জন্মদিনের শুভেচ্ছাঞ্জলি

কৌশিকী চক্রবর্তী

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৫০

আবদুল্লাহ আল মোহন

‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’ সে জনের নাম প্রকাশে ঘোষণা করলে কৌশিকী চক্রবর্তী কি বিরাগভাজন হবেন? ‘পিয়া ভোলে অভিমান’ আমি জানি, কিন্তু তিনি কেবল আমারই নন, আমার মতোন আরো অসংখ্য রসেবশে থাকতে চাওয়া সুরের মাতালদের কাছে তিনি ‘পিয়া’ না হলেও ‘সুদূরের নিহারিকা’সম আপনজনই, পরম প্রিয় সুরের স্বজন। আজ আমাদের স্বপ্নে দেখা, ঘোরে রাখা এই সুরসাধিকার জন্মদিন। শাস্ত্রীয় সংগীতের বিরল প্রতিভা কণ্ঠশিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী প্রিয় শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম একজন। সুহাসিনী কৌশিকীর সুরের মতোই মোহনীয় তাঁর মুখমণ্ডল। শিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তীর বাহ্যিক সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর বিকশিত অন্তরের লাবণ্যময় শোভা। এই মহীয়ান নারী শুধু বিশুদ্ধ সংগীতের সুর সম্রাজ্ঞীই নন তিনি একজন অমায়িক মানুষও বটে। প্রকৃত শিল্পীর তিনি এক শাশ্বত উপমা বলেই স্বীকার করেন সুরের বোদ্ধাগণ। গানের মঞ্চে তাঁকে দেখে মনে হয় যেন জ্যোতির্ময়ী এক সম্রাজ্ঞী যে সূর্যের মতো দীপ্ত আর প্রখরতার উজ্জ্বল আলো ছড়ায় তাঁর কর্তৃত্বপূর্ণ সুরের চলনে। সংগীতের ষড়ঋতুর বিরল ধ্রুপদি কোকিলা কৌশিকী চক্রবর্তী ১৯৮০ সালের ২৪ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে জানাই জন্মদিনের নিরন্তর শুভেচ্ছ। আপনার সুরের সাম্পানে আমরা এমনই এসে ভেসে যেতে চাই আজীবন। খুব অল্প বয়স থেকেই তাঁর সঙ্গীত প্রতিভার বিকাশ, প্রকাশ লাভ করেছে। তাঁর বাবা অজয় চক্রবর্তী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের বিরাট পন্ডিত ব্যক্তি। আমাদের জন্য গৌরবের সংবাদ এই যে অজয় চক্রবর্তীর পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি এই বাংলাদেশই ছিল।

২.
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসবে প্রতিবারই মঞ্চ মাতিয়েছেন উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের জনপ্রিয় শিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী। বেঙ্গলের প্রতিটি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসবে তাঁর কণ্ঠ শুনে বিমোহিত হওয়ার আবেশ রেশ আজো টের পই, মাতাল আচ্ছন্নতা আজো কাটেনি। আশাকরি আগামিতেও তাঁর সুরের জাদুতে মুগ্ধ হবো, কণ্ঠস্বরের বৈভবময়তায় স্তব্ধ হবো। কৌশিকী চক্রবর্তী, আমাদেরই এক বাঙালি মেয়ে- ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে কী অসাধারণ দখল, শ্রোতার আসরে বসে না শুনলে বোঝা বিষম দায়। কৌশিকী চক্রবর্তী ছোটবেলা থেকেই সুন্দর তালিমপ্রাপ্ত এবং এই প্রশিক্ষণের ছাপ তাঁর কণ্ঠ ও গায়কিতে সুস্পষ্ট। সেই কারণে তাঁর অনুষ্ঠান সবসময়ই বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। কৌশিকীর কণ্ঠস্বরে কারুকার্যের স্বতঃস্ফূর্ততা আকৃষ্ট না করে পারে? গায়িকা কৌশিকী চক্রবর্তী পাতিয়ালা ঘরানার গায়কি স্টাইল এবং সঙ্গীত রিসার্চ একাডেমী থেকে তিনি প্রশিক্ষিত ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতগ্য পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কন্যা হিসেবে পিতার কাছ থেকে অর্জন করেছেন নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। দেশে বিদেশে প্রচুর সংখ্যক মিউজিক্যাল প্ল্যাটফর্মে অত্যন্ত সুনামের সাথে ঠুমরী, খেয়াল এর মত নিখাদ হিন্দুস্তানি মিউজিকের সম্ভারে নিজের কৃতিত্ব প্রদর্শন করে চলেছেন। ২০১৫ সালে তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীতকে ভিত্তি করে গীত, বাদ্য, ও নৃত্যের সমন্বয়ে ‘সখী’ নামে একটি ব্যান্ড গড়ে তুলেছেন, যার ছয়জন শিল্পীই হলেন নারী।
 
৩. 
বাঙালির গর্ব হিসেবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে নিরন্তর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যাওয়া শিল্পীদের মধ্যে কৌশিকী চক্রবর্তী অন্যতম। ধ্রুপদি বাংলা গানের জগতে কৌশিকী চক্রবর্তী অনন্য। সুরের জগতের একজন প্রতীয়মান কুশলি হিসাবে আজ তিনি পরিচিত ঘরে ঘরে। কণ্ঠ যেন তার সাত সুরে বাধা, সরগমগীত যেন তার গলায় আপন আলোয় শোভনীয়। ভারতীয় সঙ্গীতের ধ্রুপদী গায়িকা কৌশিকী চক্রবর্তীর কথা বলতে গেলে শুরুতেই পিতা ও গুরু পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কথা বলতেই হবে। কারণ প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিবারে জন্ম নেওয়া কৌশিকীর জন্য পিতা অজয় চক্রবর্তীর পথ অনুসরণ করায় কোন বাধা ছিল না। তাঁর মা চন্দনা চক্রবর্তীও ভারতীয় ক্লাসিকাল সঙ্গীতের সাধিকা। ফলে পারিববারিক আবহেই তিনি অতি অল্প বয়সে একজন উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের শিল্পী হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মাত্র দু’বছর বয়েসেই শিশু কৌশিকী সঙ্গীতের তালে তালে নাচতে শেখেন। ৭ বছর বয়সে পন্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ এর একাডেমি ভর্তি হন বালিকা কৌশিকী। সেখানেই ভারতীয় ধ্রুপদি সঙ্গীতে হাড়েখড়ি। হাড়েখড়ি তার আগেই বাবার কাছে হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি আইসিটি সঙ্গীত রিসার্চ একাডেমিতে যোগ দেন।

৪.
শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রখ্যাত শিল্পীদের সামনে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন বিভিন্ন সময় এবং সমাদৃতও হয়েছেন প্রবলভাবে। কৌশিকী নিজে পাতিয়ালা ঘরানার হলেও অন্যান্য ঘরানার গান তিনি গেয়েছেন অসাধারণ মুনশিয়ানার সাথে। তার গায়কীতে রয়েছে অনন্য এক শৈলী। কৌশিকী চক্রবর্তীর কণ্ঠে গজ়ল, মীরার ভজনসহ ‘শাম বাঁশুরিয়া বজায়ে’, ‘প্রেম মদিত মন সে কহো’, ‘লাগি লাগি...লাগি রে লগন চিত চোর’, ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’ ‘নাইবা পেলাম দরশন’ ‘আমি গানের পাখি’ নানা গানের মোহন সুরের আশ্চর্যজনক সব সুধায় সিক্ত হচ্ছি নিরন্তর। কৌশিকী ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্সসহ কলকাতার অনেক গানের আসরে শ্রোতাদের গান শুনিয়ে মুগ্ধ করেছেন। তা ছাড়া আইটিসি সঙ্গীত সম্মেলনে নিয়মিত গান। বিদেশে ক্যালিফোর্নিয়ায় বসন্ত উৎসব ও লস এঞ্জেলেসে পরম্পরা প্রোগ্রাম করেছেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্রেও তিনি প্লেব্যাক করছেন। প্লেব্যাকে কৌশিকীর চলাটা শুরু হয়েছিল বাবা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর হাত ধরেই। ২০০৫ সালে তিনি ‘ওয়াটার’ ছবিতে এ.আর. রহমানের সংগীতায়োজনে অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে নরসিং মেহতার লেখা ‘বৈষ্ণব জানা তু’ গানটি দিয়ে তার প্লেব্যাক শুরু। কিন্তু তাই বলে তিনি সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় আর দশজনের মতো গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেননি। নিজেকে তৈরি করেছেন ধীরে ধীরে, কাজ করেছেন বেছে বেছে। তাই এর পরের ১০ বছরে তিনি প্লেব্যাক করেছেন মাত্র ১০টি চলচ্চিত্রে, যেগুলোর বেশির ভাগই বাংলা। যার মধ্যে জানি দেখা হবের ‘ফিরে যা রে মন যা’, পঞ্চ অধ্যায়-এর ‘রাহু তেরি পিছে’, হৃদ মাঝারের ‘উড়ে যায়’ উল্লেখযোগ্য। সুরকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাভাবে তার বিভিন্ন রূপ দেখতে চেয়েছেন কৌশিকী সারাক্ষণ। কোক স্টুডিওতে তার আত্মপ্রকাশ মূলত সেই ভাবনা থেকেই। শান্তনু মৈত্রের সুরে অসাধারণ একটি সঙ্গীতদ্যোতনা সৃষ্টি হয়েছে কৌশিকীর কণ্ঠে। ‘লাগি লাগি’ নামের সেই গানটি ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় দেড় মিলিয়ন বার।

৫.
অসম্ভব বিনয়ী কৌশিকী সর্বদা বিনম্রচিত্তে তার গুরুদের কথা, তার জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। যতদিন গান গাইবেন ততদিন মানুষের হৃদয়ে প্রবল আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার আসন নিয়েই থেকে যেতে চান। চিরকাল গানের সংখ্যার চাইতে তিনি গানের মানের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। সেরকমই থাকতে চান। দৃষ্টিনন্দন-শ্রুতিনন্দন কৌশিকী চক্রবর্তী তাই ক্রমে আত্মপ্রকাশ করছেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরসম্রাজ্ঞী হিসেবে। বিবিসি অ্যাওয়ার্ড, যদু ভট্ট অ্যাওয়ার্ড, সঙ্গীত নাটক আকাডেমি-র ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান পুরস্কার, আদিত্য বিড়লা কলাকিরণ পুরস্কারসহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। হৃদ মাঝারে, গয়নার বাক্স, শুন্য অংক, তিন কন্যা, পাঁচ অধ্যায়, চ্যাপলিনসহ বহু বাংলা সিনেমায় প্লে-ব্যাকও করেছেন তিনি। ভারতীয় সঙ্গীতের ধ্রুপদী গায়িকা কৌশিকী চক্রবর্তী পাড়ি দিলেন বলিউডে। সম্প্র্রতি রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা পরিচালিত বলিউড সিনেমা “মিরজয়া”-য় শংকর এহসান লয় এর কম্পোজিশনে “Kaaga”-এ কৌশিকী চক্রবর্তীর তার আশ্চর্যজনক ক্লাসিকাল ফর্ম তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতেও কৌশিকীর আগ্রহ অপরিসীম। শ্রাবণী সেন, জয়তি চক্রবর্তীর সাথে তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে মিলিয়েছেন রবিঠাকুরের বেশ কয়েকটি রাগভিত্তিক গানকে। এই ফিউশন কম্পোজিশনগুলোতে করা প্রত্যেকটি গান শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও রবীন্দ্রনাথের মেলবন্ধনকে ফুটিয়ে তুলেছে চমৎকারভাবে।

৬.
সঙ্গীতের পাশাপাশি লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও কৌশিকী এক অনবদ্য অনুপ্রেরণার নাম। কৌশিকী চক্রবর্তী কেবল বড় গাইয়ে নন, ২০০২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে প্রথম শ্রেনিতে স্নাতক হয়েছেন। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় ভূগোলে ১০০ নম্বরের মধ্যে মাত্র পেয়েছিলেন ২। আর দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় নির্বাচনী পরীক্ষায় ইতিহাসে পেয়েছিলেন কেবল মাত্র পাস নম্বর। লেখাপড়া তার খুব একটা ভালো লাগত না। অথচ এই মানুষটিই দর্শনশাস্ত্রে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করবার সময় হয়েছিলেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। সংগীতশাস্ত্রে তার দক্ষতা দেখে অনেক শিক্ষকই বলেছিলেন পড়াশোনাতে আর স্নাতকোত্তর না করে সঙ্গীতেই পূর্ণ মনোযোগ দিতে। কিন্তু কৌশিকী নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। পড়ালেখায় অমনোযোগী একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মান থেকে নিজের চেষ্টায় আর পরিশ্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ স্তরের পরীক্ষাগুলোতে অনবদ্য ফল করা তার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আর স্থিরচিত্তের সাক্ষ্য বহন করে।

৭.
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে সর্বপ্রথম তিনি তৈরি করেছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গীত ব্যান্ড ‘সখী’। ২০১৫ সালের জানুয়ারির ২০ তারিখ কলামন্দিরে পরিবেশনার মাধ্যমে ‘সখী’র যাত্রা শুরু হয়। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, এ দলের প্রত্যেক সদস্যই নারী। তিনি তার এই স্বপ্নের প্রকল্প সম্বন্ধে বলেছেন,“প্রত্যেক দেশের একটি ‘অল গার্ল মিউজিক ব্যান্ড’ আছে। আমাদের এখানে নেই। দেখুন, পশ্চিম থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। জিন্স পরতে শিখেছি, আধা ইংরেজি বলতে শিখেছি, কিন্তু মিউজিকালি ‘ওম্যানহুড’ সেলিব্রেট করা হয়নি কখনো। ‘সখী’ সেটার চেষ্টা করবে। আমরা মীরাকে যেমন করে সেলিব্রেট করেছি, সেরকমভাবে কার্টিজ্যানদের গান, নৃত্যকে কি সেলিব্রেট করেছি? করিনি। অথচ ঠুমরী, দাদরা এগুলো তো তাদের হাত ধরেই এসেছে।” ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও ভারতীয় সঙ্গীতের নারী শিল্পীদের অনবদ্য ভূমিকা সর্বস্তরে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যেই যেন এক অনবদ্য উদাহরণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এই সঙ্গীত দলটি। প্রাচীন শাস্ত্র মতে, গীত, বাদ্য ও নৃত্য- এই তিনের মিলিত মূর্ছনাকে সঙ্গীত বলে আখ্যা দেওয়া হয়। তাই কৌশিকী ‘সখী’কে শুধুমাত্র গানের একটি দল হিসেবে গড়ে না তুলে কণ্ঠসংগীত, যন্ত্রসংগীত এবং নৃত্য- এই তিনটির সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ সঙ্গীত দল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ছয়জন শিল্পী এই দলে কাজ করছেন। কৌশিকী কণ্ঠসঙ্গীতে রয়েছেন, দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায় বাঁশি বাজাচ্ছেন, মহিমা উপাধ্যায় পাখোয়াজ বাদনে রয়েছেন, নন্দিনী শঙ্কর রয়েছেন বেহালাবাদক হিসেবে আর তবলায় আছেন সাওয়ানী তালওয়ারকর। আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ও বিকাশে যে সমস্ত নারী ভূমিকা রেখেছিলেন তাদেরকে সে সময়ে অপাংক্তেয় বলে গণ্য করা হতো। তাদের স্মৃতি ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাদের বিস্মৃতপ্রায় অতীত সঙ্গীতের সমৃদ্ধ শৈলী প্রকাশে ‘সখী’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। তার ভাষায়,“কার্টিজ্যানদের কথা ভুললে চলবে না। তারাই তো এই গানের স্রষ্টা। সমাজ তাদের শিল্পীর সম্মান দেয়নি। কখনো ভেবে দেখেছেন, খেয়ালে রচয়িতার নাম থাকে, কিন্তু ঠুংরি বা দাদরায় কেন সেটা থাকে না? আসলে কার্টিজ্যানরা জানতেন তাদের নামের কোনো গুরুত্বই নেই! এই রিজেকশন একজন মহিলা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আমি মেনে নিতে পারিনি। এবং এ কারণেই ‘সখী’র কথা ভেবেছি। একই প্ল্যাটফর্মে ‘রাধা’, ‘মীরা’, ‘দুর্গা’, ‘কার্টিজ্যান’-কে সম্মানের সঙ্গে অডিও ভিজ্যুয়ালি পারফর্ম করা হবে। এই গানটা ধরুন, ‘শ্যাম ভায় ঘনশ্যাম নেহি আয়ে আকেলি ডর লাগে’ … আমি একটা মেয়ে হয়ে ‘একেলি ডর লাগে’ যেভাবে বলবো, সেটা একজন পুরুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। প্রচুর মেয়ে আজও গান শিখে হারিয়ে যায়, মঞ্চে পৌঁছতে পারে না। ‘সখী’ তাদের শিল্পকে প্যাশন দিয়ে ধরে রাখতে উৎসাহ দেবে। একটা প্ল্যাটফর্মটা তৈরি করবে।” 

৮.
কৌশিকী চক্রবর্তী ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন আরেক শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী পার্থসারথি দেশিকানের সঙ্গে। তাদের একমাত্র ছেলের নাম রিশিথ। বেঙ্গল উৎসবে কখনো নামের শেষে কৌশিকী চক্রবর্তী দেশিকান আবার কখনো শুধু কৌশিকী চক্রবর্তী দেখে খটকা লেগেছে। এখন অবশ্য কৌশিকী চক্রবর্তীর নাম কৌশিকী দেশিকান। সম্প্রতি আমাদের সবার প্রিয় এই সঙ্গীত শিল্পীর বিয়ের একযুগ পার হলো। তার স্বামী পার্থসারথি দেশিকানও একজন জনপ্রিয় সাউথ ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল শিল্পী। তারা দুজনেই একই গানের জগতের মধ্যে আপন মহিমায় বিস্তার লাভ করেছেন। শুধুমাত্র কণ্ঠের সুরেই তারা সুরেলা নন, জীবনের সারগাম গুলোও একই সুরে বাধা। যা তাদের একযুগের এই দীর্ঘ পথ একই সাথে হাটতে সাহায্য করেছে। তাদের এই সুরের সাধনার যৌথ সুখি জীবন যাপনে আমরাও আনন্দিত। কৌশিকীর সঙ্গীতে সাফল্যের পেছনে স্বামী পার্থসারথি ভীষণ অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তার গান আরো নিখুঁত হওয়ার পেছনে তিনি একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে শুধু নন কাজ করেন একজন পরামর্শক-সমালোচক-শ্রোতা হিসেবে।

৯.
কৌশিকী চক্রবর্তীর জন্মদিনের আনন্দে আবারো জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, নিরন্তর শুভ কামনা রইল তাদের জন্য। এইভাবেই সুরে গানে, হাসি আনন্দের মধ্যে দিয়ে সুরভিত হয়ে উঠুক তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, তাদের ভালোবাসার সুরের আলোক-ঝরণা ধারার প্রবাহ দিন দিন সজীব থাকুক এই কামনাই করি।

(তথ্যসূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, কালি ও কলম, ইন্টারনেট)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত