মেধাহীন সৌন্দর্যও ক্ষণস্থায়ী
প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০১৮, ২১:২২
বুদ্ধিবৃত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে চর্চার প্রতি তো আমাদের দেশের মানুষেরা মনযোগী নয়। আমাদের দেশের সবাই ঐশ্বরিয়া রাই বা সুস্মিতা সেন হতে চান, কিন্তু তার জন্য যে মেধারও প্রয়োজন আছে, সে সম্পর্কে তারা অবগত নন। ছেলেবেলায় কুইজ প্রতিযোগিতায় শুধু স্কুলের ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠানো হয়। যদি এমন হতো, সবার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হতো তবুও মানুষের সাধারণ জ্ঞানের পরিধি বাড়তো। সুন্দরী হবার জন্য শুধু বাবা-মায়ের জিন প্রয়োজন হয়। মেধাবী হতে হলে জ্ঞান চর্চার প্রয়োজন হয়, পড়ালেখা করতে হয়। যে দেশে মেয়েদের গায়ের রঙ বদলানোর জন্য বিভিন্ন কসমেটিক প্রডাক্টের বিজ্ঞাপন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে সেদেশের মেয়েরা H2O এর মানে জানবে না, এটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আমাদের দেশের মেয়েরা বড় হয়ে ওঠে এই গল্প শুনে একদিন সাদা ঘোড়ায় চড়ে এক রাজপুত্র তাকে নিয়ে যাবে। তারা সারাজীবন ধরে রাজপুত্রের অপেক্ষায় থাকে। সাদা ঘোড়ায় চড়া রাজপুত্রের কাছেও শারীরিকভাবে অপরূপা সুন্দরীদের অগ্রাধিকার। অথচ পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ সুন্দর এমন সব কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা অন্য কথা বলে।
এবার একটা নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করি। বাংলাদেশে থাকতে মাষ্টার্স করার পর আমার মনে হলো, এবার একটা এমবিএ করা প্রয়োজন। এমবিএ শেষে চাকরিযুদ্ধ। চাকরির ইন্টারভিউতে মেধার চেয়ে শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি মনোযোগী প্রশ্নকর্তাগণ। কিন্তু মেধা দিয়ে দক্ষতা দিয়ে টিকে যাবার পর আমার বেতন এক হাজার টাকা কম নির্ধারণ করা হলো, আমার সুন্দরী কলিগের চেয়ে। মেয়েটি সদ্য বিবিএ পাস করে এসেছে। যদিও ৬ মাস পরে আমার বেতনে ৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অফিস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবতা বলে আমি তথাকথিত সুন্দরী না, এমনকি শরীরে রয়েছে বাড়তি ওজন। পরে বসের পার্সোনাল সেক্রেটারীর কাছে জানতে পারি, সুন্দরীকে তারা আসলে চাকরি দিয়েছিলেন দূরে কোথাও নিয়ে যাবার জন্য। আর আমাকে দিয়ে অফিসিয়াল কাজ করাবার জন্য। যদিও সুন্দরী কলিগকে ছোঁয়া তো দূরের কথা পাশেও বসতে পারেনি তারা। ব্যর্থ বস আর তার বন্ধুগণ পরবর্তীতে মেয়েটিকে যাচ্ছেতাই গালাগাল করতেন। আমি জানতাম, এসব তাদের ব্যর্থতার দীর্ঘ আস্ফালন।
যাই হোক, আমাদের দেশে যখন পাত্রী দেখতে যান তখন কি মেধা দেখে যান, নাকি মেয়ে দেখতে কেমন, তারপর তার বংশ পরিচয় কেমন এসব দেখে দেখতে যান? এখনো তো বেশিরভাগ নারীই সম্পূর্ণ অজানা অচেনা মানুষকে বিয়ে করে ফেলেন, শুধুমাত্র পরিবারের সিদ্ধান্তে। কন্যাকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চান ক'টা পরিবার?
এক সময় পড়ালেখায় মেধাবী এবং দেখতে সুন্দরী আমার পরিচিত এমন একজন এমন পাত্র খুঁজতে লাগলেন, যেখানে তার ভবিষ্যতে কোন কাজ করতে না হয়। গৃহিণী হয়েই সারা জীবন পার করে দিতে চান। তিনি শুধু সন্তান লালন-পালন করে জীবন কাটাতে চান, কারণ তার ধারণা চাকুরীজীবি নারীদের সন্তানদের ভবিষ্যত ভাল হয় না। এসব কথা শোনার পর, বাস্তবতা হলো আমার সেই মেধাবী সুন্দরী পরিচিত এখন বেশ কয়েকটি সন্তান জন্ম দিয়ে, রীতিমতো চাকুরী করে যাচ্ছেন। আর এটাই বাস্তবতা। শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি প্রীতি কিছুদিন থাকে, কিন্তু পরবর্তীতে গুণবতী ও মেধাবী না হলে সেই মহাসুন্দরীও মাকাল ফল হয়ে যায়।
ফারজানা কবীর খান এর ফেসবুক থেকে