আফসানা হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী’র নিকট খোলা চিঠি
প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৬, ১৯:০৫
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, পুরুষের ঘৃণ্যলালসায় ঝড়ে গেলো আপনার আরেকটি বোন।
তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনই আফসানা হত্যাকাণ্ডের মুল হোতা, অভিযোগ করেছে আফসানার স্বজন ও কাছের বন্ধুরা। কিন্তু মোবাইল ফোনে অপরাধীরা এখন প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে হতভাগ্য আফসানার ভাই-মাকে।
স্থাপত্য বিদ্যার ছাত্রী, ২৪ বছরের হতভাগ্য মেয়েটির নাম আফসানা ফেরদৌস। সে আমার ফুপাতো বোনের নাতনি। সে সুবাদে আমারো নাতনি। আফসানা মিরপুরের সাইক ইন্সিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজির স্থাপত্য বিদ্যার শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলো। রাজনীতি সচেতন মেয়েটি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলো।
গত শনিবার, ১৩ আগস্ট ২০১৬, রাতে অপরিচিত মোবাইল থেকে অফসানার মায়ের কাছে জানানো হয়, আফসানার লাশ বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশ রাখা আছে।
আফসানা এক সময় কিছু ছাত্রীদের সাথে তেজগাঁও এলাকায় থাকতো। তবে গত ১৩ আগষ্ট ঘটনার মাসখানেক আগে ২ জন রুমমেটের সঙ্গে মানিকদি এলাকার একটি বাসায় উঠেছিলো।
আফসানার কাছের বন্ধুরা বলছে, তেজগাঁও থাকাকালীন তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে আফসানা। একপর্যায়ে তাদের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। পরে এলাকা ছেড়ে চলে যায় আফসানা।
ঘটনার ১০ দিন আগে আফসানা ও রবিনের পরিচিত বন্ধুরা আবার তাদের এক করে দেয়। কিন্তু ঘটনার ২ দিন আগে ফের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। এই নিয়ে আফসানাকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। এর ২ দিন পরই লাশ পাওয়া গেল আফসানার। মোবাইল ফােনে অপরাধীরা এখন প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে হতভাগ্য আফসানার ভাই-মাকে।
গত সোমবার বিকালেও রবিনের ভাই পরিচয় দিয়ে দিপু নামে একজন বলেছে, ‘এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি কইরেন না। আপনারা অনেক দূরে থাকেন। আমাদের কিছুই করতে পারবেন না। একটা মিসটেক হয়ে গেছে। আসেন আমরা বসে মীমাংসা করে ফেলি।’
আফসানাকে ধর্ষণের পর রশির মতো কোনো কিছু দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত স্বজনেরা । আর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রবিন, সৌরভ, বাবু ছাড়াও আরও কয়েকজন জড়িত।
‘আমি ভালো আছি, কোনো চিন্তা করিস না। ঈদের অনেক আগেই এবার বাড়ি চলে আসব রে। ভুলেও আমাকে ছাড়া গরু কিনবি না। এবার হাটে কিন্তু আমিও যাব। গরুর গলায় মালা ঝুলিয়ে সবাই একসঙ্গে মজা করতে করতে হেঁটে ঘরে ফিরব।’ গত ১২ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোবাইল ফোনে বড় ভাই ফজলে রাব্বির সঙ্গে এটাই ছিল মিরপুর শ্যাওড়াপাড়ায় অবস্থিত সাইক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আফসানা ফেরদৌসের (২৪) শেষ কথা।
গত শনিবার, ১৩ আগষ্ট, রাত ৯টার দিকে সৌরভ পরিচয় দিয়ে একটি মোবাইল ফোন (০১৬২২৪০৬৭১৩) থেকে কল করে আফসানার মা সৈয়দা ইয়াসমিনের কাছে জানানো হয়, আফসানা মারা গেছে। তার লাশ ধানমণ্ডির বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। আপনারা এসে লাশ নিয়ে যান, বলেই ফোনটি কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেয়। সৈয়দা ইয়াসমিন ঘটনাটা আত্মীয়স্বজনদের জানালে, আফসানার মামা হাসানুজ্জামানসহ অন্যরা বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এলেও লাশ পায়নি আফসানার।
তারা সেখানে থাকা অবস্থায় অন্য একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর (০১৬৭৭২৫২৫৯৭) থেকে বাবু নামে একজন জানান, আফসানার লাশ মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে। সবাই আল-হেলাল হাসপাতালে ছুটে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে, অজ্ঞাত এক তরুণীর লাশ এসেছিল। পরে কাফরুল থানা পুলিশ লাশটি নিয়ে গেছে। কাফরুল থানা পুলিশকে আফসানার ছবি দেখালে কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জানান, এমন চেহারার একটি মেয়ের লাশ আল-হেলাল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অবশেষে রোববার ভোররাত তিনটার দিকে তারা ঢামেক মর্গের হিমঘরে খুঁজে পাওয়া গেছে আফসানার নিথর দেহ,- আপনার আরেকটি হতভাগ্য বোনের মৃতদেহ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জার্মান এবং জাপান দূতাবাসে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আপনার সাথে আমার একাধিকবার দেখা হয়েছে,- আপনার কাছে সেই পরিচিত মুখটি হয়েও সুষ্ঠু বিচার চাইছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার পিতা এডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠি এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে উনি ৭ নং সেক্টর এবং ৬ নং সেক্টর (অর্ধেক) এর লেফটানান্ট জেনারেল পদমর্যাদায় সিভিল এফেয়ার্স এডভাইজার ছিলেন। যে স্বপ্ন নিয়ে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সে স্বপ্ন যেনো ভুলুণ্ঠিত না হয়, আপনার সে সংগ্রামেরই আমরা সাথী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো মমতাময়ী বোন এবং মা। আপনি তো জনহীতৈষী প্রধানমন্ত্রী। অাপনি এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের বিচার করবেন বলে আমরা সকলেই তাকিয়ে রইলাম।
ইতি -
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
কবি, গল্পকার ও সাংবাদিক।
প্রাক্তন রাজনৈতিক উপদেষ্টা, জার্মান দূতাবাস। ঢাকা।
সভাপতি, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র।