ধর্মীয় সুস্থ চেতনাবোধ জাগ্রত হোক সবার মনে

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:১৯

রিমা লিমা

কাজের সুবাদে অভিভাবক আর ছাত্রছাত্রীদের লিখা বিভিন্ন চিঠি, আবেদনপত্রের সাথে আমি পরিচিত। আমি সাধারনত সব লিখাই খুব মনযোগ দিয়ে পড়ি। কত ধরনের লিখা! কেউ চাইছেন তার সন্তান সহপাঠীর তুলনায় কতটা ভাল বুঝাতে কেউ বা নানা অভিযোগ নিয়ে লিখেন।

আজ লিখছি আমার মত একজনের অভিজ্ঞতা থেকে শোনা একটি খুব বিরল অদ্ভুত চিঠি নিয়ে। একজন ইন্ডিয়ান অভিভাবক লিখেছেন তিনি চাইছেন তার সন্তানকে যেন Islamic Studies ক্লাসে নয়  Moral science সাবজেক্ট এর ছাত্র হিসেবে যেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা মনে করেন এতে তার সন্তান সব বিষয় জানবে। খুব বিস্মিত হলাম অভিভাবকের এমন মুক্তচিন্তা দেখে! তাই তো! প্রতিটি ধর্মেরই একটি ইতিহাস আছে, অনেককিছু জানার আছে। কিন্তু অবাক হই যখন দেখি কিছু অভিভাবক একসাথে হয়ে আবেদনপত্র জমা দেন যে তারা চান না তাদের সন্তান Bangladesh studies এর একটি অধ্যায় পড়ুক যেখানে সনাতন ধর্মের ইতিহাস রয়েছে! আপনার সন্তান যদি অন্য ধর্ম জানে সমস্যা কোথায়? আমি মুসলমান তাই অন্য ধর্ম জানব না এমন কথা কি ধর্মে বলা আছে? আর এই বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার কি উপায় আছে যে আদি ধর্ম যেমন ছিল তেমনি আমাদের পূর্বপুরুষরাও ছিল!

আমি কিছুদিন লন্ডনে ছিলাম পড়াশোনার সুবাদে। সেখানে সৌভাগ্যবশত আমার দুইজন আপুর সাথে পরিচয় হয়। তারা ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আমার জীবনের অনেক সুন্দর সময় ছিল সেটা। আমরা টাওয়ার হিল ছিলাম একটি সিলেটি পরিবারের মালিকানাধীন ফ্ল্যাটে ভাড়াটে হিসেবে। বাসাটা ছিল রেল স্টেশনের কাছে তাই আমাদের জন্য খুব সুবিধাজনক ছিল। একদিন আমি বাসায় ছিলাম একা। বাসার মালিক আসলেন কালো আবায়া দিয়ে সম্পূর্ণ বেষ্টিত হয়ে। তিনি এসেই যে কাজটা করলেন বাসার সব রুম ঘুরে দেখলেন এমনকি কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দেখলেন আমরা কি কি খাবার মজুত রেখেছি। আসলে দেখতে চাইতেন আমরা কোন বিশেষ পানীয় রেখেছি কিনা? যা হোক এক পর্যায়ে আমাদের বসার ঘরে লাফিং বুদ্ধ মূর্তি দেখে চোখ ছানাবড়া করে বললেন কী গো পুরি তোমগো লগে মূর্তি তোমরা ইন্দু নাকি? আমি তার আচরনে ছিলাম মহা বিরক্ত তাই রাগ নিয়েই বললাম হ্যাঁ তাই। আর কি! সঙ্গে সঙ্গে বাসা ছাড়ার নোটিশ। আমাদের এইসব ব্যাপারে গার্জিয়েনের ভূমিকা রাখতেন শিখা'পা। তিনি সব শুনে পরে বিভিন্নভাবে আবোল তাবোল বুঝিয়ে ঐ যাত্রায় রক্ষা করলেন। কারন ভাল লোকেশনে বাসা পাওয়া বেশ কঠিন।

মাঝে মাঝে আপুরা ধর্মীয় কীর্তন শুনতেন। আমার নিজের শুনতে খুব ভাল লাগতো। সুরটার মাঝে খুব মোহিত হবার একটা বিষয় ছিল। তারা মাঝে মাঝে উপবাস করতো। বিষয়টা এমন সারাদিন শুধু ফল খাওয়া যাবে। সেদিন দেখা গেলো অন্য কিছু না করে আমিও ফলাহার করে দিব্যি কাটিয়ে দিতাম। আবার রোজাতে আমি যখন না খেয়ে থাকতাম আপুরাও আমার সামনে কিছু খেতো না। অন্য ধর্মের হয়েও আমরা ছিলাম তিন বোনের মত।

আমার সন্তানদের নাম বাংলা শব্দ থেকে নেয়া। তাই হাস্যকর হলেও সত্যি পাসপোর্ট আনতে গেলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়! যেমন আপনার সন্তান? অতঃপর আমার স্বামীর নাম দেখে আরও বিস্মিত হন যে তিনিও মুসলিম। কারন আমার নামটি তাদের মতে মুসলমান নাম; হালিমা, খাদিযা এমন নাম মুসলিমদেরই হয় কিনা। সেখানে যদি শ্রেয়া বা স্রিলা হয় সেটা মানতে আমরা অনেকেই অভ্যস্ত নই। 

ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধ মানুষকে সততা, ভালবাসা, ন্যায়-অন্যায় শেখায়। আমি যেমন আমার ধর্মকে ভালবাসি, বিশ্বাস করি, তেমন অন্য আরেকটি ধর্মকে কি আমি অবজ্ঞা করতে পারি? নিশ্চয় নয়!

জাগরণীয়ার ইমেইল থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত