চেকিংয়ের নামে মেয়েদের ভিডিও করার এখতিয়ার কি পুলিশের আছে?
প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৪৫ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৫১
সকাল সকাল ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখলাম। ভিডিওটা করছে একদল পুলিশ এবং পুলিশের সাথে থাকা আম পুরুষ। ভিডিও করা হয়েছে একটা মেয়েকে। মেয়েটি বারবার ভিডিও করতে নিষেধ করছে। কিন্তু পুলিশ বা সেই পুরুষ, কেউই কর্ণপাত করছে না। বরং মেয়েকে লক্ষ্য করে চলছে একের পর এক নোংরা ইঙ্গিত ও কথাবার্তা।
মেয়েটা কী করেছে যে পুলিশ তাকে ভিডিও করছে আর সমানে তাকে রাস্তার মেয়ে, হোটেল থেকে ফেরা মেয়ে, অভদ্র ঘরের মেয়ে, বেয়াদপ মেয়ে, অসভ্য মেয়ে, বিশ্বসুন্দরী না মেয়ে, র্যাম্পে হাঁটা মেয়ে ইত্যাদি বলে চলেছে?
পুলিশ বলছে, রাত আড়াইটায় মেয়েটি একটি সিএনজি অটোতে করে যাচ্ছিল। তারা চেক করার জন্য থামিয়েছে। কিন্তু মেয়েটির বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, পুলিশ মেয়েটির ব্যাগ চেক না করে বরং এত রাতে মেয়ে কেন একা সিএনজিতে করে যাচ্ছে, সেটি নিয়েই নানা ধরনের প্রশ্ন করেছে। ফলে মেয়েটি রেগে গেছে। আপত্তি জানিয়েছে। সে বারবার ব্যাগ চেক করতে বলছিল। কিন্তু দেখা গেছে, পুলিশ তা করছে না। পুলিশের মূল আগ্রহ মেয়ে কেন রাত আড়াইটায় বাইরে। মেয়ে কোথায় গিয়েছিল এবং মেয়ে কোথায় ফিরছে!
আমার প্রশ্ন নিরাপত্তার জন্য চেকিং পুলিশের দায়িত্ব বটে, কিন্তু একটি মেয়ে রাতে কোথায় যাবে এবং কোথায় ফিরবে, কার সাথে যাবে কি যাবে না, সেটি পালনের দায়িত্বও কি আজকাল পুলিশকে দেয়া হয়েছে?
যদি তা দিয়ে দেয়া হয়ে থাকে, সেটি রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়ে করছে না কেন? রাষ্ট্র স্পষ্ট করে বলে দিলেই পারে যে রাতের বেলায় কোন মেয়ে একা কোথাও যেতে পারবে না! আমার জানা মতে, রাষ্ট্র এখনও এমন কোন আইন করেনি। সংবিধানে এমন কিছু লেখা নেই। তাহলে মেয়েটির অপরাধটা কোথায়?
আমি এও জানতে চাই, ভিডিও করেছে কে? মেয়েটি বারবার ভিডিও করতে নিষেধ করছিল। পুলিশ একবারো ভিডিও করা লোকটিকে নিবৃত্ত করেনি। বরং এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমি জানতে চাই, এভাবে রাস্তাঘাটে যত্রতত্র যেকোন ব্যাক্তিকে অনুমতি ছাড়া ভিডিও করার অনুমতি কার আছে? পুলিশের কাজ কি ভিডিও করানো বা করা? পুলিশের কাজ কি নিরাপত্তা চেকিংয়ের নামে একটি নারীকে দাঁড় করিয়ে তার চৌদ্দ গুষ্টিকে গালিগালাজ করা? মেয়েটির ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন তোলা? মেয়েটিকে অসৎ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা? মেয়েটিকে টিজ করা?
দেখলাম, মেয়েটি চলে যাবার সময়ও পুলিশ ও সঙ্গের লোকটি তাকে অকথ্য সব কথা বলে টিজ করছিল। আমি বিস্মিত হয়ে পুরো ভিডিওটি দেখেছি। একটা সমাজ কতখানি পুরুষতান্ত্রিক হয়ে উঠলে এইসব কুৎসিত ঘটনা ঘটে! একটি রাষ্ট্র কতখানি জঘন্য রুচির কিছু পুলিশ তৈরি করলে তারা নিজেদের ক্ষমতার এই অপব্যবহার করে! একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে মেয়েরা কতখানি অসম্মানিত ও অপমানিত জীবন পার করলে এ ধরনের ভিডিও যোগাযোগ মাধ্যমে আসে!
এই ভিডিও ধারণকারী ব্যাক্তি ও পুলিশদের খুঁজে বের করা কোন কঠিন ব্যাপার নয়। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করছি। পুলিশের সাথে মিলে যে লোকটি মেয়েটিকে টিজ করে যাচ্ছি, হ্যারাস করছিল, তার বিচার দাবি করছি।
মঈনুল কান্ডের পর সরকার নিশ্চয়ই আরো নারীবান্ধব হয়ে উঠেছেন। আমরা এই নারীবান্ধব সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ দেখতে চাই। জানতে চাই নিজের ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে রাতে একা ভ্রমণ করা মেয়েকে পুলিশ হোটেলে থাকা খারাপ মেয়ে বলে অভিহিত করতে পারে কি না! আমি সরকারের কাছে খারাপ মেয়ের প্রকৃত সংজ্ঞাও জানতে চাই।
লেখক: লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা
সূত্র: sharminshams.com