‘অবাধ্য হলেই কেন জেলে যেতে হয় সৌদি নারীদের’

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:৫৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

নারীর অগ্রগতিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে সারা বিশ্ব সৌদি সরকারের প্রশংসা করলেও এখনও অনেকগুলো বিধিনিষেধ আরোপের কারণে পিছিয়ে আছে সৌদি নারীরা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘পুরুষ অভিভাবকতন্ত্র’। যেখানে একজন নারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো তিনি নিজে নিতে পারেন না। তার পক্ষ হয়ে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন শুধুমাত্র তার বাবা, ভাই, স্বামী কিংবা ছেলে।

একজন সৌদি নারীকে তার পাসপোর্টে আবেদন, বিদেশে ভ্রমন, বিদেশে পড়াশুনা, বিয়ে এমনকি কারাগার ছেড়ে যাওয়ার জন্যও তার পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হয়।

চলতি বছরের শুরু থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। সম্প্রতি এক সৌদি তরুণী বাড়ি থকে পালিয়ে ব্যাংককে গিয়ে সেখানকার বিমানবন্দরের এক হোটেলে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তিনি জানান, ফিরে গেলে সৌদি প্রশাসন তাকে জেলে পাঠাবে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সৌদি পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা সমাজ ও দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বড় বাধা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০১৬ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৌদি আরবে স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষভাবে অভিভাবকত্ব আইন প্রয়োগ করা হয়। এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য বেশ ক'জন নারীকে বিচার করা হয়েছে এবং জেলে পাঠানো হয়েছে। 

২০০৮ সালে সৌদি মানবাধিকার কর্মী সামার বাদাউই তার বাবার বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং এক আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। এরপর বাবার অভিভাবকত্ব বাতিলের জন্য তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। পাল্টা মামলা দায়ের করেন তার বাবাও। ২০১০ সালে সৌদি আদালত সামার বাদাউইকে কারাদণ্ড দেয় এবং তিনি সাত মাস আটক ছিলেন।

সৌদি মানবাধিকার কর্মীরা বিষয়টিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। পিতার অবাধ্যতার অভিযোগে মারিয়াম আল ওতাইবি নামে আরেক সৌদি নারীকেও ২০১৭ সালে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। 

মিশরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক মোনা এলতাহাউই এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পুরুষ অভিভাবকত্ব এমন একটা বিষয় যা প্রত্যেক সৌদি নারী এবং মেয়েকে জন্ম থেকে আমৃত্যু ভোগায়। এই আইনের মাধ্যমে নারীকে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিসেবে দেখা হয়।’

‘সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা চায় না’শিরোনামে টুইটারে বড় ধরনের এক আন্দোলন শুরু হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রথা বাতিলের দাবি করে সৌদি বাদশাহর দরবারে ১৪,০০০ স্বাক্ষরসহ এক আবেদন পেশ করা হয়।

কিন্তু সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেখ ঐ আবেদনপত্রকে ‘ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধ’ এবং সৌদি সমাজ ব্যবস্থার ওপর ‘মরণ আঘাত’ বলে বর্ণনা করেন। তবে এ ঘটনার পাঁচ মাস পর সৌদি বাদশাহ এক আদেশ জারি করেন যেখানে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকত্ব প্রথার প্রয়োজন হবে না বলে ঘোষণা করেন। 

সৌদি আরব নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সনদে সই করেছে।

সৌদি সরকার বলে থাকে শরিয়া আইনে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। নারী ও মেয়ে শিশুদের খেলাধুলার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে ফ্যাশন শো, উন্মুক্ত হয়েছে চলচ্চিত্র প্রসর্শনী। পাশাপাশি নারীদের স্টেডিয়ামে বসে ফুটবল খেলা উপভোগেরও অনুমতি দিয়েছে। ২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি ড্রাইভিং-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। যদি এসময় বেশ কয়েকজন নারী এক্টিভিস্টকে জেলে পাঠিয়েছে সৌদি সরকার। বিচারে এদের দীর্ঘমেয়াদী সাজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত