মেয়েদের জন্ম হাঁড়ি ঠেলার জন্য নয়!
প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৬, ১৩:৩৭
এক আপা যিনি পরে আত্মহত্যা করে মরেছিলেন তিনি আমাকে ডাকতেন জ্ঞান খবিশ। তার যুক্তি ছিল- এই যে এতো এতো নভেল বই, জ্ঞানের বই পড়ছে এগুলি কি কাজে লাগবে? এগুলোর নায়িকারা আর নায়কদের জীবনে কি ঘটলো তা জেনেই বা কি হবে? শেষে সব বিদ্যা হাঁড়ি ঠেলতেই যাবে। মেয়েদের জন্মই হয়েছে হাঁড়ি ঠেলার জন্য। কাজেই এসব বই না পড়ে মুখে উপটান দাও, মূলতানি মাটি দাও, চোখে শসা দাও, হাতে লেবু ঘষো, ভ্রূর লোম উপড়ে নাও, নাক থেকে ব্ল্যাক হেডস টেনে তোলো, চুলে তেল দাও, জল দাও, শ্যাম্পু দাও, মুখে রঙ দাও, ঠোঁটে রঙ দাও, নখে রঙ দাও...তারপর সং সেজে ঢং করো, তাও ভালো।
এগুলো পুঁজি, একটি ভালো স্বামী জোটার পুঁজি। সেই আপা একদিন এক নেশাখোর লোকের সাথে পালিয়ে গেল। কিছুদিন পর এতো ভালোবাসে যে স্বামী সে-ই মেরে আপাকে পাঠালো বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে। আপাকে তার বাপ টাকা দিলো না। উল্টো শুনিয়ে দিলো- মুখ রেখেছিস? মুখে তো কালি লেপেছিস আমাদের! সে রাতেই মিতু আপা ঝুলে পড়লো।
আমি কখনোই তর্ক করিনি আপার সঙ্গে। তুচ্ছ কারণে তর্ক করা সাজেনা। এদেশে যত দুর্নীতিই চলুক তার সাথে নীতির শিক্ষাও সমানতালে চলে। সেইসাথে এখানে শেখানো হয়- গুরুজনকে শ্রদ্ধা ও মান্য করিবে। গুরুজন যদি অন্যায় করেন, ভুল বলেন তাহাও বিনয়ের সহিত মানিয়া লইবে! তবুও তিনি ঝুলে পড়েছেন জেনে অপরাধবোধ হয়েছিল। বলতে ইচ্ছে হয়েছিল মেয়েদের জন্ম শুধুই হাঁড়ি ঠেলার জন্য নয়।
ঐযে ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা, উনিও তো মেয়ে। রাশিয়ার মেয়ে। মেয়ে হয়েই মহাকাশে গিয়েছিলেন। মেরি কুরীর নাম তো সবাই জানে, যিনি তেজস্ক্রিয় মৌল পোলেনিয়াম আবিস্কার করেছিলেন। পোলেনিয়াম নামটি এসেছিল তাঁর দেশ পোল্যান্ডের নাম থেকে। তিনিও নাম উজ্জ্বল করেছিলেন দেশের। তাঁর সম্মানে আরেকটি তেজস্ক্রিয় মৌলের নাম রাখা হয়েছিল কুরিয়াম। আর হাইপেশিয়া! আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীর শেষ গবেষক, তিনি তো এতই বিদুষী নারী ছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর পরের একহাজার বছরকে বলা হয় বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্ধকার যুগ।
কথাগুলো আপাকে বলা হয়নি। বললে হয়তো এতো তুচ্ছ কারণে তিনি চলে যেতেন না। আমি বলতে পারিনি। শুধু বিস্ময়ে দেখেছি আপাটির ঘাড়ভাঙা পুতুলের মতন মৃতদেহ। ফর্সা পায়ে আলতার পোঁচ, আর চিকন রূপালী ফিতের মতন নূপুর। নূপুরের গায়ে দুটি ঝুমঝুমি!
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি’র ফেসবুক থেকে