যৌনতা বিহীন বিবাহিত সম্পর্ক
প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৮, ১৮:৩৬
আজকাল গুগুলে যে বিষয়টি নিয়ে মানুষ জানার আগ্রহ প্রকাশ করছে সেটি হল sexless marriage বা যৌনতা বিহীন বিবাহিত সম্পর্ক। এ বিষয়টি নিয়ে এখন অনেকেই খোলামেলা আলোচনা করছেন। পুরুষ নারী উভয়ই এ ব্যাপারে তাদের করণীয় কি হতে পারে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন।
সেদিন টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠানে একজন ব্রিটিশ মহিলা টি।ভি। প্রেজেন্টার সারাহ এ বিষয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন "আমি আমার হাজবেন্ডকে অত্যন্ত ভালবাসি। আমার দুটো সন্তান নিয়ে আমরা খুবই সুখী। কিন্তু আমাদের জীবনে সেক্স অনুপস্থিত। কারণ আমি আগ্রহী নই। আমার সেক্স লাইফ সব সময় খুব ভাল ছিল। আমি সব সময় সেক্স উপভোগ করেছি। কিন্তু এখন আমার সেক্স এর প্রতি কোন আগ্রহ নেই। আমি রীতিমত আতংকিত থাকি আমার স্বামী কখন আমাকে অ্যাপ্রচ করে বসে। আর আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে গিল্টি ফিল করি"। সারাহ্ ৮ বছরের সংসার এ তার দুটো বাচ্চা এবং টেলিভিশন ক্যারিয়ার নিয়ে অতি ব্যস্ততার সাথে জীবন যাপন করেন। তার স্বামী একজন অসাধারণ বাবা। স্বামী হিসেবেও তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল। তাদের জীবন যৌনতা বিহীন হলেও তাদের কোন কম্প্লেন নেই বলে দাবী করেন।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যপারটা একটু জটিল এবং স্পর্শকাতর। আমাদের দেশে যৌনজীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলাটা ভাল চোখে দেখা হয় না।
এধরনের অনীহা পুরুষদেরও দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে এক জন নারী তার শরীরের চাহিদা মেটাতে যদি অন্য কোন পুরুষের দ্বারস্হ হয় তাহলে সেই নারীকে সামাজিক এবং ধর্মীয় ভাবে কতটা ভয়াবহ শাস্তি দেয়া হতে পারে তা নিজেরাই অনুমান করে নিন।
নারীদের সেক্সের প্রতি অনীহা হলে স্বামী যদি ভিন্ন নারীর প্রতি আসক্তি হয় সেটা সমাজে খুব সহজ ভাবেই দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। আর যারা সমাজে একটু প্রভাবশালী তারা একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক রাখবে সেটা অনেকটা স্বাভাবিক বলে মেনেই নেয়া হয়। এই সব নারীদের প্রায়ই ম্যারিটাল রেইপ (marital rape) বা বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হতে হয়। এখানে মেয়েরা মনে করেন যেহেতু তারা সেক্সে অংশ নিতে অপারগতা দেখান সেহেতু স্বামীর অধিকার আছে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কে অংশ নিতে বাধ্য করা। সে কারনেই আমাদের দেশের নারীদের মধ্যে বিবাহিত ধর্ষণ জনিত কোন অপরাধ কখনো পুলিশের কাছে নিবন্ধিত হয় না। এটাকে মহিলারা অপরাধ বলেই গণ্য করে না। আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষাটাই এমন ভাবে দেয়া হয় যে, যৌনতা একটা মহাপাপ। স্ত্রীকে চাহিবা মাত্র স্বামীর সাথে বিছানায় যেতে হবে। না চাইলে স্বামীর জোর করার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণ কথাটি প্রযোজ্য নয়- এই ধারণার বীজ আমাদের পরিবার, সমাজ এবং ধর্ম প্রতিটি মেয়েদের মধ্যে বুনে রেখেছে।
বৈবাহিক ধর্ষণকে না বলা শিখুন। স্বামীকে বুঝিয়ে দিন না অর্থ না।
বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে সেক্স করা নিয়ে রয়েছে আমাদের সমাজে ও ধর্মে বিশাল নিষেধাজ্ঞা। আজকাল অনেকেই প্রেম করে বিয়ে করছেন। কিন্তু দেখা যায় বিয়ের পর যৌন সম্পর্কের জের ধরে মনোমালিন্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে সেটি ডিভোর্স পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। যেহেতু বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ককে পাপ বলে ধরা হয়, ছেলে মেয়েরা লুকিয়ে চুরিয়ে কোন মতে ডেট করে। এতে তাদের শারীরিক সমস্যা থাকলেও সেটা ধরা পড়ে না। কিন্তু বিয়ের পর সেটা ধরা পড়ে।
শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা সবারই হতে পারে। পুরুষরা এটা নিয়ে আলোচনা করতে বিব্রত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। আর মহিলারা যারা বাচ্চা হবার পর শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তারা স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত না হয়ে এ ব্যাপারে স্বামীর সাথে পরামর্শ করতে পারেন। চিকিৎসক বা সাইকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। নিজের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে কথা বলুন। সমস্যাকে চিহ্নিত করুন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। সমস্যা একা একা সমাধান হবে না। হীনমন্যতায় না ভুগে সমস্যার মোকাবিলা করুন। যৌনতাকে উপভোগ করুন এবং আপনার পার্টনারকে উপভোগ করতে সাহায্য করুন।
আপনি নারী পুরুষ যেই হোন না কেন আপনার বিবাহিত জীবনে যদি যৌনতা হ্রাস পায় সেটা নিয়ে আপনার পার্টনারের সাথে আলোচনা করুন। প্রথমে অনুসন্ধান করুন কেন আগ্রহ হ্রাস পাচ্ছে? শারীরিক ও মানসিক দু কারনেই আগ্রহ হ্রাস পেতে পারে। দুটোর মধ্যে কোন কারণে আগ্রহ হারিয়েছেন তা বিবেচনায় আনুন। মানসিক চাপ, ক্লান্তি, বিষন্নতা, পারস্পারিক দূরত্ব, সম্পর্কের টানাপোড়ন অনেক রকম কারনেই এই অনাগ্রহ হতে পারে। আবার শারীরিক কারণেও হতে পারে। লিবিডো লো লেভেলে নেমে যেতে পারে। কারন যাই হোক এ ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নারীরা যেহেতু এসব ব্যপারে বেশি সাফার করেন তাদের উচিত ট্যাবু ভেঙে সেক্স লাইফ নিয়ে কথা বলা। সেক্স কোন অপরাধ নয়। সেক্স আমাদের জীবনের অংশ।