আমাদের একটি বদভ্যাস ও জাতিগত লজ্জা
প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ২০:০৭ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ২০:৪০
বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর। যেকোনো পচনশীল দ্রব্য ফেলার অল্প কিছুদিনের মধ্যে তা মাটিতে খুব সহজেই মিশে যায়। কোন ফল খেয়ে বীজটা ফেললেই গাছ হয়ে যায়। জলবায়ুগত কারণেই এ দেশের মানুষ একটু কম পরিশ্রমী। ফসল ফলাতেও খুব একটা কষ্ট করতে হয় না, কারণ মাটি উর্বর। সাধারণ মানুষের ময়লা আবর্জনাও পচনশীল হওয়াতে তেমন সমস্যা হয় নি। মানুষও তার বসতির আশপাশে, যেখানে সেখানে ইচ্ছেমত ময়লা ফেলে এসেছে চিরকাল। খুব একটা সমস্যা হয় নি।
কিন্তু নাগরিক জীবনেও মানুষের সেই অভ্যাস পাল্টালো না। তারা যেখানে সেখানেই ময়লা ফেলতে লাগলো। এর ফল তাৎক্ষণিকভাবে না পেলেও পরে বোঝা গেলো। একে তো অপরিকল্পিত নগরায়ন তার উপর অপচনশীল প্লাস্টিক/পলিমারের ব্যবহার বাড়তে লাগলো। আর মানুষের পুরোনো অভ্যাসটা তো রয়েই গেলো। ডাস্টবিন ব্যবহার করা এখনো ঠিকমত শিখে উঠতে পারি নি আমরা।
কয়েক বছর আগের একটি অভিজ্ঞতা বলতে চাই। ঢাবি ক্যাম্পাসে একদিন গিয়ে দেখি, অনেকগুলো ছেলেমেয়ে একত্রে জড়ো হয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। আমি ভাবলাম ফ্রি আইসক্রিম দিচ্ছে নাকি? ফ্রির লোভে ওখানে গিয়ে দেখি, সবাই আসলে ডাস্টবিনের পাশে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে। খাওয়া শেষ হলে সবাই খোসাটা ডাস্টবিনেই ফেলবে এবং ফেলছিলও। সবাইকে বেশ গম্ভীরও দেখাচ্ছিল। আমিও অবাক এমন দল বেঁধে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার কী হলো?
তারপর দেখি ক্যাম্পাস ভর্তি একদল জাপানি ছেলেমেয়ে। ওরা হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পরে আবর্জনা কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলছে। ওদের কথা পত্রিকায় পড়েছিলাম। ওরা ঢাবিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে এসেছে। এখন নিজের চোখে ওদেরকে দেখে বেশ লজ্জা পেলাম। অন্য সময় হলে ময়লাটা যেখানে খুশি সেখানে ফেলেই চলে যেতাম। এতকিছু ভাবতামই না। কিন্তু এবার ডাস্টবিন খুঁজে বের করে ময়লাটা ফেললাম।
কী লজ্জার কথা! প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে ঢাবি'র এত খ্যাতি! দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলে কত গর্ব করি। আর ক্যাম্পাসটা কেমন নোংরা! এত মেধাবী শিক্ষার্থীরাও ডাস্টবিন ব্যবহার করে না। যেখানেসেখানে ময়লা ফেলে। ঢাবি'র অবস্থা যদি এই হয়, সারা দেশের অবস্থা তাহলে কেমন তা আর না বলি! ছিঃ ছিঃ জাপানি শিক্ষার্থীরা আজ আমাদের কী লজ্জাটাই না দিচ্ছে! মাথা হেঁট হয়ে গেলো।
সেদিনের পর থেকে আর রাস্তায় ময়লা ফেলি নি। পরে স্কাউটিং ও ট্রাভেলিং করতে করতে অভ্যাসটা আরো জোরদার হলো। একটা ক্যান্ডির খোসাও আমি মাটিতে ফেলি না। আর আপনি?