০, ১৪:২২
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে আমরা করোনাকালে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কে জানতে পারছি। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সম্প্রতি এক জরিপে প্রকাশ করেছে যে করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ৩১% এবং শুধু মে মাসেই মোট ১১,৩২৩ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১১,০২৫ জন গৃহস্থালী সহিংসতার শিকার হয়েছে, ২৩৩ জন যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে, ৪৮ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে বা ধর্ষণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে এবং ১৭ জন খুন হয়েছে।
অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, মে মাসে মোট ৮৬ জন নারী খুন হয়েছেন স্বামীর হাতে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের রিপোর্টটিতেও দেখা গেছে যে বেশিরভাগ নারীই সহিংসতার শিকার হয়েছেন তাদের স্বামী বা স্বামীর পরিবারের সদস্যদের দ্বারা।
করোনা মহামারিতে নারীর প্রতি সহিংসতাকে কেউ কেউ নারীর জন্য ‘ডাবল প্যান্ডেমিক’ হিসাবে দেখছেন। করোনাকালে নারী নির্যাতন কি বেড়ে গেছে? পল ফারমার নামে একজন স্বাস্থ্যনৃবিজ্ঞানী সমাজে বিদ্যমান অসমতার সাথে মহামারির সম্পর্ক দেখেন। তিনি মনে করেন, কোন একটি মহামারি সমাজের সকলের জন্য একইরকম ফলাফল নিয়ে আসেনা বরং সমাজের বিদ্যমান অসমতা নির্ধারণ করে কার উপর নির্দিষ্ট মহামারির কি প্রভাব পড়বে। ফারমারের এই আলোচনা নারীর প্রতি করোনাকালীন সহিংসতা বোঝার জন্য খুবই জরুরি।
বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক যে, করোনা মহামারির মত একটি পরিস্থিতিতে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত, যখন মানুষের সহমর্মিতা অনেক বেশি প্রয়োজন তখন নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। দেখা গেছে স্বল্পআয়ের অনেক নারীরা কাজ হারিয়েছেন, হারাচ্ছেন, তাদের স্বামীরা কাজ হারাচ্ছেন। তাদের হয়তো বাসা ভাড়া বাকী, হাতে সঞ্চয় নেই, উপরন্তু ঋণ আছে, দু-তিনটি সন্তান আছে, তাদের ভরণপোষণ করা কষ্টকর হয়ে গেছে। একইভাবে মধ্য ও উচ্চবিত্তের কর্মজীবী নারীদের অনেকেই এখন ঘরে বসে অফিস করছেন, তাদের স্বামীরাও করছেন, সন্তানদের অনলাইন পড়াশোনার তদারকি করছেন। আবার অনেকে যারা কর্মজীবী নন কিন্তু তাদের স্বামীরা বাড়িতে বসে অফিস করছেন, অথবা স্বামীরা কাজ হারাচ্ছেন। কর্মজীবী অথবা গৃহিনী এই দুইদলের নারীই হয়তো ঘরের কাজে কারও সহায়তা পাচ্ছেন না, উপরন্তু কেয়ারগিভার হিসাবে পরিবারের শিশু, বৃদ্ধসহ সবার যত্ন নিচ্ছেন। অফিস ও বাসা উভয় পরিসরে কাজের চাপ নিচ্ছেন। এরইমধ্যে নারীর মাসিক হচ্ছে, কেউ কেউ গর্ভবতী হচ্ছেন, সন্তান প্রসব করছেন, কেউবা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। এসব কিছুর সাথে তাদের জীবনে যুক্ত হচ্ছে সহিংসতা।
ফলে দেখা যাচ্ছে যে, নিন্মবিত্তের একজন নারী এবং মধ্য ও উচ্চবিত্তের নারীর শ্রেণি নির্বিশেষে গৃহস্থালী সহিংসতার শিকার হওয়ার কারণ অভিন্ন, তার লিঙ্গীয় পরিচয়। এই লিঙ্গীয় পরিচয় একটি ব্যবস্থার নির্মাণ, পিতৃতান্ত্রিক ব্যাবস্থা, যার কেন্দ্রে থাকেন পুরুষ বা পিতা বা ছেলে, নারী বা অন্যান্য লিঙ্গীয় পরিচয় সেখানে গৌণ বা প্রান্তিক। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানেই পুরুষের প্রতি পদ্ধতিগতভাবে পক্ষপাতমূলক। সুতরাং পিতৃতন্ত্রে যা কিছু ঘটবে কমবেশি পুরুষের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং নারীর বিপক্ষে যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতা একটি প্রাত্যহিক ঘটনা হিসাবেই আমরা চারপাশে ঘটতে থাকে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে, ১৬৭২ জন নারী এই লকডাউনে জীবনে প্রথমবারের মত সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং যেসমস্ত নারী গৃহস্থালী সহিংসতার শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে ৪৫% মানসিক, ৩৩% অর্থনৈতিক, ১৯% শারিরীক এবং ৪% যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গৃহবন্দীত্বের এসময়ে যারা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন তারা হয়তো আতংকের মধ্যে থাকছেন যে তাদেরকে যে কোন সময় আবারো সহিংসতার শিকার হতে হবে। সাহায্যের জন্য কোথাও যেতে পারছেন না, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে রিপোর্ট করতে পারছেন না, মানসিক কাউন্সেলিং নেবার কথা ভাবতে পারছেন না কারণ তাদের স্বামীরা হয়তো ঘরেই অবস্থান করছে। এসব কিছুই নারীর করোনাকালীন সহিংসতার অভিজ্ঞতা।
অন্যদিকে করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতার সামাজিক সাফাই গাওয়া হচ্ছে এই বলে যে পুরুষ ঘরে থাকতে থাকতে ক্লান্ত। কারণ সে ঘরে থাকতে অভ্যস্ত নয়। তার কাজ চলে গেছে, আয় বন্ধ, সংসার চালাতে পারছেন না; তাই সহিংস হয়ে উঠছেন। অথচ লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, একজন নারী বরং একজন পুরুষের চাইতে অনেক বেশিই চাপের মধ্যে আছেন। তিনি কিন্তু স্বামীর গায়ে হাত তুলে তার চাপ কমাচ্ছেন না। সুতরাং আমাদের বুঝে নিতে অসুবিধা হয়না যে কার মানসিক চাপের সামজিক মূল্য বেশি। এটি আমাদের চর্চারই অংশ। আমরা প্রতিদিনই নারীর প্রতি সহিংসতার সামাজিক অনুমোদন দেই এবং একে স্বাভাবিক করে তুলি। এই স্বাভাবিকীকরণ ঘটে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে আমরা যেটা করি সেটা হলো ভিকটিম ব্লেমিং। যেমন, আমরা বলি- সে স্বামীর সাথে তর্ক করেছিল তাই মার খেয়েছিল। সে স্বল্পপোষাক পরেছিল তাই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল।সে রাতে বাইরে গিয়েছিল তাই ধর্ষিত হয়েছিল। আমরা একজন নারীকেই সবসময় কাঠগড়ায় তুলি, কারণ আমরা মনে করি পুরুষরা সহিংস হতেই পারে। আমরা দিনের পর দিন একটি বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও প্রথার মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সম্পর্ক (ক্ষমতাহীন বনাম ক্ষমতাবান) দেখতে অভ্যস্ত হই এবং আমাদের ভাবনা বা কার্যকলাপ দিয়ে প্রতিনিয়তই তার পুনরুৎপাদন করি। ফলে আমরা ভিকটিমকেই দোষারোপ করতে থাকি এবং নিজেরাও চলমান ব্যাবস্থার অংশে পরিণত হই।
এই প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে আসে জেন্ডারিং ও স্টেরিওটাইপিং। ভিকটিম ব্লেমিং করতে গিয়ে আমরা এটা ভীষণভাবে করতে থাকি। জেন্ডারিং এবং স্টেরিওটাইপিং বিষয়টি হলো, একধরনের লেবেলিং, অর্থাৎ নারী ও পুরুষকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনাকে কিছু ছকের মধ্যে ফেলে দেয়া। এটি এক ধরনের সামাজিক নির্মাণ। নারী ও পুরুষের সম্পর্ককে একটা বাইনারী অবস্থানে দাঁড় করিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা স্টেরিওটাইপ তৈরি করতে থাকি যার মাধ্যমে নারী ও পুরুষ সম্পর্কিত ধারণাগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিস্তৃতি লাভ করে। যেমন, পুরুষ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, নারী ঝগড়াটে। পুরুষ সবল তো নারী অবলা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে একটা বৈশিষ্ট আরেকটির বিপরীত এবং সব ধরনের স্টেরিওটাইপিং-এর ক্ষেত্রে পুরুষ বরাবরই সাবজেক্ট এবং নারী অবজেক্ট, পুরুষ উত্তম এবং নারী অধম।
ফলে যে সমাজ ব্যাবস্থায় পুরুষ অধিক মর্যাদাসম্পন্ন হয় এবং সেই অবস্থান থেকে যখন নারীর প্রতি সহিংস হয় তখন পুরুষ আসলে বোঝেই না তার কোন আচরণটি সহিংস হচ্ছে, তেমনি নারীও বোঝে না সে সহিংসতার মধ্যে বসবাস করছে। কারণ সেও ধরে নেয় ‘উত্তম পুরুষ’ যা করবে তাই ‘স্বাভাবিক।’ এমনকি যদি কোন নারী বোঝে এবং সহিংস সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায় তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সেই সম্পর্কের মধ্যে ধরে রাখার লোকের অভাব হয়না আমাদের সমাজে। আমাদের সমাজে ডিভোর্সড নারী মানেই ‘খারাপ নারী’ এমন একটি ধারণাও প্রতিষ্ঠিত আছে। পরিবার বা গৃহস্থালী এই স্টেরিওটাইপগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফলে দেখা যাচ্ছে যে করোনার মত একটি পরিস্থিতিতে মানুষ যখন দিশেহারা, কর্মসংস্থান নেই, চলাচল সীমিত, চিকিৎসাসহ সকল জরুরিসেবা সীমিত সেরকম একটি সময়েও নারী সহিংসতার বাইরে নয়। ‘স্টে এট হোম’ বা ‘সোশাল ডিস্ট্যান্স’ দাম্পত্য সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা মহামারির লেন্স দিয়ে দেখতে পাচ্ছি কিভাবে প্রতিদিনের জীবনে পারিবারিক সহিংসতা বিরাজ করে। যেখানে সারাক্ষণই বৈষম্য ও লড়াই ক্রিয়াশীল।
বিদ্যমান ব্যাবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতার ব্যাপকতা এতো বেশি যে করোনা পরিস্থিতিতে এই সহিংসতা বেড়েছে বলার চাইতে বলা যুক্তিযুক্ত যে এটি একটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। পল ফারমারের ধারণা থেকে বলতে হয় যে, করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বিদ্যমান কাঠামো এবং অসমতা থেকেই তৈরি। যে নারীরা প্রথমবার সহিংসতার শিকার হয়েছে আজ অথবা কাল তারা হয়তো সহিংসতার শিকার হতোই, করোনা সেটিকে এগিয়ে এনেছে। এমন এক জীবনযাত্রার মধ্যে করোনা এসে পড়েছে যে ব্যাবস্থাটি বহুদিন যাবত জারি আছে। ফলে আমরা করোনাকালে নারীর প্রতি যে সহিংসতাকে দেখতে পাবো তা নারীর প্রতি সহিংসতার আলাদা একটি ধরন।
করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আমাদেরকে তাই করোনাকালীন বাস্তবতাকে অনুসরণ করতে হবে। অনেকেই এখন ঘরবন্দি বা বাইরে যাচ্ছে কম। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর। জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণের সুযোগ সীমিত। এসময়ে সহিংসতা থেকে নারীকে সুরক্ষার জন্য নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে কাজ করে যে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তাদের যৌথভাবে মাঠপর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে রেডিও, টেলিভিশন ও সোশাল মিডিয়াকেও তথ্য প্রচারে ব্যবহার করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সকল হেল্পলাইন এবং বিদ্যমান সহায়তাগুলো সম্পর্কে নারী ও কমিউনিটিকে অবহিত করতে হবে। যেমন, ১০৯ যেটি নারীর প্রতি সহিংসতা রিপোর্ট করার জন্য সরকারের ডেজিগনেটেড হেল্পলাইন নাম্বার। তেমনি জরুরি সেবার জন্য আছে ৯৯৯, স্বাস্থ্যসেবার জন্য আছে ১৬২৬৩ বা স্বাস্থ্যবাতায়ন এসব নিয়মিত সম্প্রচার করতে হবে। থানা পর্যায়েও একটি নির্দিষ্ট হেল্পলাইন নাম্বার চালু করতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে কি কি কারণে হেল্প লাইনে ফোন দেয়া যাবে, হেল্পলাইন থেকে কি কি সহায়তা পাওয়া যাবে, কোন নারী সহিংসতার শিকার হলে কি ধরণের সাহায্য সে প্রশাসন থেকে পাবে, কোথায় শেলটার হোম আছে, কোন এনজিও আইনী সহায়তা দিবে ইত্যাদি।
থানা পর্যায়ে সহিংসতা প্রতিরোধে নারী পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে নির্যাতনের কেইস লিপিবদ্ধ করার জন্য একটি ডেস্ক রাখতে হবে, কমিউনিটি লিডারদের নিয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে। যাতে তারা সহিংসতার শিকার নারীকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে পারে, বিশেষ করে নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে। কমিউনিটি টু শেলটার হোম বা হাসপাতাল বা পুলিশ স্টেশন একটা রেফারেল ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং কমিউনিটিতে এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যাবস্থা থাকতে হবে। বিশেষ করে, প্রাথমিক চিকিৎসা ও মানসিক চিকিৎসা সহায়তা। মানসিক কাউন্সেলিং এর জন্য একটি রেফারেল সিস্টেমও তৈরি করতে হবে। মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে এক্ষেত্রে নিযুক্ত করা যেতে পারে যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহিংসতার শিকার নারীদেরকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও আইনী সেবা গ্রহনে পরামর্শ প্রদান করতে পারবে। সহিংসতার শিকার নারীকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে কারণ স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল নারী স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেনা।
সর্বোপরি, সমাজের বিদ্যমান লিঙ্গীয় অসমতাকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। এজন্য আমাদেরকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করতে হবে সকল জেন্ডার স্টেরিওটাইপ ও স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়াকে যা নারীকে দুর্বল ও পুরুষকে শক্তিশালী ভাবতে শেখায়, ভিতটিম ব্লেমিং করতে শেখায় এবং সেই মানসিকতা গড়ে তোলে যা একজন ব্যক্তিকে নারী সহিংসতার পক্ষে নিয়ে যায়।
শৈশব থেকেই লিঙ্গীয় সমতা চর্চায় পরিণত করতে হবে। শিশুরা বড় হতে হতেই শোনে কে ‘বংশের বাতি’ বা ‘ছেলেরা মেয়েদের মত কাঁদেনা।’ এসমস্ত জেন্ডার স্টেরিওটাইপ থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হবে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র থেকে একেএকে লিঙ্গীয় অসমতা দূর করতে হবে। শিশু যদি তার চারপাশে লিঙ্গীয় আধিপত্যবাদ না দেখে তার মনেও আধিপত্য সম্পর্কে ধারণা জন্মাবে না।
সব ধরনের নীতি তৈরি বা কর্মসূচি বাস্তবায়েনর ক্ষেত্রে জেন্ডার বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ লিঙ্গীয় সম্পর্ক সমাজ কাঠামো বিযুক্ত কোন ধারণা নয়। এটি বরঞ্চ সমাজ কাঠামো ও বৈষম্যের অপরাপর উপাদানগুলোর সাথেও সম্পর্কযুক্ত। যেমন, আদিবাসী বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীর করোনাকালীন সহিংসতার অভিজ্ঞতা হয়তো ভিন্নরকম হবে তার সামাজিক পরিচয়ের কারণেই। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষেত্রে অনেকবেশি কনটেক্সটচুয়াল হতে হবে।
লেখক: নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক
প্রথম প্রকাশ: সমকাল, ১৯ জুলাই ২০২০